ETV Bharat / state

দুলাল খুনে 'মূল ষড়যন্ত্রকারী' নরেন্দ্রনাথকে বহিষ্কার তৃণমূলের, কাউকে আড়ালের চেষ্টা পুলিশের ? - TMC EXPELS NARENDRANATH TIWARI

অন্যদিকে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশ কি কাউকে আড়াল করার চেষ্টায় ? এডিজি সাউথের সাংবাদিক সম্মেলনের পর প্রশ্ন উঠছে জেলায় ৷

TMC expels Narendranath Tiwari
নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে বহিষ্কার করল তৃণমূল (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 9 hours ago

মালদা, 9 জানুয়ারি: অনিবার্য ছিল, তাতেই সিলমোহর দেওয়া হল ৷ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি দুলাল সরকার খুনের 'মূল ষড়যন্ত্রকারী' হিসাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন ৷ পরদিনই দল থেকে বহিষ্কার করা হল তৃণমূলেরই শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দুকে ৷

বৃহস্পতিবার দলের জেলা কার্যালয়ে একপাশে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং অন্যপাশে কৃষ্ণেন্দুজায়া তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর কাকলি চৌধুরীকে বসিয়ে একথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ দলের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া, "দল যা ভালো বুঝেছে তা করেছে ৷"

নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে বহিষ্কারের ঘোষণা তৃণমূলের (ইটিভি ভারত)

দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় 'মূল ষড়যন্ত্রকারী'র তকমা দিয়ে বুধবারই গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের ইংরেজবাজার শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে ৷ কলকাতায় বসে এনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন এডিজি সাউথ সুপ্রতিম সরকার ৷ গতকাল মালদা জেলা আদালতের নির্দেশক্রমে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও আরেক ধৃত স্বপন শর্মাকে তিনদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ ৷ তখনই বোঝা যায়, নরেন্দ্রকে দল থেকে বহিষ্কার শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, "কয়েকদিন আগে দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি বাবলা সরকার দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ৷ গত মঙ্গলবার এই ঘটনার তদন্তে নন্দু তিওয়ারি ও স্বপন শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ডেকে পাঠায় ৷ জেরার পর পুলিশ বুঝতে পারে, তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৷ পুলিশ দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে ৷ নন্দু তিওয়ারি আমাদের দলের শহর কমিটির সভাপতি ছিল, কিন্তু দুষ্কৃতীর কোনও রং হয় না ৷ তাই দলীয়ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দল থেকে নন্দু তিওয়ারিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে ৷ আজ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ আজ থেকে নন্দু তিওয়ারির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই ৷"

TMC expels Narendranath Tiwari
সাংবাদিক সম্মেলন করল তৃণমূল (নিজস্ব ছবি)

তৃণমূলে সূত্রে খবর, বছর দেড়েক ধরেই নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে দলীয় কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যেত না ৷ দলের মিটিং কিংবা মিছিলেও তিনি অংশ নিতেন না ৷ রহিম বকসির বক্তব্য, "আমরাই তাকে সব খবর দিতাম ৷ সে কোনও কর্মসূচিতে আসত না ৷ তাই আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম ৷ ইতিমধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায় ৷ তাই আমরা আর দেরি করিনি ৷ পরবর্তী শহর সভাপতির নাম রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করবে ৷ দ্রুত সেই নাম ঘোষণা করা হবে ৷"

TMC expels Narendranath Tiwari
নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দু (নিজস্ব ছবি)

এদিকে গ্রেফতার হওয়ার পর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বারবার দাবি করছেন, গোটা ঘটনার পিছনে বড় মাথা রয়েছে ৷ কে সেই মাথা? এনিয়ে আবদুর রহিম বকসিকে প্রশ্ন করতেই তাঁকে থামিয়ে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলে ওঠেন, "এটা পুলিশ দেখছে ৷ পুলিশ তদন্ত করছে ৷ যদি দোষী কাউকে পাওয়া যায়, সে যে দলেরই হোক, পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ৷"

তৃণমূল নেতা খুনে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা ?

অন্যদিকে বুধবার কলকাতায় এডিজি সাউথ সুপ্রতিম সরকারের সাংবাদিক সম্মেলনের পর এখন জেলা জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘোফেরা করছে, তবে কি দুলাল সরকার খুনে পুলিশি তদন্তে এখানেই ইতি ? মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ওই পুলিশকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, দুলাল সরকার খুনে মূল দুই চক্রী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা ৷ এই দু'জনই দুলালকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল ৷ তবে এখনও পর্যন্ত আরও তিন অভিযুক্তের সন্ধান মেলেনি ৷ তাদের খোঁজ চলছে ৷

এই খুনে 50 লাখ টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠছে, নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এখনও প্রমাণিত নয় ৷ নিহত দুলালের স্ত্রী দাবি করছেন, এই দু'জনই নয়, ঘটনার পিছনে আরও বড় মাথা রয়েছে ৷ জেলা রাজনীতিতে ধৃত নরেন্দ্রর তীব্র বিরোধী, ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী একধাপ এগিয়ে বলছেন, আরও বড় মাথা দুলালকে খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত ৷ তিনি তার নামও জানেন ৷ তবে সংবাদমাধ্যমকে সেই নাম তিনি জানাবেন না ৷ জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷

যখন দুলাল ও নরেন্দ্রর পরিচিতরা এমন দাবি করছেন, তখন এডিজি সাউথ ধৃত দু'জনকেই ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে ঘোষণা করছেন কীভাবে? তাছাড়া মালদার কোনও ঘটনা নিয়ে কলকাতায় পুলিশের কোনও আধিকারিকের সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয়টিও খটকা লেগেছে অনেকের ৷ তাঁদের অনুমান, এবার সম্ভবত দুলাল খুনের তদন্তে ইতি টানতে চলেছে পুলিশ ৷ হয়তো এর পিছনে অন্য কোনও চাপ রয়েছে ৷

এই মামলায় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করল পুলিশ ? পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে নরেন্দ্রনাথকে জেরা শুরু হয় ৷ তদন্তে পুরোপুরি অসহযোগিতা না করলেও বিভিন্ন সময় একই প্রশ্নের একাধিক উত্তর দিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর মোবাইল ফোনের কল লিস্ট থেকে জানা যায়, একাধিকবার তিনি কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহনের ভাই অমিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ৷ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে রোহনের অ্যাকাউন্টে ৷ কিন্তু টাকার অংক খুব একটা বেশি নয় ৷

TMC expels Narendranath Tiwari
নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার (নিজস্ব ছবি)

এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি নাটকীয়ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৷ দুলালের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও তাঁর সেই কান্না পুলিশের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে ৷ দু'দফায় ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করা হয়েছে ৷ পুলিশি জেরার চাপে একসময় তিনি ভেঙে পড়েন ৷ তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে সূত্রের খবর ৷

মালদা জেলা আদালতের আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমের কাছে আগেই স্বীকার করেছিলেন, এই ঘটনায় ধৃত অমিত রজক ও তার পরিবারকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন ৷ তিনি এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন ৷ তাঁর ব্যক্তিগত দফতরের ঢিলছোড়া দূরত্বে অমিতদের বাড়ি ৷ তাই অমিতের সঙ্গে তাঁর ফোনে যোগাযোগ থাকা অসম্ভব নয় ৷ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রোহনের অ্যাকাউন্টে কত টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে তা এখনও পুলিশ জানায়নি ৷

ঘটনার মূল মাথা রোহন এখনও পলাতক ৷ এই মামলায় আগে যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছে, রোহনই গোটা ঘটনা জানে ৷ তারা শুধু তার কথামতো কাজ করেছে ৷ তাহলে রোহনকে জেরা না করেই কীভাবে নরেন্দ্রকে খুনের মূল চক্রী হিসাবে চিহ্নিত করা হল? আইনজীবীদের মতে, এখনও পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে আদালতে নরেন্দ্রকে ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে প্রমাণ করা খুব শক্ত ৷

এদিকে বুধবার নরেন্দ্রর হয়ে জামিনের আবেদন করা আইনজীবী রাহুলরঞ্জন মিশ্র বলেন, "গতকাল আমরা আদালতকে জানিয়েছি, নরেন্দ্রনাথবাবু এই ঘটনায় কোনওভাবেই জড়িত নন ৷ তিনি হৃদরোগী ৷ অসুস্থ ৷ তাঁর যথেষ্ট বয়সও হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত তিনি পুলিশকে সবরকম সহযোগিতা করেছেন ৷ কিন্তু বিচারক তাঁকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷"

গতকালও আদালত থেকে ইংরেজবাজার থানায় যাওয়ার পথে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বারবার জানিয়েছেন, "বড় মাথা এর পিছনে কাজ করছে ৷ সে বড় পদে রয়েছে ৷ এই এলাকারই লোক ৷ ওর জন্যই বাবলা ফিনিশ, নন্দু হাফ ফিনিশ ৷" একই দাবি নরেন্দ্রনাথের অনুগামীদেরও ৷ তাঁদের বক্তব্য, "হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দাদার শরীর ভেঙে গিয়েছে ৷ বেশ কিছুদিন ধরে তিনি সেভাবে রাজনীতিও করছেন না ৷ মারপিটের মতো ঘটনা থেকে অনেকদিন আগেই তিনি সরে এসেছেন ৷ তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন ৷"

আশ্চর্যের বিষয়, এই মুহূর্তে একই মত মালদাবাসীর অধিকাংশেরই ৷ তাঁরাও মনে করছেন, গোটা ঘটনার নেপথ্যে বড় মাথা রয়েছে ৷ তাকে আড়াল করতেই গতকাল কলকাতায় তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন এডিজি সাউথ ৷ তাঁর কথায় প্রত্যেকেই নিশ্চিত, এই ঘটনার পুলিশি তদন্তে ইতি টানা হচ্ছে ৷ তাহলে পুলিশ কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ?

যদিও জেলার এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, "তদন্ত এখনও চলছে ৷ নিখোঁজ তিন দুষ্কৃতীকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে ৷ তবে এই ঘটনায় মূল চক্রী যে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা, তা একপ্রকার নিশ্চিত ৷"

মালদা, 9 জানুয়ারি: অনিবার্য ছিল, তাতেই সিলমোহর দেওয়া হল ৷ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি দুলাল সরকার খুনের 'মূল ষড়যন্ত্রকারী' হিসাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন ৷ পরদিনই দল থেকে বহিষ্কার করা হল তৃণমূলেরই শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দুকে ৷

বৃহস্পতিবার দলের জেলা কার্যালয়ে একপাশে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং অন্যপাশে কৃষ্ণেন্দুজায়া তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর কাকলি চৌধুরীকে বসিয়ে একথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ দলের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নরেন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া, "দল যা ভালো বুঝেছে তা করেছে ৷"

নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে বহিষ্কারের ঘোষণা তৃণমূলের (ইটিভি ভারত)

দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় 'মূল ষড়যন্ত্রকারী'র তকমা দিয়ে বুধবারই গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের ইংরেজবাজার শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে ৷ কলকাতায় বসে এনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন এডিজি সাউথ সুপ্রতিম সরকার ৷ গতকাল মালদা জেলা আদালতের নির্দেশক্রমে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও আরেক ধৃত স্বপন শর্মাকে তিনদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ ৷ তখনই বোঝা যায়, নরেন্দ্রকে দল থেকে বহিষ্কার শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, "কয়েকদিন আগে দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি বাবলা সরকার দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ৷ গত মঙ্গলবার এই ঘটনার তদন্তে নন্দু তিওয়ারি ও স্বপন শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ডেকে পাঠায় ৷ জেরার পর পুলিশ বুঝতে পারে, তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৷ পুলিশ দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে ৷ নন্দু তিওয়ারি আমাদের দলের শহর কমিটির সভাপতি ছিল, কিন্তু দুষ্কৃতীর কোনও রং হয় না ৷ তাই দলীয়ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দল থেকে নন্দু তিওয়ারিকে বহিষ্কার করা হচ্ছে ৷ আজ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ আজ থেকে নন্দু তিওয়ারির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই ৷"

TMC expels Narendranath Tiwari
সাংবাদিক সম্মেলন করল তৃণমূল (নিজস্ব ছবি)

তৃণমূলে সূত্রে খবর, বছর দেড়েক ধরেই নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে দলীয় কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যেত না ৷ দলের মিটিং কিংবা মিছিলেও তিনি অংশ নিতেন না ৷ রহিম বকসির বক্তব্য, "আমরাই তাকে সব খবর দিতাম ৷ সে কোনও কর্মসূচিতে আসত না ৷ তাই আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম ৷ ইতিমধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায় ৷ তাই আমরা আর দেরি করিনি ৷ পরবর্তী শহর সভাপতির নাম রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করবে ৷ দ্রুত সেই নাম ঘোষণা করা হবে ৷"

TMC expels Narendranath Tiwari
নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দু (নিজস্ব ছবি)

এদিকে গ্রেফতার হওয়ার পর নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বারবার দাবি করছেন, গোটা ঘটনার পিছনে বড় মাথা রয়েছে ৷ কে সেই মাথা? এনিয়ে আবদুর রহিম বকসিকে প্রশ্ন করতেই তাঁকে থামিয়ে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলে ওঠেন, "এটা পুলিশ দেখছে ৷ পুলিশ তদন্ত করছে ৷ যদি দোষী কাউকে পাওয়া যায়, সে যে দলেরই হোক, পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ৷"

তৃণমূল নেতা খুনে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা ?

অন্যদিকে বুধবার কলকাতায় এডিজি সাউথ সুপ্রতিম সরকারের সাংবাদিক সম্মেলনের পর এখন জেলা জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘোফেরা করছে, তবে কি দুলাল সরকার খুনে পুলিশি তদন্তে এখানেই ইতি ? মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ ওই পুলিশকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, দুলাল সরকার খুনে মূল দুই চক্রী নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা ৷ এই দু'জনই দুলালকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল ৷ তবে এখনও পর্যন্ত আরও তিন অভিযুক্তের সন্ধান মেলেনি ৷ তাদের খোঁজ চলছে ৷

এই খুনে 50 লাখ টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠছে, নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এখনও প্রমাণিত নয় ৷ নিহত দুলালের স্ত্রী দাবি করছেন, এই দু'জনই নয়, ঘটনার পিছনে আরও বড় মাথা রয়েছে ৷ জেলা রাজনীতিতে ধৃত নরেন্দ্রর তীব্র বিরোধী, ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী একধাপ এগিয়ে বলছেন, আরও বড় মাথা দুলালকে খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত ৷ তিনি তার নামও জানেন ৷ তবে সংবাদমাধ্যমকে সেই নাম তিনি জানাবেন না ৷ জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷

যখন দুলাল ও নরেন্দ্রর পরিচিতরা এমন দাবি করছেন, তখন এডিজি সাউথ ধৃত দু'জনকেই ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে ঘোষণা করছেন কীভাবে? তাছাড়া মালদার কোনও ঘটনা নিয়ে কলকাতায় পুলিশের কোনও আধিকারিকের সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয়টিও খটকা লেগেছে অনেকের ৷ তাঁদের অনুমান, এবার সম্ভবত দুলাল খুনের তদন্তে ইতি টানতে চলেছে পুলিশ ৷ হয়তো এর পিছনে অন্য কোনও চাপ রয়েছে ৷

এই মামলায় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে কীসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করল পুলিশ ? পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে নরেন্দ্রনাথকে জেরা শুরু হয় ৷ তদন্তে পুরোপুরি অসহযোগিতা না করলেও বিভিন্ন সময় একই প্রশ্নের একাধিক উত্তর দিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর মোবাইল ফোনের কল লিস্ট থেকে জানা যায়, একাধিকবার তিনি কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহনের ভাই অমিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ৷ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে রোহনের অ্যাকাউন্টে ৷ কিন্তু টাকার অংক খুব একটা বেশি নয় ৷

TMC expels Narendranath Tiwari
নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার (নিজস্ব ছবি)

এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যম তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি নাটকীয়ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৷ দুলালের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও তাঁর সেই কান্না পুলিশের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে ৷ দু'দফায় ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করা হয়েছে ৷ পুলিশি জেরার চাপে একসময় তিনি ভেঙে পড়েন ৷ তারপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে সূত্রের খবর ৷

মালদা জেলা আদালতের আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমের কাছে আগেই স্বীকার করেছিলেন, এই ঘটনায় ধৃত অমিত রজক ও তার পরিবারকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন ৷ তিনি এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন ৷ তাঁর ব্যক্তিগত দফতরের ঢিলছোড়া দূরত্বে অমিতদের বাড়ি ৷ তাই অমিতের সঙ্গে তাঁর ফোনে যোগাযোগ থাকা অসম্ভব নয় ৷ তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রোহনের অ্যাকাউন্টে কত টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে তা এখনও পুলিশ জানায়নি ৷

ঘটনার মূল মাথা রোহন এখনও পলাতক ৷ এই মামলায় আগে যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছে, রোহনই গোটা ঘটনা জানে ৷ তারা শুধু তার কথামতো কাজ করেছে ৷ তাহলে রোহনকে জেরা না করেই কীভাবে নরেন্দ্রকে খুনের মূল চক্রী হিসাবে চিহ্নিত করা হল? আইনজীবীদের মতে, এখনও পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে আদালতে নরেন্দ্রকে ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে প্রমাণ করা খুব শক্ত ৷

এদিকে বুধবার নরেন্দ্রর হয়ে জামিনের আবেদন করা আইনজীবী রাহুলরঞ্জন মিশ্র বলেন, "গতকাল আমরা আদালতকে জানিয়েছি, নরেন্দ্রনাথবাবু এই ঘটনায় কোনওভাবেই জড়িত নন ৷ তিনি হৃদরোগী ৷ অসুস্থ ৷ তাঁর যথেষ্ট বয়সও হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত তিনি পুলিশকে সবরকম সহযোগিতা করেছেন ৷ কিন্তু বিচারক তাঁকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷"

গতকালও আদালত থেকে ইংরেজবাজার থানায় যাওয়ার পথে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বারবার জানিয়েছেন, "বড় মাথা এর পিছনে কাজ করছে ৷ সে বড় পদে রয়েছে ৷ এই এলাকারই লোক ৷ ওর জন্যই বাবলা ফিনিশ, নন্দু হাফ ফিনিশ ৷" একই দাবি নরেন্দ্রনাথের অনুগামীদেরও ৷ তাঁদের বক্তব্য, "হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দাদার শরীর ভেঙে গিয়েছে ৷ বেশ কিছুদিন ধরে তিনি সেভাবে রাজনীতিও করছেন না ৷ মারপিটের মতো ঘটনা থেকে অনেকদিন আগেই তিনি সরে এসেছেন ৷ তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন ৷"

আশ্চর্যের বিষয়, এই মুহূর্তে একই মত মালদাবাসীর অধিকাংশেরই ৷ তাঁরাও মনে করছেন, গোটা ঘটনার নেপথ্যে বড় মাথা রয়েছে ৷ তাকে আড়াল করতেই গতকাল কলকাতায় তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন এডিজি সাউথ ৷ তাঁর কথায় প্রত্যেকেই নিশ্চিত, এই ঘটনার পুলিশি তদন্তে ইতি টানা হচ্ছে ৷ তাহলে পুলিশ কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ?

যদিও জেলার এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, "তদন্ত এখনও চলছে ৷ নিখোঁজ তিন দুষ্কৃতীকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে ৷ তবে এই ঘটনায় মূল চক্রী যে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মা, তা একপ্রকার নিশ্চিত ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.