কলকাতা, 31 মার্চ : আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছিল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক । যে বিধিনিষেধ গুলিকে 'তুঘলকি' আখ্যা দিয়ে সেগুলি প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিল রাজ্যের অধ্যাপক মহল । এমনকি সেই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে । বাতিল হওয়া সেই বিধিনিষেধগুলিই আবার জারি করেছে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই)। তাই আবারও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এবিউটিএ)। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠিয়ে এআইসিটিই-র নির্দেশিত বিধিনিষেধগুলি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে অধ্যাপকদের এই সংগঠনটির তরফে ।
চলতি বছর 15 জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর। সেখানে বলা হয়েছিল, এখন থেকে অনলাইনে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র বা প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগাম অনুমতি নিতে হবে বিদেশ মন্ত্রকের থেকে। আলোচ্যসূচি থেকে শুরু করে আলোচকদের নাম, এমনকি ওয়েবিনার করার জন্য যে অ্যাপ ব্যবহার করা হবে তা জানিয়ে আগাম অনুমতি নিতে হবে । সেই কর্মসূচি সরকার দ্বারা অনুমোদিত হলে তার অনলাইন লিঙ্ক বিদেশ মন্ত্রকের কাছে জমা দিতে হবে। এমনকি এ ধরণের কর্মসূচি যেন কোনও ভাবেই "ভারত-বিরোধী" না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে বলেও জানানো হয়েছিল নির্দেশিকায় ।
এই বিধিনিষেধ গুলি সামনে আসতেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । 3 ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল এবিউটিএ। 3 মার্চ এবিউটিএ-র পাঠানো সেই স্মারকলিপির লিখিত উত্তর পাঠায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর । কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আন্ডার সেক্রেটারি সরোজ কুমার চৌধুরী এবিউটিএ-র সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতিকে লেখা চিঠিতে জানান, এই ধরণের কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ জারি করে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল তা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তা আর প্রযোজ্য নয়। নির্দেশিকা প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তিটিও ওই চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন গৌতম মাইতি।
আরও পড়ুন :এবার ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে দীনেশ বাজাজ
সম্প্রতি বাতিল হওয়া সেই বিধিনিষেধগুলি ফের জারি করা হয়েছে। এবার জারি করেছে এআইসিটিই । তবে, এবার আর আন্তর্জাতিক নয়, অনলাইন মাধ্যমে কনফারেন্স, সেমিনার, ট্রেনিং সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধগুলি। যা নিয়ে আবার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে এবিউটিএ। তাঁদের বক্তব্য, এটি ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষা স্বার্থ বিরোধী একটি পদক্ষেপ । তাই এর প্রতিবাদে এবিউটিএ-র পক্ষ থেকে আজ প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে । তাতে এআইসিটিই-র নির্দেশিত বিধিনিষেধগুলি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের মত দায়িত্বশীল সংস্থা কীভাবে এমন নির্দেশিকা জারি করতে পারে।
এবিউটিএ-র সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, "ওয়েবিনার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা এআইসিটিই একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আরোপ করে সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক গত 15 জানুয়ারি একটি তুঘলকি গাইডলাইন ইশু করেছিল। ওয়েবিনার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এই ধরনের তুঘলকি বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রতিবাদে এবিউটিএ-র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে গত 3 ফেব্রুয়ারি স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল। গত 3 মার্চ কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক চিঠি লিখে জানায় যে, ওয়েবিনার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই সেগুলি আর প্রযোজ্য নয়। এমনকি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক ওই চিঠির সঙ্গে এই ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার নির্দেশিকাটিও এবিউটিএ-কে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজকভাবে দেখা গেল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ এআইসিটিই ইতিমধ্যে বাতিল হওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলি আবার জারি করল।"