কলকাতা, 28 জুন : তাঁকে বলা হয় বাংলার রাজনীতির চাণক্য । তাঁর সুদক্ষ রাজনৈতিক কৌশলে দিনের পর দিন দলবদল হয়েছে । এমনকী, দ্বিতীয় ইনিংসে তৃণমূলের ফিরেও তিনি তাঁর ক্যারিশমা অব্যাহত রেখেছেন । শনিবার তাঁর হাত ধরে গেরুয়া শিবির থেকে ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছেন একগুচ্ছ নেতা-কর্মী । কোনও সন্দেহ নেই এর পেছনে রয়েছে মুকুল রায়ের (Mukul Roy) হাতযশ ।
এবার দেখার আগামী 2 জুলাই থেকে শুরু হতে চলা রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে কি ভেলকি দেখান মুকুল ! কারণ, শাসক শিবিরের অংশ হয়েও মুকুল বসবেন বিরোধী সদস্যদের সঙ্গেই । আর তাতেই জল্পনা বাড়ছে । এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে ঘর ভাঙার খেলা শুরু হবে না তো বিজেপির (BJP) অন্দরে ! আপাতত এটাই একমাত্র আশঙ্কা গেরুয়া শিবিরের ৷
আরও পড়ুন : মুকুল কোন দলের বিধায়ক ? বিধানসভার সচিবকে চিঠি বিজেপির
তৃণমূলে (Trinamool Congress) যোগ দিলেও খাতায় কলমে এখনও মুকুল বিজেপি বিধায়ক । কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক হিসেবেই রয়ে গিয়েছেন তিনি । বিধানসভায় তাঁর উপর দলত্যাগ বিরোধী আইন এখনও কার্যকর হয়নি । আর মুকুল রায় নিজেও বিধানসভায় স্পিকারকে নিজের দল বদলানোর কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাননি । তাই তাঁর জন্য বিধানসভায় বরাদ্দ হচ্ছে বিরোধী আসন ।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এটা আসলে রাজনৈতিক কৌশল । বিধানসভায় বিরোধী আসনে থাকলে স্পিকার দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করতে চাপে পড়বে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) যতই সরব হোন না কেন, বিধানসভার অন্দরে নিয়ম কানুন সবটাই স্পিকারের কুক্ষিগত । তাই মুকুল রায় বিরোধী আসনে গেলে চাপ পড়বে বিজেপি শিবিরের উপর ।
অতীতের উদাহরণ দেখলে শাসক শিবিরে নাম লেখানোর পরেও বিরোধী আসনে বিধায়কদের থেকে যাওয়া এই প্রথম নয় । অতীতেও মানস ভুঁইয়া থেকে শংকর সিং, সাবিনা ইয়াসমিনরা এভাবে নিজেদের বাঁচাতে বিরোধী শিবিরের সঙ্গে আসন ভাগ করে বসেছেন । কিন্তু তারা তো আর মুকুল রায় ছিলেন না !
আরও পড়ুন : Mamata-Mukul : পিএসি চেয়ারম্যান হিসাবে মুকুলকেই সমর্থন মমতার
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, এখানেই চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের ৷ দল ভাঙাতে সিদ্ধহস্ত মুকুল বিরোধীদের সঙ্গে বসে তাঁর কার্যসিদ্ধিতে মনোযোগ দিতে পারেন । আর তা হলেই বিপদ । বিষয়টা কতটা চিন্তার, তা ভালোভাবেই বোঝেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । আর তাই তাঁকে বিধানসভার অন্দরে শাসক-বিরোধিতার পাশাপাশি নিজের শিবির রক্ষায় উদ্যোগীও থাকতে হবে । আর সে কারণেই তিনি চাইছেন যেভাবেই হোক দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করে দ্রুত মুকুল রায়কে বিধানসভা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ।
কিন্তু তা যে হবার নয় । আর মুকুলের ক্ষেত্রে আরও একটা সুবিধা রয়েছে ৷ গতবছর দলত্যাগী বিধায়কেরা তাঁদের আসন আলাদা করার কথা বলেছিল কেউ কেউ । তাঁদের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা ছিল যেহেতু সেসময় বিরোধী হিসেবে অন্য রাজনৈতিক দল ছিল । এবার বিরোধী শুধুই বিজেপি । আব্বাস সিদ্দিকীর ভাই নওশাদ সিদ্দিকী থাকলেও তাঁকেও বিজেপির সঙ্গেই আসন ভাগ করে নিতে হবে । আর সে কারণেই মুকুল রায় জানেন বিজেপির থেকে আসন আলাদা করতে চাওয়া অর্থহীন । তাই আসন আলাদা করে নয়, বিজেপির মধ্যে থেকেই বিজেপির ঘর ভাঙ্গার জন্য উদ্যোগী হবেন মুকুল । এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের ৷
আরও পড়ুন : আলিপুরদুয়ারে বড় ভাঙন, জেলা সভাপতি-সহ বিজেপির 8 নেতা তৃণমূলে
এখন দেখার কিভাবে বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি মুকুলের শক্তিশেলকে সামলায় ।