কলকাতা, 24 জুলাই: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) চিকিৎসার জন্য ভুবনেশ্বর এইমসের চিকিৎসকদের (AIIMS Bhubaneswar doctors) কলকাতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী (HC on Partha Chatterjee)। ইডির করা মামলায় বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর বেঞ্চে সওয়াল জবাব চলছে ।
ইডির আইনজীবী তাঁর সওয়ালে বলেন, "শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তদন্ত হচ্ছে । প্রায় 22 কোটির বেশি টাকা 20টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে । নিম্ন আদালতে জামিন বাতিল হয়েছে । সোমবার ফের হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এই নির্দেশের পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশ দেওয়া হয় আমাদের কথা না শুনে । তাঁকে আদালতের আগে ফিট সার্টিফিকেট দিয়েছে অন্য হাসপাতাল । নির্দিষ্ট একটা হাসপাতালই কেন চিকিৎসা করবে ? এই হাসপাতাল চিকিৎসার নামে কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে । ইডি অফিসারদের হাসপাতালে হুমকি দেওয়া হচ্ছে । হাসপাতাল সহযোগিতা করছে না ইডির সঙ্গে । এই অভিযুক্ত প্রভাবশালী ।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পর তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইডির আইনজীবীদের কাছে চান বিচারপতি । ইডির তরফে জোকা ইএসআই হাসপাতালের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় । সেখানে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীকে সম্পূর্ণ ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয় । পাশাপাশি ইডির আইনজীবী আরও বলেন, নিম্ন আদালত বলতে পারে না বন্দিকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে ।
ইডির দাবি, 3টে কারণে নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করা হোক -
1. তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়নি
2. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রায় খারিজ হোক
3. 482 ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের এ ব্যাপারে কোনও ক্ষমতা নেই
ইডির আইনজীবী আরও বলেন, যে ভাবে টাকা উদ্ধার হয়েছে আদালতের ভেবে দেখা দরকার । সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন । ইডি হেফাজত এড়াবার জন্য অসুস্থতার নাটক করছে । তাই একটি বিশেষ হাসপাতালকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে । এটা অভিযুক্তের নাটক । কেন তিনি এই হাসপাতালকেই বেছে নিয়েছেন ? কারণ তিনি জানেন যে তিনি ম্যানেজ করতে পারবেন ওই হাসপাতালকে ।
আরও পড়ুন: কেন পার্থ এসএসকেএম-এ ? রাতেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ ইডি
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফে আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, ইডির আইনজীবী যথাযথ বিষয়টি জানেন না । ইডি হাসপাতাল পরিবর্তনের জন্য আলাদা আবেদন জানিয়েছে । সেটা আগামিকাল অর্থাৎ সোমবার 10.30টায় বিচারক শুনানির জন্য রেখেছেন । ওই মহিলাকে (অর্পিতা মুখোপাধ্যায়) জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন বা তাঁকে গ্রেফতারের আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
দেবাশিস রায় উল্লেখ করেন যে, "ইডি জোকা হাসপাতালের যে সার্টিফিকেট আদালতে পেশ করেছে, সেটা ট্যাম্পার করা হয়েছে (বিকৃত করা হয়েছে )। নিম্ন আদালতে যা পেশ করা হয়েছিল, সেটা কার্বন কপি ছিল । সেই কপিতে অরিজিনাল পেনে লেখা এল কী করে ?"
বিচারপতি ইডির আইনজীবী এমভি রাজুকে বলেন, "আমার প্রস্তাব, আগামিকাল মামলার শুনানি আছে । আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি ও জেনারেল মেডিসিন বিভাগে দিল্লির এইমস-এর বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মেডিক্যাল রিপোর্ট করানো হোক ।"
ইডির আইনজীবী বলেন, দিল্লি কেন, কল্যাণী এইমস-এও হতে পারে । বিচারপতি জানান, "কল্যাণীর এইমসের উপর আমার ভরসা নেই । সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে । আপনি ভুবনেশ্বর এইমস-এ দেখুন ।" এরপর ইডির আইনজীবী জানান, তারা পার্থকে প্রয়োজনে ভুবনেশ্বর এইমস-এ নিয়ে যেতে পারেন । তার জবাবে বিচারপতি বলেন, "কোথাও নিয়ে যেতে দেব না । সেখানকার চিকিৎসকরা এখানে আসুন । আপনিও কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ৷ বললে এক ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বাই প্লেনে এখানে চলে আসবেন ।"