কলকাতা, 12 অগস্ট: বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) সিবিআই হেফাজতে । গত দেড় দশক বীরভূম জেলার দায়িত্বে ছিলেন তিনি । তিনি শুধু বীরভূম জেলার জেলা সভাপতি ছিলেন না । ছিলেন জাতীয় কার্যসমিতির সদস্যও । বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন । তাঁর অনুপস্থিতিতে লাল মাটির এই জেলার দায়িত্ব সামলাবেন কে, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ।
তথ্য বলছে, 1998 সালে তৃণমূল গঠনের সময়ে অনুব্রত কংগ্রেস থেকে যোগ দেন ঘাস-ফুল শিবিরে । সে সময় তাঁকে জেলার যুব সভাপতির পদ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata banerjee)। তবে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই ধীরে ধীরে তিনি ঢুকে পড়েন দিদির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে । 2009 সালের লোকসভা নির্বাচনে লাল দূর্গ হিসেবে পরিচিত বীরভূমে দল সাফল্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিদির প্রিয় কেষ্টরও প্রভাব বাড়তে শুরু করে । তিনি পান জেলা সভাপতির পদ । বীরভূমের গন্ডি পেরিয়ে তাঁকে পাশের জেলা বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদের একটি বড় অংশেরও দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
প্রসঙ্গত তৃণমূল কংগ্রেসের যতগুলি সংগঠনিক জেলা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বীরভূম জেলা । তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই জেলার জেলা সভাপতি ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল । শাসক দলের অন্দরের খবর বলছে, অনুব্রত মণ্ডলের কথা ছাড়া একজন ব্লক সভাপতিও কোনও কর্মসূচি নিতেন না । এই ধরনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যখন গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন তখন বীরভূমের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন আগামী দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচন রয়েছে, এই অবস্থায় জেলা কীভাবে চলবে !
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে সিবিআই-কনভয়, নবান্নের দিকে চেয়ে রইলেন 'কেষ্ট'
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে যেতে পারে, এমন আভাস দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই অবস্থায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার হওয়া স্বাভাবিক ভাবে চিন্তায় রেখেছে বীরভূম জেলার তৃণমূলকে । 2019 এ যখন বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন সাংঘাতিকভাবে ধাক্কা খেয়েছিল, 42টি লোকসভার মধ্যে 18টি লোকসভার আসনে বিজেপি জয়লাভ করেছিল, তখনও কিন্তু ওই জেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা আসন ধরে রেখেছিল তৃণমূল । 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলার 11টি আসনের মধ্যে দশটিতেই জিতেছে তৃণমূল । খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনুব্রত মণ্ডলের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে সকলেই খুব খুশি ছিল । অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর আগামী দিনে কীভাবে বীরভূমের জেলা সংগঠন চলবে, এই প্রশ্নটাই যখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে, তখন জানা যাচ্ছে দুই-একদিনের মধ্যেই বীরভূম জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে অনুব্রতর এই শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে, কীভাবে দল চলবে, সব বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।
এমনিতে বীরভূমে অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে সংগঠন চালানোর দায়িত্ব যেতে পারে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে । কারণ অনুব্রত মণ্ডলের পরে এই মুহূর্তে দলে তাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । তবে দলের অন্দরে এই মুহূর্তে আরও কয়েকটা নাম ঘোরাঘুরি করছে । সেই তালিকায় অবশ্যই রয়েছে বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা এবং জেলা রাজনীতিতে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত লাভপুরের বিধায়ক তথা অভিজিৎ সিংহ ওরফে রানার নাম । এখন দেখার এঁদের মধ্যে থেকে কাকে আগামী দিনে বীরভূমের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে সংগঠন চালানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ।