কলকাতা, 9 জানুয়ারি: শহরে ডিজিটাল গ্রেফতারির ঘটনায় বেঙ্গালুরু থেকে প্রতারণা চক্রের মাথাকে গ্রেফতার করলেন কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার গোয়েন্দারা । শহরের এক মহিলাকে ভয় দেখিয়ে 47 লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ধৃত চিরাগ কাপুরের দলবলের বিরুদ্ধে । তারা দেশজুড়ে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে সবমিলিয়ে প্রায় 100 কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে বলে খবর লালবাজার সূত্রে ৷
এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার ইটিভি ভারতকে বলেন, "যে ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করেছি তার নাম চিরাগ কাপুর । দিল্লির বাসিন্দা হলেও তাঁকে আজ সকালে বেঙ্গালুরু থেকে আমরা গ্রেফতার করেছি ৷"
লালবাজার সূত্রে খবর, এই চিরাগ কাপুর একটি সংস্থা তৈরি করে গোটা দেশে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে এবং ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে তাঁদের ডিজিটাল গ্রেফতার করে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে, লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করতেন । কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, বেঙ্গালুরু-সহ একাধিক জায়গায় এই প্রকারের ডিজিটাল গ্রেফতারির ভয় দেখিয়ে চিরাগ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত 100 কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ ।
গত বছর কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে শহরের এক মহিলা একটি অভিযোগ দায়ের করেন । সেখানে বলা হয় যে, তাঁর কাছে একটি ফোন এসেছিল এবং ফোনের ওপারে অভিযুক্তরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন যে, ওই মহিলার নামে দিল্লিতে একটি পার্সেল আটক হয়েছে । সেই পার্সেলের মধ্যে প্রচুর মাদকদ্রব্য রয়েছে । ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওই মহিলাকে তাঁরা ডিজিটাল গ্রেফতার করবেন ।
এরপর যখন ওই মহিলা ভয় পেয়ে ডিজিটাল গ্রেফতারি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মিনতি করতে শুরু করেন, সেই সময় চিরাগ কাপুরের সংস্থার তরফ থেকে তাদের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বার দিয়ে সেখানে 47 লক্ষ টাকা পাঠাতে বলা হয় বলে অভিযোগ । বলা হয়, 47 লক্ষ টাকা তাদের হাতে তুলে দিলেই মাদক পাচারের মামলা থেকে মহিলাকে পরিত্রাণ দেওয়া হবে ।
অভিযোগ, সেই মহিলা পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার আগেই বেশ কয়েক ধাপে ওই ব্যক্তিদের টাকা দিতে শুরু করেন । পরে ওই মহিলার যখন ভুল ভাঙে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে । এরপরেই তিনি গত বছরের 17 জুন পুলিশের সাইবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । এরপর তদন্তে নামেন কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার গোয়েন্দারা ।
লালবাজার সূত্রের খবর, এই ঘটনায় পাটুলি, নরেন্দ্রপুর, আনন্দপুর থানা এলাকায় পরপর তল্লাশি অভিযান চালানো হয় । তল্লাশিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় ৷ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবদের মাধ্যমে চিরাগ কাপুরের নাম উঠে আসে । এই চিরাগ কাপুর দিল্লিতে তাঁর ঝাঁ চকচকে অফিসে বসে দেশজুড়ে ডিজিটাল গ্রেফতারি চক্রের জাল বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ । এমনকি তিনি একটি সংস্থা খুলে, সেখানে বিভিন্ন অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের কল সেন্টারে চাকরি দেওয়ার নামে সেখানে চাকরি দিয়ে এই হুমকি দেওয়ার কাজগুলো করাতেন ।
কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের গোয়েন্দারা চলতি বছরে দিল্লিতে চিরাগ কাপুরের অফিসে গোপন তল্লাশি অভিযান চালালেও ব্যর্থ হন । আগাম খবর পাওয়ায়, চিরাগ আত্মগোপন করেছিলেন । আজ বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । লালবাজার সূত্রের খবর, চিরাগের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক্স গেজেট, প্রচুর ব্যাংকের পাসবুক ও বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে । তবে কলকাতা পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় শুধুমাত্র চিরাগ কাপুরের মতো এক ব্যক্তি যুক্ত থাকতে পারেন না । তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এসে নিজেদের হেফাজতে নেবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । ধৃতকে জেরা করে এই ঘটনায় আরও কারা যুক্ত রয়েছে সেই তথ্য পেতে চাইবেন গোয়েন্দারা ।