কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি: মোবাইলের সূত্র ধরে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এক যুবককে । দীর্ঘ আট মাস পর কড়েয়ায় বৃদ্ধ খুনের কিনারা করে পুলিশ । আর ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও একজনের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে তারা । আজ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃত আনার জমাদার পারুলিয়া কোস্টাল থানা এলাকার মুড়াগাছার বাসিন্দা । মূল অভিযুক্ত মুর্শিদ শেখের পাশের গ্রামে তার বাড়ি । আজ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা । সে দোষ স্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর ।
কড়েয়ার 42 নম্বর ব্রড স্ট্রিটে মেয়ের সঙ্গে থাকতেন বিশ্বজিৎ বসু । 2019-এর 6 জুন রাতে তাঁর মেয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন সদর দরজা বন্ধ । দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও বাবার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন । কড়েয়া থানায় খবর দেওয়া হয় । পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে চেয়ারের উপর বিশ্বজিৎবাবুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ছুরি দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে । ঘটনাস্থান থেকে উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত ছুরিটিও । ঘরের অবস্থা দেখে গোয়েন্দাদের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় নি যে লুটের উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতীরা এসেছিল । তবে বিশ্বজিৎবাবুর মেয়ে জানিয়ে দেন, খুব বেশি কিছু খোয়া যায়নি । খোয়া গেছে কয়েকটি বাসন আর মোবাইল ফোন । তদন্তে নেমে পুলিশ আশপাশের CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখে । আততায়ীর কোনও ছবি তাতে পাওয়া যায়নি । কোনও সূত্র না পেয়ে মোবাইল ফোনটিতে নজরদারি শুরু করে তারা । দেখা যায়, অক্টোবর পর্যন্ত সেই মোবাইলে কোনও সিম ঢোকানো হয়নি । ফলে একটা সময় এই খুনের ঘটনার কিনারা হবে কি না তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয় । এরপর নভেম্বর নাগাদ ওই মোবাইলে সিম ঢোকানো হয় । দ্রুত সেই মোবাইল ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করা হয় । ডায়মন্ড হারবার এলাকা থেকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে তিনি এক ফেরিওয়ালার থেকে ওই মোবাইল কিনেছেন । তারপর সেই ফেরিওয়ালাকে আটক করে পুলিশ । জানা যায় 8 হাত ঘুরে ওই মোবাইল ফেরিওয়ালার কাছে এসেছে । তাদের প্রত্যেককেই আটক করা হয় । পরে জানা যায়, মুর্শিদ শেখের কাছ থেকে ওই মোবাইল কিনেছিল ফেরিওয়ালা । পুলিশকে ফেরিওয়ালা জানায়, এর আগেও এমন মোবাইল মুর্শিদের কাছ থেকে কিনেছে সে । তবে সেভাবে তাকে চেনে না । জানে না বাড়ি কোথায়।
ওই ফেরিওয়ালা পুলিশকে জানায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাসস্ট্যান্ডে আসে ওই যুবক । হোমিসাইডের অফিসারদের তাকে চিনিয়ে দিতে পারে সে । সেইমতো তিনদিন ধরে চালানো হয় নজরদারি । আর তাতেই কড়েয়ায় বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় পর্দা ফাঁস হল । মুর্শিদ প্রথমে অবশ্য খুনের কথা স্বীকার করেনি । তাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমনিতে ভাঙাচোরা পুরানো জিনিস কেনাবেচা করে সে । আর সে ভাবেই দেখে নেয়, কোথায় কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা থাকছে । কড়েয়ার ব্রডস্ট্রিটের এই বাড়িতে ঘটনার কিছুদিন আগে ঘুরে গিয়েছিল সে । ঘটনার 15 দিন আগে প্রথমবার সে ওই বাড়িতে চুরির চেষ্টা করে । তখন সফল হয়নি। পরে 6 জুন রাতে মুর্শিদ এবং আনার ঘরের ভিতরে ঢোকে । বিশ্বজিৎবাবু টের পেয়ে যাওয়ায় তার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় । তারপর পাঁচিল টপকে উধাও হয়ে যায় । এই ঘটনায় আনারের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও নিশ্চিত হতে চাইছেন গোয়েন্দারা ।