কলকাতা, 21 জুন : "আচার্য হলেন শিক্ষাগুরু । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক শিক্ষাগুরু ।" পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পেশ হওয়া সংশোধনী বিলের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মঙ্গলবার একথাই বলেছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য । এখানেই থামেননি তিনি । তাঁর বক্তব্য, "কন্যাশ্রী থেকে স্বাস্থ্যসাথী একের পর এক প্রকল্প এনে দেশকে পথ দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের প্রকল্প অনুকরণ করে প্রকল্প এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার । এরাজ্যের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পকে অনুকরণ করেও প্রকল্প আনতে চলেছে কেন্দ্র । তাহলে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য হিসাবে মেনে নিতে অসুবিধা কোথায় বিজেপি'র ? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর সাদাসিধে জীবনযাপন ও হাওয়াই চটির প্রতি মানুষের সমর্থন মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে বিজেপি'র ।"
কিন্তু হঠাৎ কেন এসব বলছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (Bengal Minister Chandrima Bhattacharya)? কারণ মঙ্গলবারই রাজ্য বিধানসভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পেশ করেন দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব্ হেলথ সায়েন্সেস্ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, 2022 । আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা থেকে শুরু করে গেরুয়া শিবিরের একের পর এক বিধায়ক এই বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে নিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম । রাজ্যপালকে সরিয়ে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন তাঁরা ৷
বিজেপি বিধায়কদের অভিযোগ, রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এই পদে নিয়ে আসা সরকারের দখলদারির মনোভাব ছাড়া কিছু নয় । এতে সরকারপক্ষ যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দখলদারি কায়েম করার চেষ্টা করছে তা প্রমাণ হচ্ছে । বিরোধী শিবিরের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল, মুকুটমণি অধিকারী, শঙ্কর ঘোষ, অম্বিকা রায়েরা এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন এদিন ৷
আরও পড়ুন : বিধানসভার ভোটাভুটিতে গলদ, ডিজিটাল ও কুপনের ফলাফলে ফারাক
অন্যদিকে,শাসকদলের বিধায়ক নির্মল মাঝি, মধুসূদন ভট্টাচার্য, সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন । বিলের উপর বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, " রাজ্যে 229টি কলেজ । তার মধ্যে 146টি সরকার পোষিত কলেজ । গত আর্থিক বছরে রাজ্য সরকার আখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য 55.63 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ইউজিসি'র অন্তর্ভূক্তির মধ্যে হলেও আজ পর্যন্ত কোনও গ্রান্ট পায়নি । এক পয়সাও গ্রান্ট পায়নি ।" বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য, "এই সরকারের আমলে প্রতিবছর বেশি মেডিক্যাল পড়ুয়া পাশ করছেন ৷ তা সম্ভব হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ বৃদ্ধি করার জন্য । যদি মেডিক্যাল কলেজ না বাড়ে তাহলে আরও বেশি করে ডাক্তার আসবে কি করে । আপনারা তাকিয়ে দেখুন কীভাবে বিগত সময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে ।"
বিরোধীদের দখলদারির অভিযোগ খন্ডন করে এদিন চন্দ্রিমা বলেন (Bengal minister Chandrima Bhattacharya slams BJP), "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার কাজের মাধ্যমে মানুষের মন দখল করে নিয়েছেন । নতুন করে দখলদারির প্রয়োজন পড়ে না ।" বিরোধীরা বারবারই মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন, স্বাস্থ্য যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয় । ফলে এই বিলের গন্তব্য হবে দিল্লি । এর জবাবে চন্দ্রিমা বলেন, "কেন্দ্রের মতো রাজ্যেরও অধিকার আছে আইন প্রণয়নের ৷ এরপর কেউ যদি বলে সই করব না, তাহলে সে শিশুর মতো আচরণ করতেই পারে । কিন্তু যুগ্ম তালিকার বিষয় হলেও এখনও পর্যন্ত যেহেতু এবিষয়ে কেন্দ্রের কোনও বিল নেই, কাজেই সংঘাতের অবকাশ কোথায়! বিজেপির এই বিরোধিতা আসলে ব্যক্তি মমতার বিরোধিতা । সাধারণ ঘরের মেয়ে বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আচার্য হিসাবে মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে বিজেপি'র । সাধারণ ঘরের মেয়ে বলেই সামাজিক শিক্ষক হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে বিজেপি নেতাদের ।"