কলকাতা, 4 জুন : দুই মাসের লকডাউনে বন্ধ ছিল গাড়ি-ঘোড়া ৷ যার জেরে কমেছিল কলকাতার দূষণ । উল্লেখযোগ্যভাবে বায়ুদূষণ কমে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন পরিবেশবিদরা । এক ধাক্কায় কমে গিয়েছিল বাতাসের বিষও । কিন্তু, লকডাউন শেষের পর আনলক-এক পর্বে ধীরে ধীরে আবার যেন স্বমহিমায় ফিরছে শহর । বাড়তে শুরু করেছে দূষণ ।
দূষণ । গোটা পৃথিবীর কাছে দিল্লি লাল তালিকাভুক্ত আছে ঠিকই, তবে কলকাতাও পিছিয়ে নেই । ভারতের সর্বোচ্চ দূষণযুক্ত শহরের তালিকায় উপরের দিকেই নাম রয়েছে তিলোত্তমার । কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট বলছে, এই কলকাতায় একটা সময় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স 160 ছাড়িয়েছিল । ইনডেক্স সারাবছর ওঠানামা করে 130-160 এর মধ্যে । ইনডেক্সের সূচক 100 পার হলেই বিপদজনক দিকে যেতে শুরু করে । 101 থেকে 200 পর্যন্ত সূচককে বলা হয় বিপদজনক । 201 থেকে 300 হল খারাপ । 301 থেকে 400 পর্যন্ত অতি খারাপ, 401 থেকে 500 পর্যন্ত সূচককে বলা হয় ভয়ঙ্কর খারাপ । পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক নির্ভর করে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা অর্থাৎ PM 2.5 এবং বাতাসে ভাসমান সূক্ষ ধূলিকণার উপর ।
তথ্য বলছে, জনতা কারফিউয়ের আগের দিন অর্থাৎ 19 মার্চ কলকাতায় সূচক পৌঁছেছিল 128 । 23 মার্চ লকডাউনের পরই সেই সূচক দ্রুত কমতে শুরু করে । 24 শে মার্চ থেকে এই সূচক 100-র নিচে নামতে শুরু । একটা সময় তা কমে গিয়েছিল 40-এর নিচে । বাতাসের শব্দ ও গতিশক্তি ধূলিকণা মাপার যন্ত্র রয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে । দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর চত্বরেও মাপা হয় এই অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ ।
পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ জানাচ্ছেন, লকডাউনের এই সময়টায় কলকাতা শহরে অতি সূক্ষ্ম ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কমে গিয়েছিল অনেকটাই । একটা সময় তা কমে দাঁড়ায় প্রতি কিউবিক মিটারে 10 mg । তিনি বলেন, "লকডাউনের সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ধোঁয়াহীন মুক্ত আকাশ দেখেছিল শহর কলকাতা । একটা সময় বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম কণার পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র 10 mg প্রতি কিউবিক মিটারে । সেখানে আনলক-1 এর শুরুতেই তা বেড়ে গিয়েছে পাঁচ গুণ । এই মুহূর্তে কলকাতায় ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ সর্বোচ্চ 76 মিলিগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটারে পৌঁছেছে । গতকাল সকাল 10টার সময় কলকাতায় জাদুঘরের পরিমাণ ছিল 50 mg প্রতি কিউবিক মিটার । এখনও পর্যন্ত ঠিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি । কলকাতা শহরে বেসরকারি বাস-সহ অন্য গাড়ি চলাচল পুরোমাত্রায় শুরু হলে কী হবে তা ভেবে শঙ্কিত হচ্ছি ।"
তথ্য বলছে, আজ বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার সংখ্যা সর্বোচ্চ 53 সূচকে পৌঁছেছে । আজকের তথ্য বলছে, কলকাতায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স রয়েছে 62 । অর্থাৎ একটু একটু করে বাড়ছে দূষণ । আজ বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিটারে 285 মিউজি । লকডাউনের মাঝে কার্বন-মনোক্সাইড কমতে কমতে 100-র নিচে নেমে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা । পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, "গাড়ির কালো ধোঁয়া দূষণ বাড়ায় । বাড়িয়ে দেয় বাতাসে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণও । যা মারাত্মক ক্ষতিকর । লকডাউনের জেরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ঠিকই । কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শহরকে দূষণমুক্ত করতে গেলে যান চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে । পরিবেশ বান্ধব যানবাহনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে । তবেই কলকাতায় কমবে দূষণ ।"