কলকাতা, 8 এপ্রিল: দীর্ঘদিন লকডাউনের জেরে পড়ুয়াদের মধ্যে কাজ আসতে পারে মানসিক অবসাদ ৷ এমনই মত চিকিৎসক ও মনস্তত্ত্ববিদদের ৷ পড়ুয়াদের সেই অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে এবার উদ্যোগ নিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত 16 মার্চ থেকে 15 এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ৷ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও ৷ তার উপর 21 দিনের লকডাউন ৷ সবমিলিয়ে পড়ুয়ারা মানসিক অবসাদ বা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ আর লকডাউনে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার তাঁদের জন্য টেলি-কাউন্সেলিং শুরু করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি ও অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা করাবেন কাউন্সেলিং ৷
এই উদ্যোগ নিয়ে উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের ছেলে-মেয়েরা তো লকডাউনে আটকে আছে ৷ তাঁদের আমরা ক্লাস নিচ্ছি, স্টাডি ম্যাটেরিয়াল দিচ্ছি ৷ কিন্তু, তাঁরা তো রোজকার জীবন থেকে অন্যরকম অবস্থায় রয়েছেন এখন ৷ এই অবস্থায় কেউ অবসাদে ভুগতেই পারে ৷ সেই জন্য আমাদের সাইকোলজি এবং অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিভাগের ফ্যাকাল্টিদের বলেছি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পড়ুয়াদের টেলি-কাউন্সেলিং করুন ৷ ওঁরা এখনও পর্যন্ত 3টে থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ৷ যাঁরা করাবেন তাঁরা নিজেদের ফোন নম্বর পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷ আমরা সেইসব শিক্ষকদের নাম, ফোন নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব ৷ পড়ুয়ারা তাঁদের সঙ্গে ভিডিয়ো বা অডিয়ো কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন ৷ আমরা এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব ৷ আপাতত শুরু করছি পড়ুয়াদের নিয়ে ৷ পরবর্তীকালে যদি অভিভাবকদের প্রয়োজন হয়, তবে আমরা সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছি ৷"
ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং পরিষেবা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জারি করে দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে সাইকোলজি বিভাগের পাঁচজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার নাম, নম্বর ও তাঁদের কোন সময়ে ফোন করা যাবে তার সময়সূচিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ একইভাবে অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির আটজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার নাম, নম্বর ও তাঁদের ফোন করার সময় দিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ গতকালই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করানোর প্রস্তাব আসে সাইকোলজি বিভাগের কাছে ৷ সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷ গতকালই বিভাগীয় বৈঠক করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন কোন কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা এই কাউন্সেলিং উদ্যোগে শামিল হবেন ৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইচ্ছুক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম, ফোন নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয় উপাচার্যের কাছে ৷
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি (1/2) এ বিষয়ে সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপিকা তিলোত্তমা মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমরা যাঁরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি করি, তাঁদেরকে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিনামূল্যে কাউন্সেলিং করাতে ৷ এটা ভালো একটা উদ্যোগ ৷ খুব দরকার ৷ আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি ৷ লকডাউনের প্রভাব অনেক ধরনের পড়তে পারে ৷ পরীক্ষাগুলি সব এখন স্থগিত করতে হয়েছে ৷ এখন মনস্তাত্বিক দিক থেকে পড়ুয়ারা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ৷ কিছু কিছু ব্যাচ যাদের এই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শেষ হয়ে যেত, তারা পরবর্তীকালে চাকরির পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিত ৷ কিন্তু এখন তা বন্ধ । মূলত কেরিয়ার নিয়ে চিন্তা ৷ তা ছাড়া, লকডাউনের কারণে অনেকটা সময় বাড়িতে থাকতে হচ্ছে ৷ একটা সময়ের পর আমাদের ছেলে-মেয়ের বাড়িতে থাকা, বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার অভ্যাস নেই ৷ সেখানেই কিছুটা অন্যরকম পরিস্থিতির তৈরি হয় ৷ পাশাপাশি কেরিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা ৷ এ ছাড়া, কিছু পড়ুয়া আগে থেকেই কিছু মানসিক সমস্যায় ভোগেন ৷ COVID 19-এর কারণে সেগুলি বেড়ে যাচ্ছে ৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি, পড়ুয়ারা খুব অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সারা বিশ্বেই ৷ সেই সমস্যাগুলোি নিয়ে ওরা যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে তাহলে হয়তো এই সময়টা আমরা ওদের সাপোর্ট দিতে পারব৷"কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি (2/2) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য সময়ের মতো এই লকডাউনের সময়েও পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে ৷ এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কাউন্সেলিং সার্ভিসেস অ্যান্ড স্টাডিজ় ইন সেল্ফ ডেভলপমেন্টের জয়েন্ট কো-অর্ডিনেটর সমর কুমার মণ্ডল বলেন, "আমরা যেদিন থেকে লকডাউনে শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং পরিষেবা দিচ্ছি ৷ এই অবস্থায় তো এর থেকে বেশি কিছু করার নেই ৷ তবে, সাধারণভাবে যে পরিমানে কাউন্সেলিং করতে হয় তার তুলনায় এখনও পর্যন্ত বেশিজনের কাউন্সেলিং আমাদের করতে হয়নি ৷ দু'জন কাউন্সেলরের নম্বর সমস্ত পড়ুয়াদের দেওয়া আছে ৷ তাঁরা প্রয়োজন হলে ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে এবং ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমেই তাঁদের কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে ৷"অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এক হাজার বোতল স্যানিটাইজ়ার ও জুট এবং ফাইবার টেকনোলজি বিভাগে এক হাজার মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে ৷ এগুলি তৈরি করে তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের হাতে৷ সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের রসায়ন বিভাগে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল থাকে৷ আমরা স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছি যা এক নম্বর মানের হবে৷ আমরা প্রথম পর্যায়ে এক হাজার বোতল স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছি৷ জুট এবং ফাইবার টেকনোলজি বিভাগে আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কাপড় কিনে দিয়েছি ৷ যাতে তাঁরা মাস্ক তৈরি করে দিতে পারে ৷ ওরা তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে ৷ আমরা মাস্কও এক হাজার তৈরি করছি ৷ এগুলি আমরা পুরোটাই রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেব ৷ প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা এই পরিমান তৈরি করছি ৷ পরবর্তীকালে আরও চাহিদা আসলে আরও তৈরি করার কথা ভাবনাচিন্তা করব ৷ আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার একটা কেন্দ্র ৷ এখন সারা পৃথিবীব্যাপী যে দুঃসময় চলছে তাতে আমাদের কিছু করা উচিত বলে মনে করেছি ৷ সেই ভাবনা থেকেই এই জিনিসগুলো তৈরি করছি ৷"