কলকাতা, 31 মার্চ : কোরোনা আতঙ্ক বাড়ছে রাজ্যে ৷ সেই আতঙ্কের জেরেই এবার ধর্ষণের হুমকির মুখে এক বাঙালি অভিনেত্রী ৷ পেশার তাগিদে বিগত ছয় বছর ধরে মুম্বইয়েই থাকেন তিনি ৷ 19 মার্চ মুম্বই থেকে শহরে ফিরেছেন তিনি ৷ অভিনেত্রীর অভিযোগ, বাড়ি থেকে বেরোলেই ধর্ষণ করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে কিছু মানুষ ৷ বাবা-মাকেও বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ বাড়ি থেকে বেরোলে তাঁদেরও খুন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই অভিনেত্রী ৷ এই নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও, এখনও পর্যন্ত পুলিশ এই বিষয়ে কোনওরকম FIR দায়ের করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি ৷
ETV ভারতকে ওই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, 19 মার্চ কলকাতায় ফেরার পর সেখান থেকে তিনি সোজা চলে যান রাজারহাটে । বলেন, "সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সেলফ আইসোলেশনে চলে যাই । রাজারহাটে আমার বন্ধুর ফ্ল্যাটে একা থাকি। 10 দিন নিজেকে আইসোলেট করে রাখি । ওই সময়টা কোথাও বেরোইনি ।"
29 মার্চ অভিনেত্রীর বাবা তাঁকে নিয়ে আসেন বরানগরের বাড়িতে । তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা ৷ অভিনেত্রী বলেন, "ও-দিন বিকেলে বরানগর থানা থেকে দু'জন আধিকারিক হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এল । বলল, আমি যে আইসোলেশন ছিলাম তার প্রমাণ দেখাতে । আমি আধিকারিকদের পুরোটা জানাই । বলি যে, বিমানবন্দরেও জানিয়েছিলাম আমাকে যদি কোয়ারান্টাইনে রাখা হয় তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই । ওরা আমাকে রাখতে চায়নি । কোনও শারীরিক অসুবিধা ছাড়াই নিজেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইসোলেট করে রেখেছিলাম । তার কাগজ তো হতে পারে না । তখন ওই পুলিশ আধিকারিকরা আমায় বলেন হাসপাতালে যেতে হবে । আমি তাদের পরিষ্কার বলি, চিকিৎসকরা বলছেন, কোনও উপসর্গ না থাকলে হাসপাতালে আসার দরকার নেই । তবে আমি কেন যাব সেখানে?" অভিযোগ, তখনই পুলিশ আধিকারিকরা তাঁকে বলেছিলেন, বাড়ি থেকে বেরোলে বিপদ আছে ৷
এরপর সেদিন রাত থেকেই শুরু হয় অত্যাচার ৷ অভিনেত্রীর বাড়ির ব্যালকনিতে হঠাৎই ইট পড়তে শুরু করে রাতে । সঙ্গে শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ । প্রায় 50 জন ভিড় জমিয়েছিল তাঁর ফ্ল্যাটের সামনে । অভিনেত্রীর বাবার বয়স 70 । মা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা । এমন ঘটনায় গোটা পরিবারই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী । তাঁর অভিযোগ, "সেই সময়ে আমায় বলা হয়, যদি বাইরে বেরোই, তবে ধর্ষণ করা হবে । বাবা-মা যদি বাইরে বেরোনোকে সমর্থন করে, তবে তাদের সামনে ধর্ষণ করা হবে বলে জানানো হয় । বাবা মাকেও বাড়ি থেকে বেরোতে দেখলে খুন করা হবে বলে শাসানি দেওয়া হয় । আমি আতঙ্কে বরানগর থানায় ফোন করি । প্রথমে থানায় যে মহিলা পুলিশ কর্মী ফোন ধরেছিলেন তিনি কোনও গুরুত্ব দিতে চায়নি । পরে অবশ্য পুলিশ আসলে ভিড় কিছুটা হলেও হালকা হয় ।"
অভিনেত্রীর দাবি, এরপর তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চান । 29 মার্চ রাত থেকে এখনও পর্যন্ত তার কাছে কেউ অভিযোগ নেওয়ার জন্য আসেনি । তিনি বলেন, “ পুলিশের থেকে আমায় বলা হয়, বিষয়টি পাঁচ কান না করতে । সংবাদমাধ্যমে না জানাতে । বিষয়টি মিটে গেছে । আর কিছু হবে না । FIR করার দরকার নেই ।" সেই ঘটনার পর থেকে যথেষ্ট আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই মডেল-অভিনেত্রী ।