কলকাতা, 15 জুলাই: আরটিআই-এর মাধ্যমে আবেদন না-করা সত্ত্বেও 269 জন চাকরিপ্রার্থীর সকলকে কেন অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হয়েছিল ? এই বিষয়ে বিশদে তদন্ত হওয়া দরকার ৷ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) চলা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় (Primary Teacher Recruitment Scam) এই দাবি তুললেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharya) ৷ ইতিমধ্যেই বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে ওই 269 জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি নাকচ করে দিয়েছে আদালত ৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের (West Bengal Board Of Primary Education) দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরে অসন্তুষ্ট ছিলেন ৷ তাই তাঁরা আরটিআই করেছিলেন ৷ সেই আবেদনের ভিত্তিতেই যোগ্যতমদের 1 নম্বর করে অতিরিক্ত দেওয়া হয়ছিল ৷ এবং সেই নম্বরের ভিত্তিতেই তাঁরা চাকরি পান ৷
বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, চাপের মুখে পিঠ বাঁচাতেই এমন তত্ত্ব খাড়া করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ যাঁদের 1 নম্বর করে বাড়ানো হয়েছিল, তাঁদের সকলে মোটেও আরটিআই করেননি ৷ বদলে তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন ৷ সেই বিক্ষোভ সামাল দিতেই তাঁদের অতিরিক্ত 1 নম্বর দেওয়া হয়েছিল ৷ বিকাশরঞ্জনের দাবি, এই তথ্য সিঙ্গল বেঞ্চে পর্ষদ নিজেই পেশ করেছিল ৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল, কীসের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছিল ? গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিকাশরঞ্জন ৷
আরও পড়ুন: TET Recruitment Scam: টেট দুর্নীতি মামলায় চন্দন মণ্ডলের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি
এর প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, চাকরিপ্রার্থীদের বাড়তি 1 নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতমদেরই বেছে নেওয়া হয়েছিল ৷ যেসব চাকরিপ্রার্থীরা মাত্র 1 নম্বরের জন্য কৃতকার্য হতে পারেননি, তাঁদেরই এই অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়েছিল ৷ সেক্ষেত্রে তাঁরা সাধারণ শ্রেণিভুক্ত নাকি কোনও বিশেষ জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, তা গ্রাহ্য করা হয়নি ৷
অন্যদিকে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মামলাকারীরা এমন বেশ কিছু ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছেন, যাঁরা 2014 সালে টেট না দিয়েই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন ! কেউ আবার পরীক্ষায় ফাঁকা উত্তরপত্র জমা দিয়ে চাকরি আদায় করেছেন ! সৌমেন নন্দী নামে এক মামলাকারীর কাছে এমন অন্তত 18 জনের বেআইনি নিয়োগের তথ্য রয়েছে ৷ এমনকী, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ৷ আন্দোলনকারীদের চাকরি পাইয়ে দিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে ৷ যা দুর্নীতিরই নামান্তর বলে যুক্তি পেশ করেছেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা ৷
সূত্রের দাবি, প্রাথমিকের যে 269 জনের চাকরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে মাত্র 16 জন আরটিআই করেছিলেন ! তাহলে 269 জনকে অতিরিক্ত 1 নম্বর কেন দেওয়া হল ? এই প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ তাঁর বক্তব্য, টেট দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় একের এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ তার জেরে ব্য়াকফুটে চলে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ এই অবস্থায় পিঠ বাঁচাতেই আরটিআই-এর আশ্রয় নিচ্ছে তারা ৷ তাই সমস্তটাই তদন্ত করে দেখা দরকার বলে দাবি করেছেন বিকাশরঞ্জন ৷ এই বিষয়ে সিঙ্গল বেঞ্চে পর্ষদ যে যথাযথ নথি পেশ করতে পারেনি, সেদিকেও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ৷ আগামী মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সবক'টি মামলার ফের শুনানি হবে ৷