ETV Bharat / state

অন্দরে শীতল পাটির সাজ, রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রাতেও সঙ্গী তাঁর সাধের গাড়ি; জানুন ইতিহাস - RABINDRANATH TAGORE CAR

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সযত্নে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় গাড়িটি ৷ সেই গাড়িতে গুরুদেব ছাড়াও চড়েছেন নেতাজি, গান্ধিজি-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ৷

ETV BHARAT
প্রিয় গাড়িতে চড়ে শ্রীনিকেতনে একটি উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছেন গুরুদেব (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 23 hours ago

বোলপুর, 7 জানুয়ারি: এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে গাড়ি ৷ WBA 8689 হাম্বার 1933 গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ৷ এটি সম্ভবত ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র গাড়ি যা নোবেলজয়ীয় নামে কেনা । শীতল পাটি দিয়ে গাড়ির ভিতরটা সাজিয়েছিলেন জাপানি শিল্পী কিন্তারো কাসাহারা ।

বর্তমানে সেই গাড়ি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সযত্নে রয়েছে । ওই গাড়িতে চড়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিশিষ্টরাও ৷ কবিগুরুর সাধের সেই গাড়ির খুঁটিনাটি ইটিভি ভারতে ৷

রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রাতেও সঙ্গী তাঁর সাধের গাড়ি (ইটিভি ভারত)

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের শোরুম থেকে একই মডেলের দুটি গাড়ি কেনা হয়েছিল ৷ একটি জোড়াসাঁকোয় থাকত, অন্যটি শান্তিনিকেতনে ৷ কবি শান্তিনিকেতনের গাড়িটিতেই বেশি চড়েছেন ৷ তবে গুরুদেব নিজে গাড়ি চালাতে জানতেন না । গাড়িটি চালাতেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের আধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রভবনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট শাশ্বতী কর্মকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর গাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে ৷

ETV BHARAT
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় রাখা আছে গাড়িটি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ দিকে তাঁর বাড়ি-গাড়ির সব কিছুই বানানো বা কেনা - এসব করতেন কবিপুত্র তথা বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর । 1938 সালে তিনিই গুরুদেবের জন্য দুটি একই মডেলের গাড়ি কেনেন ৷ 1868 সালের ব্রিটিশ গাড়ি কোম্পানি হাম্বার । ভারতে কলকাতার 42, পার্ক স্ট্রিটে রুটস লিমিটেডের শোরুমে একমাত্র এই গাড়ি বিক্রি হত ৷ সেখান থেকেই হাম্বার 1933 মডেলের কালো রঙের দুটি সিডান গাড়ি কিনেছিলেন কবিপুত্র ৷

সেই সময় উৎকৃষ্ট মানের এক একটি গাড়ির দাম পড়েছিল ব্রিটিশ মুদ্রায় 400 পাউন্ড করে ৷ ভারতীয় মুদ্রায় তখন 5300 টাকা করে, অর্থাৎ মোট 10,600 টাকায় কেনা হয় গাড়ি দুটি ৷ একটি গাড়ি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে রাখা হয়েছিল ৷ অন্যটি শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসা হয় ৷ শান্তিনিকেতনে কবির ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর WB A 8689 । উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই নম্বরটি এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ৷ হাম্বার কোম্পানির কাছে যা ছিল একটি মাইলস্টোন ৷

ETV BHARAT
শেষযাত্রাতেও কবিগুরুর সঙ্গী তাঁর সাধের গাড়ি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গাড়ির নকশা

বীরভূমের লালমাটিতে গ্রীষ্মকালে অত্যধিক তাপপ্রবাহ । উষ্ণ আবহাওয়া থেকে আরামদায়ক করার জন্য কবির গাড়ির ভিতরটি শীতল পাটি দিয়ে সাজিয়েছিলেন জাপানি শিল্পী কিন্তারো কাসাহারা । প্রসঙ্গত, 1916 সাল থেকে 1929 সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁচবার জাপান গিয়েছিলেন । জাপানের বহু সংস্কৃতি তিনি শান্তিনিকেতনে রোপণ করেছিলেন ৷ সেই সূত্র ধরেই পরিচয় শিল্পী কাসাহারার সঙ্গে ৷

ETV BHARAT
উদয়ন বাড়ির কাছে কবিগুরুর শেষযাত্রার ছবি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

কবির উদয়ন বাড়ির দেওয়াল ঠান্ডা রাখতে শীতল পাটি ব্যবহার করা হয়েছিল । জাপানে তাতামি ম্যাটের বদলে শান্তিনিকেতনে শীতল পাটি ব্যবহার করেছিলেন কিন্তারো কাসাহারা । একই ভাবে গুরুদেবের গাড়ির সিট ও ভিতর ঠান্ডা রাখতে শীতল পাটি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সময় উন্নত মানের সিডান গাড়িটিতে চারটি দরজা ছিল ৷ শীতল ইঞ্জিন যাতে দ্রুত গরম হয় সেই ব্যবস্থা ছিল ৷ সহজেই চালক গাড়ি স্টার্ট করে স্পিড তুলতে পারতেন ৷ 1931 সালে এই মডেলের গাড়ি নির্মাণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । ফের 1933 সালে শুরু হয়েছিল এই মডেলের গাড়ি নির্মাণ ।

ETV BHARAT
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রায় তাঁর গাড়ি ঘিরে মানুষের ঢল (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

কবিগুরুর গাড়ির ব্যবহার

কবি যখন মূলত শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বা উপাসনায় অংশ নিতে যেতেন, তখন তিনি এই গাড়ি চড়েই যেতেন ৷ উপাসনা গৃহ, আম্রকুঞ্জ, শ্রীনিকেতনের মাঘ মেলা প্রভৃতি জায়গায় এই গাড়ি চড়ে গিয়েছিলেন গুরুদেব ৷ সেই সব ছবি রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে । এছাড়া, 1941 সালের 25 জুলাই অসুস্থ কবি যখন শেষবারের জন্য শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, অর্থাৎ কবির শেষ যাত্রার সঙ্গীও ছিল হাম্বার 1933 । কবিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ন্যায় গাড়িতে অর্ধশায়িত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৷ সেই অ্যাম্বুলেন্সের আগে আগে যাচ্ছিল কবির প্রিয় গাড়িটি ৷ সেই ছবিও রয়েছে বিশ্বভারতীর সংগ্রহে ৷

ETV BHARAT
আম্রকুঞ্জে শিক্ষাদানের সময় কবিগুরুর কাছেই রাখা হাম্বার 1933 গাড়িটি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

শুধু যে গুরুদেবই এই গাড়িতে চড়েছেন তা নয়, সস্ত্রীক মহাত্মা গান্ধি থেকে শুরু করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতো প্রখ্যাত মানুষজনও শান্তিনিকেতনে কবির প্রিয় গাড়িতে চড়েছেন । তবে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ নিজে গাড়ি চালাতে জানতেন না বা কখনও চেষ্টাও করেননি ৷ কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাড়ি চালাতেন । এছাড়াও, কবির গাড়ি চালানোর জন্য একজন চালক ছিলেন ৷

কয়েক বছর আগে হিন্দুস্থান মোটরস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গাড়িটি পুনরায় চালানোর চেষ্টা করেছিল ৷ কিন্তু, তা সফল হয়নি ৷ এত পুরনো যন্ত্রাংশ আর পাওয়া যায়নি ৷ তাই বর্তমানে কবির গাড়িটি রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় কাঁচের ঘরে প্রদর্শিত হয় ৷

ETV BHARAT
গাড়িতে চড়েই আম্রকুঞ্জে যেতেন রবীন্দ্রনাথ (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের আধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রভবনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট শাশ্বতী কর্মকার বলেন, "গাড়িটির বহু ছবি রবীন্দ্রভবনের আর্কাইভে রয়েছে । কবির প্রিয় গাড়িটি তাঁর শেষ যাত্রার সঙ্গী । বহু ইতিহাস, স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই গাড়ি নিয়ে ৷ বর্তমানে পর্যটকদের কাছে কবির এই গাড়ি খুব আকর্ষণীয় ।"

বোলপুর, 7 জানুয়ারি: এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে গাড়ি ৷ WBA 8689 হাম্বার 1933 গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ৷ এটি সম্ভবত ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র গাড়ি যা নোবেলজয়ীয় নামে কেনা । শীতল পাটি দিয়ে গাড়ির ভিতরটা সাজিয়েছিলেন জাপানি শিল্পী কিন্তারো কাসাহারা ।

বর্তমানে সেই গাড়ি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সযত্নে রয়েছে । ওই গাড়িতে চড়েছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিশিষ্টরাও ৷ কবিগুরুর সাধের সেই গাড়ির খুঁটিনাটি ইটিভি ভারতে ৷

রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রাতেও সঙ্গী তাঁর সাধের গাড়ি (ইটিভি ভারত)

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের শোরুম থেকে একই মডেলের দুটি গাড়ি কেনা হয়েছিল ৷ একটি জোড়াসাঁকোয় থাকত, অন্যটি শান্তিনিকেতনে ৷ কবি শান্তিনিকেতনের গাড়িটিতেই বেশি চড়েছেন ৷ তবে গুরুদেব নিজে গাড়ি চালাতে জানতেন না । গাড়িটি চালাতেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের আধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রভবনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট শাশ্বতী কর্মকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর গাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে ৷

ETV BHARAT
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় রাখা আছে গাড়িটি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ দিকে তাঁর বাড়ি-গাড়ির সব কিছুই বানানো বা কেনা - এসব করতেন কবিপুত্র তথা বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর । 1938 সালে তিনিই গুরুদেবের জন্য দুটি একই মডেলের গাড়ি কেনেন ৷ 1868 সালের ব্রিটিশ গাড়ি কোম্পানি হাম্বার । ভারতে কলকাতার 42, পার্ক স্ট্রিটে রুটস লিমিটেডের শোরুমে একমাত্র এই গাড়ি বিক্রি হত ৷ সেখান থেকেই হাম্বার 1933 মডেলের কালো রঙের দুটি সিডান গাড়ি কিনেছিলেন কবিপুত্র ৷

সেই সময় উৎকৃষ্ট মানের এক একটি গাড়ির দাম পড়েছিল ব্রিটিশ মুদ্রায় 400 পাউন্ড করে ৷ ভারতীয় মুদ্রায় তখন 5300 টাকা করে, অর্থাৎ মোট 10,600 টাকায় কেনা হয় গাড়ি দুটি ৷ একটি গাড়ি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে রাখা হয়েছিল ৷ অন্যটি শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসা হয় ৷ শান্তিনিকেতনে কবির ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর WB A 8689 । উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই নম্বরটি এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ৷ হাম্বার কোম্পানির কাছে যা ছিল একটি মাইলস্টোন ৷

ETV BHARAT
শেষযাত্রাতেও কবিগুরুর সঙ্গী তাঁর সাধের গাড়ি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গাড়ির নকশা

বীরভূমের লালমাটিতে গ্রীষ্মকালে অত্যধিক তাপপ্রবাহ । উষ্ণ আবহাওয়া থেকে আরামদায়ক করার জন্য কবির গাড়ির ভিতরটি শীতল পাটি দিয়ে সাজিয়েছিলেন জাপানি শিল্পী কিন্তারো কাসাহারা । প্রসঙ্গত, 1916 সাল থেকে 1929 সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁচবার জাপান গিয়েছিলেন । জাপানের বহু সংস্কৃতি তিনি শান্তিনিকেতনে রোপণ করেছিলেন ৷ সেই সূত্র ধরেই পরিচয় শিল্পী কাসাহারার সঙ্গে ৷

ETV BHARAT
উদয়ন বাড়ির কাছে কবিগুরুর শেষযাত্রার ছবি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

কবির উদয়ন বাড়ির দেওয়াল ঠান্ডা রাখতে শীতল পাটি ব্যবহার করা হয়েছিল । জাপানে তাতামি ম্যাটের বদলে শান্তিনিকেতনে শীতল পাটি ব্যবহার করেছিলেন কিন্তারো কাসাহারা । একই ভাবে গুরুদেবের গাড়ির সিট ও ভিতর ঠান্ডা রাখতে শীতল পাটি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সময় উন্নত মানের সিডান গাড়িটিতে চারটি দরজা ছিল ৷ শীতল ইঞ্জিন যাতে দ্রুত গরম হয় সেই ব্যবস্থা ছিল ৷ সহজেই চালক গাড়ি স্টার্ট করে স্পিড তুলতে পারতেন ৷ 1931 সালে এই মডেলের গাড়ি নির্মাণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । ফের 1933 সালে শুরু হয়েছিল এই মডেলের গাড়ি নির্মাণ ।

ETV BHARAT
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রায় তাঁর গাড়ি ঘিরে মানুষের ঢল (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

কবিগুরুর গাড়ির ব্যবহার

কবি যখন মূলত শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বা উপাসনায় অংশ নিতে যেতেন, তখন তিনি এই গাড়ি চড়েই যেতেন ৷ উপাসনা গৃহ, আম্রকুঞ্জ, শ্রীনিকেতনের মাঘ মেলা প্রভৃতি জায়গায় এই গাড়ি চড়ে গিয়েছিলেন গুরুদেব ৷ সেই সব ছবি রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে । এছাড়া, 1941 সালের 25 জুলাই অসুস্থ কবি যখন শেষবারের জন্য শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, অর্থাৎ কবির শেষ যাত্রার সঙ্গীও ছিল হাম্বার 1933 । কবিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ন্যায় গাড়িতে অর্ধশায়িত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৷ সেই অ্যাম্বুলেন্সের আগে আগে যাচ্ছিল কবির প্রিয় গাড়িটি ৷ সেই ছবিও রয়েছে বিশ্বভারতীর সংগ্রহে ৷

ETV BHARAT
আম্রকুঞ্জে শিক্ষাদানের সময় কবিগুরুর কাছেই রাখা হাম্বার 1933 গাড়িটি (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

শুধু যে গুরুদেবই এই গাড়িতে চড়েছেন তা নয়, সস্ত্রীক মহাত্মা গান্ধি থেকে শুরু করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতো প্রখ্যাত মানুষজনও শান্তিনিকেতনে কবির প্রিয় গাড়িতে চড়েছেন । তবে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ নিজে গাড়ি চালাতে জানতেন না বা কখনও চেষ্টাও করেননি ৷ কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাড়ি চালাতেন । এছাড়াও, কবির গাড়ি চালানোর জন্য একজন চালক ছিলেন ৷

কয়েক বছর আগে হিন্দুস্থান মোটরস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গাড়িটি পুনরায় চালানোর চেষ্টা করেছিল ৷ কিন্তু, তা সফল হয়নি ৷ এত পুরনো যন্ত্রাংশ আর পাওয়া যায়নি ৷ তাই বর্তমানে কবির গাড়িটি রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় কাঁচের ঘরে প্রদর্শিত হয় ৷

ETV BHARAT
গাড়িতে চড়েই আম্রকুঞ্জে যেতেন রবীন্দ্রনাথ (চিত্র: রবীন্দ্রভবন থেকে সংগৃহীত)

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনের আধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রভবনের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট শাশ্বতী কর্মকার বলেন, "গাড়িটির বহু ছবি রবীন্দ্রভবনের আর্কাইভে রয়েছে । কবির প্রিয় গাড়িটি তাঁর শেষ যাত্রার সঙ্গী । বহু ইতিহাস, স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই গাড়ি নিয়ে ৷ বর্তমানে পর্যটকদের কাছে কবির এই গাড়ি খুব আকর্ষণীয় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.