ETV Bharat / city

যশ পরবর্তী লকডাউন পরিস্থিতি বিপদ বাড়াচ্ছে রাজ্য-অর্থনীতির

করোনা আবহে লকডাউন পরিস্থিতি এবং ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডব, সঙ্গে পেট্রোপণ্য়ের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ৷ রাজ্য়ের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী ? বিশেষজ্ঞদের মুখোমুখি হয়ে তাই জানার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷

bengal-economy-affected-by-lockdown-situation-and-cyclone-yaas
যশ পরবর্তী লকডাউন পরিস্থিতি বিপদ বাড়াচ্ছে রাজ্য-অর্থনীতির
author img

By

Published : Jun 3, 2021, 8:12 PM IST

Updated : Jun 4, 2021, 11:37 AM IST

কলকাতা, 3 জুন : গত এক-দেড় বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে লকডাউন পরিস্থিতি ৷ এমনকী প্রথম বিশ্বের দেশগুলিও এর ধাক্কা সামলাতে পারেনি ৷ করোনা আবহে টানা লকডাউনে কার্যত ধ্বসে গিয়েছে বাংলা তথা ভারতের অর্থনীতিও ৷ গড় জাতীয় উৎপাদনের (GDP) হার কমতে কমতে তা negative growth বা ঋণাত্মক বৃদ্ধিতে গিয়ে ঠেকেছে ৷ 2020-21 আর্থিক বছরে যার হার ছিল 7.3 শতাংশ ৷ বৃদ্ধির হারে এমন পতন গত চার দশকেও হয়নি ৷ এই প্রেক্ষাপটে সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিও ৷ একদিকে করোনা আবহে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি, তার উপর ঘূর্ণিঝড় যশের ঝাপটা ৷ এই দুইয়ের প্রভাবে ধুঁকছে রাজ্য়ের অর্থনীতি ৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ, এমন একটা পরিস্থিতিতেও সহযোগিতা করছে না কেন্দ্রের মোদি সরকার ৷ আর তাতেই নাকি বাড়ছে বিপত্তি ৷ এই তত্ত্ব কতটা খাঁটি ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা ? জানার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷

বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক ভাষ্যকার শান্তনু সান্যাল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের আয়ের একটা বড় অংশই আসে আবগারি দফতর মারফত ৷ মদ বিক্রির টাকা থেকে মোটা কর আদায় করে তারা ৷ লকডাউন পরিস্থিতিতে সেই রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই ভাটা পড়েছে ৷ পেট্রোপণ্য়ের উপর কর বসিয়ে টাকা এলেও সমস্য়া তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায় ৷ পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ায় আতান্তরে পড়েছে আমজনতা ৷ একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে আয় কমছে সাধারণ মানুষের ৷ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় বাজারে নগদের জোগানও কমছে ৷ যা অর্থনীতির পক্ষে আদর্শ নয় মোটেই ৷’’

আরও পড়ুন : 2020-21 অর্থবর্ষে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী, বলছে NSO-র তথ্য

শান্তনু সান্যালের মতে, পপুলিস্ট গভর্মেন্টের বিশেষ কিছু সমস্যাও রয়েছে ৷ জনকল্যাণমুখী প্রকল্প চালাতে গিয়ে সরকারগুলিকে প্রচুর আর্থিক চাপ নিতে হয় ৷ এর প্রভাব রাজ্য সরকারের কোষাগারের উপরই পড়ে ৷ আসলে এটা এমন একটা সময়, যখন সরকারের আয় কমেছে ৷ কিন্তু জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি চালু রাখতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে ৷ এতে সরকারের উপর ঋণের বোঝা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা শান্তনুর ৷

যশ পরবর্তী লকডাউন পরিস্থিতি বিপদ বাড়াচ্ছে রাজ্য-অর্থনীতির, শুনে নিন অর্থনীতিবিদ শান্তনু বসুর বক্তব্য

আরও পড়ুন : কোভিডকালে ভারতে জিডিপি-র ঋণের অনুপাত 74% থেকে বেড়ে 90%: আইএমএফ

অন্যদিকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষক শান্তনু বসুর মতে, গত এক বছরের লকডাউন এবং সাম্প্রতিক সময়ের নানা বিধি-নিষেধ রাজ্যের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবেই ৷ শান্তনু মনে করেন, খাতায়-কলমে লকডাউন ঘোষিত না হলেও বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডের উপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে ৷ এর ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রের একটা বড় অংশই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে ঘূর্ণিঝড় যশ ৷ দুর্গত এলাকায় চাষের জমি এবং মাছের ভেড়ি ও পুকুরে ঢুকে গিয়েছে নোনা জল ৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান রাজ্য ৷ অধিকাংশ মানুষই সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল ৷ আজ তাঁদের একটা বড় অংশ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন ৷ কৃষিজ পণ্য নষ্ট হওয়ায় চাহিদার তুলনায় জোগান কমবে ৷ উপরন্তু ট্রেন বন্ধ এবং পেট্রল, ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী ৷ এই অবস্থায় সামান্য পরিমাণ পণ্য বাজারজাত করতে হলেও খরচ অনেকটা বাড়ছে ৷ একসঙ্গে এতগুলো প্রতিকূল পরিস্থিতি কখনই বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে না ৷ এর ফলে ডিজিপি কমতে বাধ্য ৷ তার থেকেও বড় বিষয় হল, এর ফলে রাজ্য়ের বাসিন্দাদের একাংশ অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও দারিদ্রের আবর্তে ঢুকে যাবেন ৷ যার মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে সরকার এবং রাষ্ট্রশক্তিকেই ৷

কলকাতা, 3 জুন : গত এক-দেড় বছর ধরে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে লকডাউন পরিস্থিতি ৷ এমনকী প্রথম বিশ্বের দেশগুলিও এর ধাক্কা সামলাতে পারেনি ৷ করোনা আবহে টানা লকডাউনে কার্যত ধ্বসে গিয়েছে বাংলা তথা ভারতের অর্থনীতিও ৷ গড় জাতীয় উৎপাদনের (GDP) হার কমতে কমতে তা negative growth বা ঋণাত্মক বৃদ্ধিতে গিয়ে ঠেকেছে ৷ 2020-21 আর্থিক বছরে যার হার ছিল 7.3 শতাংশ ৷ বৃদ্ধির হারে এমন পতন গত চার দশকেও হয়নি ৷ এই প্রেক্ষাপটে সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিও ৷ একদিকে করোনা আবহে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতি, তার উপর ঘূর্ণিঝড় যশের ঝাপটা ৷ এই দুইয়ের প্রভাবে ধুঁকছে রাজ্য়ের অর্থনীতি ৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ, এমন একটা পরিস্থিতিতেও সহযোগিতা করছে না কেন্দ্রের মোদি সরকার ৷ আর তাতেই নাকি বাড়ছে বিপত্তি ৷ এই তত্ত্ব কতটা খাঁটি ? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা ? জানার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷

বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা রাজনৈতিক ভাষ্যকার শান্তনু সান্যাল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের আয়ের একটা বড় অংশই আসে আবগারি দফতর মারফত ৷ মদ বিক্রির টাকা থেকে মোটা কর আদায় করে তারা ৷ লকডাউন পরিস্থিতিতে সেই রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই ভাটা পড়েছে ৷ পেট্রোপণ্য়ের উপর কর বসিয়ে টাকা এলেও সমস্য়া তৈরি হয়েছে অন্য জায়গায় ৷ পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ায় আতান্তরে পড়েছে আমজনতা ৷ একদিকে যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে আয় কমছে সাধারণ মানুষের ৷ মানুষের হাতে টাকা না থাকায় বাজারে নগদের জোগানও কমছে ৷ যা অর্থনীতির পক্ষে আদর্শ নয় মোটেই ৷’’

আরও পড়ুন : 2020-21 অর্থবর্ষে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী, বলছে NSO-র তথ্য

শান্তনু সান্যালের মতে, পপুলিস্ট গভর্মেন্টের বিশেষ কিছু সমস্যাও রয়েছে ৷ জনকল্যাণমুখী প্রকল্প চালাতে গিয়ে সরকারগুলিকে প্রচুর আর্থিক চাপ নিতে হয় ৷ এর প্রভাব রাজ্য সরকারের কোষাগারের উপরই পড়ে ৷ আসলে এটা এমন একটা সময়, যখন সরকারের আয় কমেছে ৷ কিন্তু জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি চালু রাখতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে ৷ এতে সরকারের উপর ঋণের বোঝা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা শান্তনুর ৷

যশ পরবর্তী লকডাউন পরিস্থিতি বিপদ বাড়াচ্ছে রাজ্য-অর্থনীতির, শুনে নিন অর্থনীতিবিদ শান্তনু বসুর বক্তব্য

আরও পড়ুন : কোভিডকালে ভারতে জিডিপি-র ঋণের অনুপাত 74% থেকে বেড়ে 90%: আইএমএফ

অন্যদিকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষক শান্তনু বসুর মতে, গত এক বছরের লকডাউন এবং সাম্প্রতিক সময়ের নানা বিধি-নিষেধ রাজ্যের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবেই ৷ শান্তনু মনে করেন, খাতায়-কলমে লকডাউন ঘোষিত না হলেও বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডের উপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে ৷ এর ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রের একটা বড় অংশই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে ঘূর্ণিঝড় যশ ৷ দুর্গত এলাকায় চাষের জমি এবং মাছের ভেড়ি ও পুকুরে ঢুকে গিয়েছে নোনা জল ৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান রাজ্য ৷ অধিকাংশ মানুষই সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল ৷ আজ তাঁদের একটা বড় অংশ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন ৷ কৃষিজ পণ্য নষ্ট হওয়ায় চাহিদার তুলনায় জোগান কমবে ৷ উপরন্তু ট্রেন বন্ধ এবং পেট্রল, ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী ৷ এই অবস্থায় সামান্য পরিমাণ পণ্য বাজারজাত করতে হলেও খরচ অনেকটা বাড়ছে ৷ একসঙ্গে এতগুলো প্রতিকূল পরিস্থিতি কখনই বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে না ৷ এর ফলে ডিজিপি কমতে বাধ্য ৷ তার থেকেও বড় বিষয় হল, এর ফলে রাজ্য়ের বাসিন্দাদের একাংশ অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও দারিদ্রের আবর্তে ঢুকে যাবেন ৷ যার মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে সরকার এবং রাষ্ট্রশক্তিকেই ৷

Last Updated : Jun 4, 2021, 11:37 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.