কলকাতা, 23 মে : রাজ্যে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই এবার রাজ্যে ব্ল্যাক ফাংগাসের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে । ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত হয়ে হরিদেবপুরের বাসিন্দা শম্পা চক্রবর্তী শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন । শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্ল্যাক ফাংগাসের কারণে শম্পার চোখ, মস্তিষ্ক ও চোয়াল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । আর তাতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর । এখনও পর্যন্ত রাজ্যে 11 জন ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর ৷
ব্ল্যাক ফাংগাস বা মিউকরমাইকোসিস রোগটি আসলে কী ?
ব্ল্যাক ফাংগাস রোগের বৈজ্ঞানিক নাম মিউকরমাইকোসিস । যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের শরীরে এর সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে ৷ কোভিড-19 সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাংগাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ৷ এই জীবাণুর সংক্রমণ নাক থেকে শুরু হয়ে ক্রমশ চোখে পৌঁছয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা । এর জন্য মূলত দায়ী করা হয়েছে ব্যবহৃত মাস্কের আর্দ্রতাকে । নাক মুখ ঢেকে বহু সময় ধরে মাস্ক পরে থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাকালীন ফুসফুস থেকে বেরিয়ে আসা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসে শরীরের জলকণা । আর তাতেই ভিজে থাকছে মাস্কের ভিতরের অংশ । সেই সঙ্গে মাস্কে লেগে থাকা ধুলোবালি ও ময়লার থেকে জন্ম নিচ্ছে ব্ল্যাক ফাংগাস বা মিউকরমাইকোসিস ৷
এর হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় কী ?
চিকিৎসকের মতে, মাস্ক যথাসম্ভব শুকনো রাখতে হবে । সেই সঙ্গে অপরিষ্কার মাস্ক ব্যবহার করা চলবে না । যে সব মাস্ক পুনর্ব্যবহারযোগ্য, সেগুলিকে পরিষ্কার করে ধুয়ে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে শুকিয়ে নেওয়া । বিশেষ করে কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে পারলে ভাল হয় । মাস্কের ভিতরের অংশে যেন কোনওভাবেই ছোঁয়া না লাগে তা নিশ্চিত করতে হবে । ভেজা মাস্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে । ব্যক্তিগত পরিচ্ছনতার দিকে নজর দিতে হবে । নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সুগার লেভেল ।
ব্ল্যাক ফাংগাসের লক্ষণ কী ?
সাইনোসাইটিস বা নাক বন্ধ । কিংবা নাক দিয়ে কালচে বা রক্তের মতো পুঁজ বেরনো । গালে ব্যাথা, ফুলে যাওয়া । নাকে কালো দাগ । দাঁতে ও চোয়ালে ব্যাথা, দাঁত আলগা হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ ব্ল্যাক ফাংগাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় । এছাড়াও দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, হ্যালুসিনেশন, ত্বকে ঘা, বুকে ব্যাথা ও সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ।
কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ?
কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন এমন ব্যক্তি । ডায়াবেটিস রয়েছে যাঁদের । ক্যানসার বা অন্য জটিল রোগে যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ৷ স্টেরয়েড নিতে হয় যাঁদের এমন ব্যক্তিদের ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৷
ব্ল্যাক ফাংগাস প্রতিরোধ করতে কী কী করা উচিত ?
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা হাইব্লাড সুগার (রক্তে উচ্চ শর্করা) নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । ডায়াবেটিস থাকুক বা না না থাকুক, কোভিড থেকে সেরে উঠলেই নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ যাচাই করতে হবে । যথেষ্ট পরিমাণে জল খেতে হবে । সঠিক পরিমাণে এবং ঠিক সময়ে স্টেরয়েড নিতে হবে ।
আরও পড়ুন : বাঁকুড়া মেডিকেলে তিন রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাংগাস, উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক ফাংগাস প্রতিরোধে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে । ওই কমিটিতে রয়েছেন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান তথা ভাইরোলজিস্ট ডঃ বিভূতি সাহা, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডঃ জ্যোতিময় পাল, ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ ডঃ শান্তনু মুন্সি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও রাজ্যের তৈরি ব্ল্যাক ফাংগাস প্রতিরোধের জন্য তৈরি কমিটির সদস্য ডঃ জ্যোতিময় পাল বলেন, ‘‘ব্ল্যাক ফাংগাস মূলত পশ্চিমের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় । যেমন রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্রে এই কেস দেখা যায় । যে সব কোভিডর রোগী হাইসুগার রয়েছে ৷ যাঁরা প্রচুর স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন । এমনকি অনেক কোভিড রোগীকে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে । এর ফলে ইমিউনিটি পাওয়ার বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে । এর ফলেই ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা ।’’ ডঃ জ্যোতিময় পালের মতে, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই । স্টেরয়েড যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁদের সেটা ভাল করে ব্যবহার করতে হবে । তবে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।