কলকাতা, 19 অগাস্ট: মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও রোগীর ভরতির সময় অ্যাডভান্স হিসাবে নেওয়া যাবে না কোনও টাকা। সেই সঙ্গে 10 লাখ টাকা জমা রাখতে হবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এর কাছে। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে WBCERC-এর দায়ের করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় বুধবার প্রথম শুনানির দিন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এমনই বলল এই কমিশন।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও তিন লাখ টাকা দিতে না পারার কারণে এক COVID-19 আক্রান্ত রোগীকে ভরতি নেয়নি ওই হাসপাতাল । পরে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এর পর ওই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে ।
10 অগাস্ট রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে COVID-19-এ আক্রান্ত বছর ৬০-এর এক প্রৌঢ়াকে ভর্তির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি নার্সিংহোম থেকে ওই রোগীকে আনন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ দিকে, আনন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে এই COVID-19 রোগীকে ভর্তি করানোর জন্য গত 10 অগাস্ট বিকালে ওই হাসপাতালে অগ্রিম 80 হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন পরিজনরা।
তাদের অভিযোগ, গত 10 অগাস্ট রাত সাড়ে নটা নাগাদ এই রোগীকে সেখানে ভরতির জন্য নিয়ে যাওয়া হলে, আনন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের তরফে তিন লাখ টাকা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই টাকা জমা দেওয়া না হলে এই রোগীকে ভরতি নেওয়া হবে না বলে ওই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। ওই রোগীর ছেলে গত 10 অগাস্ট জানিয়েছিলেন, ওই টাকার ব্যবস্থা করার সময় গত 10 অগাস্ট রাত সওয়া 10 টা নাগাদ অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছিল।
ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল, এই রোগীকে ভরতি করানোর জন্য পরিজনরা গত 10 অগাস্ট বিকালে ওই হাসপাতালে গিয়ে বেড বুক করে এসেছিলেন। এর পরে গত 10 অগাস্ট রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ এই রোগীকে নিয়ে পরিজনরা যখন ওই হাসপাতালে পৌঁছন ভরতি করানোর জন্য, তখন মৃত অবস্থায় ছিলেন এই রোগী।
অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই এই রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন আনন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। CPR দিয়ে রোগীকে তাঁরা রিভাইভ করানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু, এই রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ভেন্টিলেটরের সাপোর্ট রয়েছে এমন অ্যাম্বুলেন্সে করে এই রোগীকে গত ১০ অগাস্ট রাতে যখন আনন্দপুরের ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন রোগীর মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল। মৃতকে কীভাবে ভরতি নেবে হাসপাতাল? এই জন্য এই রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়নি।
মৃত রোগীকে নিয়ে পরিজনরা এই হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন। পরিজনদের এই চেষ্টা আটকে দেওয়া হয়েছিল। আইন অনুযায়ী হাসপাতালের তরফে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার বিষয়ে জানার পরে বেসরকারি ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে WBCERC। অনলাইনে বুধবার এই মামলার প্রথম শুনানি হয়। এ দিনের শুনানির পরে কমিশন জানিয়েছে, এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের কাছে বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে 10 লাখ টাকা জমা রাখতে হবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও রোগীকে ভরতির সময় অ্যাডভান্স হিসাবে কোনও টাকা নিতে পারবে না বেসরকারি ওই হাসপাতাল। এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন স্থির হয়েছে হবে আগামী 28 অগাস্ট।