কলকাতা, 11 ফেব্রুয়ারি: টেবল টেনিসের বোর্ডে বাংলাই যে বাঘ, উত্তরাখণ্ডের মাটিতে বুঝিয়ে দিলেন সৌরভ সাহা-মৌমা দাসরা ৷ জাতীয় গেমসের মঞ্চে টেবল টেনিসের টিম ইভেন্টে জোড়া সোনা জিতল বাংলা। উত্তরাখণ্ডে যাওয়া বাংলার মেয়েদের দলটি সবচেয়ে শক্তিশালী। পাঁচজনের মধ্যে দলের চার সদস্য জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। তাঁদের মধ্যে একজন আবার পদ্মশ্রীও। ফলে দলগত বিভাগে পদকের আশা ছিলই। সোমবার সেই সম্ভাবনাতেই সিলমোহর পড়ল ৷
সদ্যসমাপ্ত জাতীয় টেবল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের দলগত বিভাগে ফল বিশেষ ভালো হয়নি। সেইসব সমালোচনার জবাব দিতে বিশেষ সময় নিলেন না বঙ্গ প্যাডলাররা। সোমবার পুরুষ এবং মহিলা-দু'বিভাগেই সোনা জিতে সৌরভ সাহা-মৌমা দাসরা বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় টেবল টেনিসে এখনও বাংলাই শীর্ষে। পুরুষদের দলগত বিভাগের ফাইনালে 3-0 ব্যবধানে বাংলা হারাল মহারাষ্ট্রকে। একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল মহিলা দলও ৷ তাঁদের পক্ষে ফলাফল 3-1।
জাতীয় গেমসে দল পাঠানোর ঠিক আগে ধাক্কা খায় বাংলা। সুইডেনে খেলতে যাওয়ায় শেষমুহূর্তে জাতীয় গেমসের দল থেকে বাদ পড়েন অঙ্কুর ভট্টাচার্য। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম সেরা প্যাডলারকে ছাড়াই সাফল্য এল বাংলার ঝুলিতে। সেই সাফল্য এনে দিলেন আকাশ পাল, অনির্বাণ ঘোষ, অনিকেত সেন চৌধুরী, রণিত ভঞ্জ এবং সৌরভ সাহা। এদের মধ্যে রণিত ও সৌরভ দলের সঙ্গে যোগ দেন সোমবার ভোরে। রবিবার রাতেই জার্মানি থেকে দিল্লি এসেছেন তাঁরা। তারপর সারারাত সড়কপথে যাত্রা করে দেরাদুনে পৌঁছন। সেমিফাইনালে তামিলনাড়ুকে হারাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন রণিত। আর ফাইনালে দুরন্ত খেললেন সৌরভ। অন্যদিকে, অনির্বাণ আর আকাশ পুরো প্রতিযোগিতাতেই দলকে ভরসা জুগিয়ে গেলেন ৷
দলের জয় প্রসঙ্গে কোচ তপন চন্দ্র বলছিলেন, "এবার টেবলের বাইরে আমাদের চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল। অঙ্কুর শেষমুহূর্তে চলে গেল। সৌরভ আর রণিত আজ ভোরেই এসেছে। তারপর দশটা থেকে সেমিফাইনাল খেলতে নেমেছে। এই সোনা ভারতীয় টিটি'তে বাংলার দাপটের প্রমাণ।" একই কথা শোনালেন সৌরভ ৷ তিনি বলেন, "এত লম্বা জার্নির ক্লান্তি এই একটা জয়েই কেটে গেল। দারুণ লাগছে। আমরা বাংলার হয়ে সেভাবে খেলার সুযোগ পাই না। ফলে নিজের রাজ্যকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারার অনুভূতি অন্য। তাছাড়া গতবার একটুর জন্য সোনা হাতছাড়া হয়। সেই আক্ষেপ এবার মিটে গেল।"
গ্রুপ পর্বে মহারাষ্ট্রের কাছেই হারতে হয়েছিল। বদলা প্রসঙ্গে সৌরভের বক্তব্য, "ওরা আমাদের 0-3 হারিয়েছিল। তাই ঠিক করেই নিয়েছিলাম, ওদেরকেও 3-0 হারাব। সেই লক্ষ্যপূরণ করেছি। শুধু আমরা নয়, মেয়েরাও সোনা জিতেছে। আমরা বুঝিয়ে দিলাম বাংলাই ভারতীয় টেবল টেনিসের পাওয়ারহাউজ।"
এদিন অবশ্য ছেলেদের আগেই সোনা আনেন মেয়েরা। যে দলে ছিলেন মৌমা দাস, সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, ঐহিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পয়মন্তী বৈশ্য। এরমধ্যে সুতীর্থা দু’টি এবং পয়মন্তী একটি ম্যাচ জিতে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ঐহিকা লড়াই করেও হার মানেন। মৌমা টিম কম্বিনেশনের জন্য ফাইনালে খেলেননি। তিনি বলছিলেন, "জাতীয় গেমসে আমরাই সেরা দল। সিনিয়র-জুনিয়র মিলে দারুণ কম্বিনেশন আমাদের। দলের প্রত্যেকেই জাতীয় স্তরে দাপট দেখায়। বাংলার প্যাডলাররাই যে সেরা, সোনা জিতে সেটাই প্রমাণ করলাম।" টিম ইভেন্টের পর এবার বঙ্গ প্যাডলারদের নজর ব্যক্তিগত লড়াইয়ে। উত্তরাখণ্ড থেকে এবার আরও সোনা আসবে বাংলার টেবল টেনিসে, প্রত্যয়ী মৌমা-সৌরভরা।
বিএসটিটি এর যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্ত সাফল্য প্রসঙ্গে বলেন, "প্রথম থেকেই পদকের আশা ছিল। বাস্তবে সেটাই হয়েছে। ব্যক্তিগত বিভাগেও বাংলার প্যাডলাররা দাপট দেখাবে আশা করি। বাংলার টেবল টেনিস যে জাতীয় স্তরে দাপট দেখাচ্ছে, তা প্রমাণ হল আবার।"