কলকাতা, 10 মার্চ : সার্স এবং মার্সের মতো COVID-19 সংক্রমণের প্রাথমিক উৎস হয়তো কোনও পশু-পাখি । যদিও সেটি এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি । তবে, মুরগি বা মাছ থেকে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে না । COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে । মাছ, মাংস, ডিম কোনও কিছু থেকেই COVID-19 সংক্রমণের কোনও আশঙ্কা নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা । কিন্তু কীভাবে মিলবে এই COVID-19 থেকে মুক্তি ? ভিটামিন C কি মুক্তি দেবে কোরোনা থেকে?
2019-এর ডিসেম্বর মাসে চিনের ইউহান, হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে নভেল কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ । নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে হুনান সিফুড হোলসেল মার্কেটের যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । 2002-2003-এ সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (SARS Coronavirus অর্থাৎ SARS-CoV)-এর সঙ্গে চিনে খোঁজ পাওয়া নভেল কোরোনা ভাইরাসের মিল থাকায় নাম দেওয়া হয় SARS-CoV-2 । নতুন ধরনের এই ভাইরাসের সংক্রমণে যে ধরনের অসুস্থতা ধরা পড়ছে তার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নাম দিয়েছে COVID-19 । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত COVID-19- এ এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি । তবে, এদেশে এখনও পর্যন্ত 47 জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে । এদিকে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে । যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে চলছে প্রচেষ্টাও । মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, মুরগির মাংস থেকে শুরু করে মাছ, ডিমেও এখন কোরোনার ভুত দেখছে ।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত বলেন, "ভারত সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, মুরগির মাংস, ডিম, এগুলির থেকে COVID-19-র সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি । কাজেই এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা বা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই । প্রথমে ইউহানে যখন নভেল কোরোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন বলা হয়েছিল, একটি মার্কেটে কিছু সিফুড এবং বাদুর বা সাপের মতো কিছু প্রাণী বিক্রি হচ্ছিল সেখান থেকে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস । এতে কোনও সন্দেহ নেই যে COVID-19 একটি জ়ুনোটিক ডিজ়িস । সার্স এবং মার্সের মতো COVID-19-এর প্রাথমিক উৎস হয়তো কোনও পশু বা পাখি । তবে, সেটা ঠিক কী, এখনও তা প্রমাণ করা যায়নি । তাছাড়া, চিনে কোরোনা সংক্রমিতদের সঙ্গে হুনান সিফুড মার্কেটের যে কোনও সম্পর্ক নেই তা প্রমাণিত । মুরগি, মাছ বা ডিম থেকে COVID-19 ছড়ায়নি । তাই মাছ, মাংস, ডিম নিয়ে ভারতীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই ।"
কলকাতার আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগের প্রধান এবং সোসাইটি ফর ইমার্জেন্সি মেডিসিন ইন্ডিয়ার ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক সংযুক্তা দত্ত জানান, "এই আতঙ্ক পুরোপুরি ভিত্তিহীন । কারণ মাছ, মাংস, ডিম থেকে COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত আমরা পাইনি । চিনে হয়তো ওরা প্রচুর বন্য জন্তুর সংস্পর্শে আসে বা রান্না না করা মাংস খেয়ে থাকে । তাই সেখান থেকে কোরোনা ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে । কিন্তু বাকি যাদের সংক্রমণ হয়েছে সেগুলি আক্রান্ত মানুষের থেকে ছড়িয়েছে । এর জন্য মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া ছেড়ে দিলাম এটা কোনও কাজের কথা নয় । মাছ, মাংস, ডিম যেভাবে স্বাভাবিক সেভাবেই খান । তবে, রান্না না করা খাবেন না । কারণ অনেক অসুস্থ প্রাণী থেকে আমাদের শরীরে রোগ আসতে পারে । সেজন্য অসুস্থ প্রাণীদের একদম সামনে থেকে যাঁরা দেখাশোনা করেন তাঁদের একটু ঝুঁকি থেকে যায় । তাঁদেরকে একটু সাবধান হতে হবে । যাঁরা রান্না করা মাংস খাচ্ছেন তাঁদের কোনও সমস্যা হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না ।"
COVID-19-এর সংক্রমণ রুখতে ভিটামিন C কতটা উপযোগী, সে বিষয়ে চিকিৎসক সংযুক্তা দত্ত বলেন, "COVID-19 এতটাই নতুন যে এর উপর সেভাবে গবেষণাই হয়নি এখনও । সুতরাং, ভিটামিন C কোরোনা সংক্রমণ রুখতে পারে কি না সেটা বলার কোনও অর্থই হয় না । তবে, বলা যায় ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে । সুষম আহার, হেলদি ডায়েট, এসবও ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে ।"
সুগত দাশগুপ্ত জানান, "বিভিন্ন ধরনের ওষুধ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে । ভিটামিন C-নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে । যে কোনও সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে ভিটামিন C সামান্য উপকারী বা কাজের হলেও হতে পারে । কিন্তু COVID-19-এর জন্য ভিটামিন C ব্যবহার করা হলে তা উপকারী হবে সেটা এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি । COVID-19-এর জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন বের হয়নি ।"