কাঁথি, 11 অগস্ট: কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) থেকে আইনি রক্ষাকবচ পেলেন সৌমেন্দু অধিকারী (Soumendu Adhikari) ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শ্মশানের জন্য বরাদ্দ জায়গায় বেআইনিভাবে দোকান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে ৷ সেই মামলায় আগামী 31 অগস্ট পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না ৷ বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছেন বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্য়ায় ৷ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী 17 অগস্ট ৷
উল্লেখ্য, গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টে সৌমেন্দু অধিকারীর আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, যে ব্যাক্তি তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি এত পরে কেন এফআইআর করলেন ? তাছাড়া, এই পৌরসভার অধীনস্ত কোনও জায়গায় নির্মাণকাজ করতে হলে 'বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স'-এর অনুমোদন লাগে ৷ তাহলে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সৌমেন্দুকে কেন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে ? উপরন্তু, যে সুবল মান্না সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি নিজেই বহুবারের কাউন্সিলর ৷ তাহলে আগেই কেন পৌরসভার আইন মাফিক তিনি পদক্ষেপ করলেন না ? কারণ, পৌর প্রশাসনের অধীনেই তো তেমন পরিকাঠামো রয়েছে ! তাহলে কেন তা আগেই ব্যবহার করা হল না ?
এর জবাবে আদালতে সরকারি আইনজীবী শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, আইন অনুসারেই এফআইআর করা হয়েছিল ৷ এক্ষেত্রে সুবল মান্না সঠিক পদক্ষেপই করেছেন ৷ প্রসঙ্গত, সুবল মান্না কাঁথি পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান ৷ সৌমেন্দু অধিকারী তাঁর পূর্বসূরি ৷ অভিযোগ, সৌমেন্দু কাঁথি পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীনই শ্মশানের জমি বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ৷
এই মর্মে গত 29 জুন কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ তাতে দাবি করা হয়েছে, সৌন্দর্যায়নের জন্য পৌরসভার তরফে যে টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল, পরে সেই টাকা ব্যবহার করেই অস্থায়ী দোকান বা স্টল তৈরি করা হয় ৷ এর জন্য কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি ৷ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না-করেই একজন ঠিকাদারকে দোকান তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল ৷ এভাবে তৈরি 14টি দোকান পরবর্তীতে নামমাত্র দামে ওই ব্যক্তিকেই বিক্রি করা হয় ৷ কিন্তু, তিনি সেই দোকানগুলি মোটা টাকায় ফের বিক্রি করেন ৷ অথচ, দোকান বিক্রির সেই টাকা পৌরসভার তহবিলে কোনও দিনই জমা পড়েনি ৷ বদলে তা চলে যায় সৌমেন্দু অধিকারীর পকেটে ! অভিযোগকারীর দাবি, এভাবে প্রায় 1 কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে ৷ তা করা হয়েছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে ! প্রসঙ্গত, সরকারি বা প্রশাসনিক কোনও জমি কখনই ব্যক্তিগতস্তরে কাউকে ভাড়া দেওয়া বা লিজ দেওয়া যায় না ৷ কিন্তু, চেয়ারম্য়ান থাকাকালীন সৌমেন্দু সেই বেআইনি কাজটিও করেছেন বলে অভিযোগ সুবল মান্নার ৷
সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য হল, সৌমেন্দু যদি কোনও দোষ না-করে থাকেন, তাহলে তাঁর ভয় কীসের ? পুলিশ এই অভিযোগের তদন্ত করছে ৷ তদন্তের গতিপ্রকৃতি অনুসারেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে ৷ অন্যদিকে, সৌমেন্দু অধিকারীর আইনজীবীদের বক্তব্য হল, এই মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ৷ পৌরসভার কোষাগারের টাকা যদি নয়-ছয় হয়েও থাকে, তাহলেও তার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত ৷ দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মুখোপাধ্য়ায় সৌমেন্দুর আইনি রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুর করেন ৷