ETV Bharat / city

শহরে 50 শতাংশের বেশি মা নবজাতকদের ব্রেস্ট-ফিডিং করান না

শিশুকে ব্রেস্ট-ফিডিং করান না এমন মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে শহরে ৷ ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন ৷ ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ৷

author img

By

Published : Aug 5, 2019, 2:28 PM IST

ছবিটি প্রতীকী

কলকাতা, 5 অগাস্ট: শিশুকে ব্রেস্ট-ফিডিং করান না এমন মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে শহরে ৷ বর্তমান সমীক্ষা বলছে সংখ্যাটা 50 শতাংশের বেশি ৷ একদিকে শিক্ষিত মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং করানোর প্রবণতা বাড়ছে ৷ কিন্তু অন্যদিকে নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসের মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং না করানোর প্রবণতা বাড়ছে‌ । বিষয়টা উদ্বেগজনক ৷ জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

কলকাতার বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অগ্নিমিতা ৷ বলেন, "20 বছর ধরে যা দেখছি তাতে ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে কলকাতার অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে । 20 বছর আগে যা ছিল তার থেকে ধীরে ধীরে কমছে । গত কয়েক বছরে খুব বেশি পরিমাণে কমছে । কলকাতার ৫০ শতাংশেরও বেশি মা ব্রেস্ট-ফিডিং করান না । বেশিরভাগ মা কৃত্রিম দুধ কিনে শিশুদের খাইয়ে দেন । কারণ এইসব মা বিশ্বাস করেন, তাঁর স্তনে দুধ নেই । ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে এইসব মায়েদের সচেতন না করা হলে আশঙ্কা রয়েছে ।" অগ্নিমিতা জানান, অনেক সময় শিশুকে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে । বোতলে করে শিশু একবার দুধ খেতে শুরু করলে, সে আর স্তন্যপান করবে না ।

সন্তানকে দুধ খাওয়াতে হলে মানসিকভাবে মা'কে খুব রিলাক্স থাকতে হয় ৷ মা যদি টেনশনের মধ্যে থাকেন তা হলে সমস্যা দেখা দেয় । এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট -ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করে তোলা না হলে, আগামীদিনে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে । বলেন, " কাজের প্রেসার কিংবা বাড়িতে প্রেসার বাড়ার কারণে হরমোনাল রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আবার এমনও দেখা যায় যে যেসব মা চাকুরিজীবী, তাঁরা কিন্তু এবিষয়ে ভীষণরকম সচেতন ৷ এঁদের মধ্যে অনেকে খুব সাকসেসফুলি ব্রেস্ট-ফিডিং করাচ্ছেন । যাঁরা নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের ধারণা বাইরের দুধ খাওয়ালে বাচ্চাকে দেখতে সুন্দর হবে ৷ চেহারা গোলগাল হবে । তাঁদের মধ্যে অনেকেই যাঁরা মনে করেন, তাঁদের স্তনে দুধ নেই । এই জন্য, বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেন ৷

অগ্নিমিতা আরও বলেন, "24 ঘণ্টার মধ্যে 8-10 বার বা তার বেশি দুধ খায় শিশু । শিশু যখন ঘুমাবে, তখন ঘুমিয়ে নেবে‌ন মা । শিশু যখন জেগে থাকবে, মা-কে তখন জেগে থাকতে হবে । দেখা গেল, শিশু সারা রাত জেগে দুধ খাচ্ছে, মা-কেও জেগে থাকতে হচ্ছে । শিশু যখন সকালে ঘুমোচ্ছে, মা-কে তখন সকালে ঘুমিয়ে নিতে হবে । এই অবস্থায় মা এমনও ভাবছেন, তাঁর সিস্টেম তাঁর মতো চলুক, শিশুর সিস্টেম শিশুর মতো চলুক । বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে তিনি খাইয়ে দিলেন । নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে যাঁরা রয়েছেন, সেই সব মাও একা হয়ে গিয়েছেন । এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দিলে এই সব মাও নিশ্চিন্তে থাকেন । এই কারণটা যেমন রয়েছে । তেমনই এটাও রয়েছে যে সন্তানকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেন মা । এর ফলে সন্তানের ওজন ভালো বাড়ছে বা অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে । এই বিষয়টি তাঁরা সেভাবে ভাবছেন না, তাঁদের মনে হচ্ছে বাচ্চার এই যে অতিরিক্ত ওজন হচ্ছে সেটা বাইরের দুধ খেয়ে ৷ এটা বুঝি খুব বেশি পুষ্টিকর ৷ বাচ্চার গোলগাল চেহারা হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব ভালো বৃদ্ধি হচ্ছে । কিন্তু এটাও তো অপুষ্টির কারণ হতে পারে । কারণ মায়ের দুধ শিশু পাচ্ছে না বলে কিছু নিউট্রিয়েন্টস এবং কিছু প্রয়োজনীয় এলিমেন্ট পাচ্ছে না । এই যে ঘাটতি থাকছে তা বুঝতে পারছেন না এইসব মা ।" এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে এই সব মায়ের কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজন । তাঁদের বোঝানো দরকার যে মায়ের দুধ শ্রেষ্ঠ । মা দুধ খাওয়ালে তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । তাঁকেও ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে ।

ব্রেস্ট-ফিডিং কীভাবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অগ্নিমিতা বলেন, " কোনও শিশু যদি তার মায়ের কাছ থেকে দুধ পায়, তাহলে এর সবটাই অ্যাডভান্টেজ । কারণ, শিশুর একমাত্র আহার হচ্ছে মায়ের দুধ । এটা তার অধিকার ৷
A ফর এলার্জি । এলার্জির ধাত কমে । এলার্জি মানে স্কিন, ফুসফুসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলার্জি । এর সবটাই কম হয় ।

B ফর বন্ডিং অর্থাৎ মা ও শিশুর মধ্যে বন্ডিং তৈরি হয় । স্কিন-টু-স্কিন কন্টাক্টে থাকতে হবে মা এবং শিশুকে ৷ মায়ের যে তাপ সেটাও নিচ্ছে শিশু । মায়ের সঙ্গে শিশুর অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হচ্ছে । এছাড়া ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে । এমন কিছু এলিমেন্ট ব্রেস্ট মিল্কে আছে যেটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হতে সাহায্য করে ।

C ফর কিছু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ় হতে পারে । কারণ এত বেশি যদি অতিরিক্ত ক্যালোরি খায়, তা হলে এর থেকে পরবর্তীকালে যে ফ্যামিলিতে টেনডেন্সি রয়েছে, সেখানে ব্লাড প্রেসারের চান্স বাড়তে পারে । সর্দি-কাশি থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করে C ফর কাফ-অ্যান্ড-কোল্ড থেকেও । ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের জন্য ইনফেকশন কম হয় ।

D ফর ডায়াবেটিস অর্থাৎ, যেহেতু এখানে ব্লাড সুগার লেভেলটা বেশি থাকে, ডায়াবেটিস ডেভলপ করার প্রবণতা থাকতে পারে ।

E ফর এন্টেরিক অর্থাৎ, পেটের সমস্যা কম হয় । আবার ইনফেকশন কম হয় বলে ডায়রিয়াও কম হয় ।

যেহেতু চোয়াল মুভমেন্ট করে শিশুকে দুধ খেতে হয়, তাই F অর্থাৎ, ফেসিয়াল গ্রোথ, এটাও খুব ভালো হয় ।

আর, G ফর গ্রোথ অর্থাৎ ওভারঅল ডেভলপমেন্ট যেটা বাচ্চার ক্ষেত্রে খুব ভালো হয় । কারণ বাচ্চার ওবেসিটি হয় না । অতিরিক্ত মেদ জমে না ।

এগুলি সবই শিশুর জন্য উপকারি । মায়েরও কিছু উপকারিতা আছে । কারণ মা যদি দুধ খাওয়ান, তা হলে তাঁর শরীর থেকে প্রত্যেক দিন ৪০০-৫০০ ক্যালোরি বেরিয়ে যাচ্ছে । ফিগার ভালো হচ্ছে । হরমোন নিঃসরণ ঠিকঠাক হওয়ায় মুড স্ট্যাবিলাইজড হচ্ছে । এখানে অস্টিওপোরেসিস হতে দেয় না বলে মায়ের হাড়গুলো খুব ভালো থাকে । অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয় বলে বাচ্চা জন্মানোর পরে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হয় পেশীর সংকোচন হয় বলে । সেই রক্তক্ষরণ খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয় । ব্রেস্ট-ফিডিং কিছুটা কন্ট্রাসেপটিভ হিসাবেও কাজ করে ৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ব্রেস্ট-ক্যান্সার প্রতিরোধ করে । ব্রেস্ট-ফিডিং মা ও শিশু দু'জনের জন্য খুবই উপকারি ।

প্রতিবছর বিশ্ব ব্রেস্ট-ফিডিং সপ্তাহ পালন করা হয় পয়লা অগাস্ট থেকে সাত অগাস্ট পর্যন্ত । এই বছরের থিম Empower Parents, Enable Breast-Feeding ৷ এই থিমের সম্পর্কে অগ্নিমিতা বলেন, "মা যখন স্তন্যপান করান, তখন মায়েরও সাপোর্টের দরকার হয় । মা-কে সাপোর্ট করার জন্য বাবারও একটি ভূমিকা রয়েছে । সন্তানের ব্রেস্ট-ফিডিং কন্টিনিউ করার জন্য মা-বাবার দু'জনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।" একান্নবর্তী পরিবারে এক সময় সুবিধা ছিল । বাড়ির লোকেরা সাপোর্ট করতেন, যাতে মা, শিশু একসঙ্গে থাকেন । মা-কে যেন অন্য কোনও দিকে নজর দিতে না হয় । তাঁকে যেন জীবনের কোনও টেনশন নিতে না হয় । স্বভাবতই মা এবং শিশুর জীবনটা একটা ইউনিট । এই হিসাবেই প্রথম ছয় মাস চলতে থাকত জীবন যাপন ।

পরিবারগুলি এখন ছোট ছোট হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু মা-বাবা এবং সন্তান । এই অবস্থা হয় যখন সন্তানের জন্ম হয় তখন তাকে স্তন্যপান করানোর জন্য খুব ধৈর্যের প্রয়োজন । কারণ প্রথম দুই থেকে তিন দিন দুধ কম থাকে প্রচুর পরিমাণে ইমিউনোগ্লোবুলিন A থাকে । এটা শিশুর ইমিউনিটি বাড়ায় । এটা শিশু না পেলে তার ক্ষতি হতে পারে । অগ্নিমিতা আরও বলেন, "মা-কে যদি বোঝানো না হয় যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ এটা ফেলে দেওয়া উচিত নয় ৷ এটা খাওয়ানো উচিত ৷ তখন যদি বাইরের দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেয়, তা হলে তাঁর স্তনে দুধ তৈরি হবে না । মনে রাখতে হবে দুধ তৈরি করতে ও নিঃসরণে সাহায্য করে দু'টি হরমোন ৷ অক্সিটোসিন এবং প্রোল্যাকটিন । দুধ তৈরি করতে সাহায্য করে প্রোল্যাকটিন । দুধ নিঃসরণের সাহায্য করে অক্সিটোসিন । এই অবস্থার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন । কারণ দু থেকে তিন দিন সময় লাগে । ছয় মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের জন্য মা এবং বাবা, দু'জনেরই বড় ভূমিকা রয়েছে ।"

কলকাতা, 5 অগাস্ট: শিশুকে ব্রেস্ট-ফিডিং করান না এমন মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে শহরে ৷ বর্তমান সমীক্ষা বলছে সংখ্যাটা 50 শতাংশের বেশি ৷ একদিকে শিক্ষিত মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং করানোর প্রবণতা বাড়ছে ৷ কিন্তু অন্যদিকে নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসের মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং না করানোর প্রবণতা বাড়ছে‌ । বিষয়টা উদ্বেগজনক ৷ জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

কলকাতার বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অগ্নিমিতা ৷ বলেন, "20 বছর ধরে যা দেখছি তাতে ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে কলকাতার অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে । 20 বছর আগে যা ছিল তার থেকে ধীরে ধীরে কমছে । গত কয়েক বছরে খুব বেশি পরিমাণে কমছে । কলকাতার ৫০ শতাংশেরও বেশি মা ব্রেস্ট-ফিডিং করান না । বেশিরভাগ মা কৃত্রিম দুধ কিনে শিশুদের খাইয়ে দেন । কারণ এইসব মা বিশ্বাস করেন, তাঁর স্তনে দুধ নেই । ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে এইসব মায়েদের সচেতন না করা হলে আশঙ্কা রয়েছে ।" অগ্নিমিতা জানান, অনেক সময় শিশুকে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে । বোতলে করে শিশু একবার দুধ খেতে শুরু করলে, সে আর স্তন্যপান করবে না ।

সন্তানকে দুধ খাওয়াতে হলে মানসিকভাবে মা'কে খুব রিলাক্স থাকতে হয় ৷ মা যদি টেনশনের মধ্যে থাকেন তা হলে সমস্যা দেখা দেয় । এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট -ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করে তোলা না হলে, আগামীদিনে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে । বলেন, " কাজের প্রেসার কিংবা বাড়িতে প্রেসার বাড়ার কারণে হরমোনাল রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আবার এমনও দেখা যায় যে যেসব মা চাকুরিজীবী, তাঁরা কিন্তু এবিষয়ে ভীষণরকম সচেতন ৷ এঁদের মধ্যে অনেকে খুব সাকসেসফুলি ব্রেস্ট-ফিডিং করাচ্ছেন । যাঁরা নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের ধারণা বাইরের দুধ খাওয়ালে বাচ্চাকে দেখতে সুন্দর হবে ৷ চেহারা গোলগাল হবে । তাঁদের মধ্যে অনেকেই যাঁরা মনে করেন, তাঁদের স্তনে দুধ নেই । এই জন্য, বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেন ৷

অগ্নিমিতা আরও বলেন, "24 ঘণ্টার মধ্যে 8-10 বার বা তার বেশি দুধ খায় শিশু । শিশু যখন ঘুমাবে, তখন ঘুমিয়ে নেবে‌ন মা । শিশু যখন জেগে থাকবে, মা-কে তখন জেগে থাকতে হবে । দেখা গেল, শিশু সারা রাত জেগে দুধ খাচ্ছে, মা-কেও জেগে থাকতে হচ্ছে । শিশু যখন সকালে ঘুমোচ্ছে, মা-কে তখন সকালে ঘুমিয়ে নিতে হবে । এই অবস্থায় মা এমনও ভাবছেন, তাঁর সিস্টেম তাঁর মতো চলুক, শিশুর সিস্টেম শিশুর মতো চলুক । বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে তিনি খাইয়ে দিলেন । নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে যাঁরা রয়েছেন, সেই সব মাও একা হয়ে গিয়েছেন । এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দিলে এই সব মাও নিশ্চিন্তে থাকেন । এই কারণটা যেমন রয়েছে । তেমনই এটাও রয়েছে যে সন্তানকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেন মা । এর ফলে সন্তানের ওজন ভালো বাড়ছে বা অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে । এই বিষয়টি তাঁরা সেভাবে ভাবছেন না, তাঁদের মনে হচ্ছে বাচ্চার এই যে অতিরিক্ত ওজন হচ্ছে সেটা বাইরের দুধ খেয়ে ৷ এটা বুঝি খুব বেশি পুষ্টিকর ৷ বাচ্চার গোলগাল চেহারা হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব ভালো বৃদ্ধি হচ্ছে । কিন্তু এটাও তো অপুষ্টির কারণ হতে পারে । কারণ মায়ের দুধ শিশু পাচ্ছে না বলে কিছু নিউট্রিয়েন্টস এবং কিছু প্রয়োজনীয় এলিমেন্ট পাচ্ছে না । এই যে ঘাটতি থাকছে তা বুঝতে পারছেন না এইসব মা ।" এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে এই সব মায়ের কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজন । তাঁদের বোঝানো দরকার যে মায়ের দুধ শ্রেষ্ঠ । মা দুধ খাওয়ালে তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । তাঁকেও ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে ।

ব্রেস্ট-ফিডিং কীভাবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অগ্নিমিতা বলেন, " কোনও শিশু যদি তার মায়ের কাছ থেকে দুধ পায়, তাহলে এর সবটাই অ্যাডভান্টেজ । কারণ, শিশুর একমাত্র আহার হচ্ছে মায়ের দুধ । এটা তার অধিকার ৷
A ফর এলার্জি । এলার্জির ধাত কমে । এলার্জি মানে স্কিন, ফুসফুসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলার্জি । এর সবটাই কম হয় ।

B ফর বন্ডিং অর্থাৎ মা ও শিশুর মধ্যে বন্ডিং তৈরি হয় । স্কিন-টু-স্কিন কন্টাক্টে থাকতে হবে মা এবং শিশুকে ৷ মায়ের যে তাপ সেটাও নিচ্ছে শিশু । মায়ের সঙ্গে শিশুর অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হচ্ছে । এছাড়া ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে । এমন কিছু এলিমেন্ট ব্রেস্ট মিল্কে আছে যেটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হতে সাহায্য করে ।

C ফর কিছু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ় হতে পারে । কারণ এত বেশি যদি অতিরিক্ত ক্যালোরি খায়, তা হলে এর থেকে পরবর্তীকালে যে ফ্যামিলিতে টেনডেন্সি রয়েছে, সেখানে ব্লাড প্রেসারের চান্স বাড়তে পারে । সর্দি-কাশি থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করে C ফর কাফ-অ্যান্ড-কোল্ড থেকেও । ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের জন্য ইনফেকশন কম হয় ।

D ফর ডায়াবেটিস অর্থাৎ, যেহেতু এখানে ব্লাড সুগার লেভেলটা বেশি থাকে, ডায়াবেটিস ডেভলপ করার প্রবণতা থাকতে পারে ।

E ফর এন্টেরিক অর্থাৎ, পেটের সমস্যা কম হয় । আবার ইনফেকশন কম হয় বলে ডায়রিয়াও কম হয় ।

যেহেতু চোয়াল মুভমেন্ট করে শিশুকে দুধ খেতে হয়, তাই F অর্থাৎ, ফেসিয়াল গ্রোথ, এটাও খুব ভালো হয় ।

আর, G ফর গ্রোথ অর্থাৎ ওভারঅল ডেভলপমেন্ট যেটা বাচ্চার ক্ষেত্রে খুব ভালো হয় । কারণ বাচ্চার ওবেসিটি হয় না । অতিরিক্ত মেদ জমে না ।

এগুলি সবই শিশুর জন্য উপকারি । মায়েরও কিছু উপকারিতা আছে । কারণ মা যদি দুধ খাওয়ান, তা হলে তাঁর শরীর থেকে প্রত্যেক দিন ৪০০-৫০০ ক্যালোরি বেরিয়ে যাচ্ছে । ফিগার ভালো হচ্ছে । হরমোন নিঃসরণ ঠিকঠাক হওয়ায় মুড স্ট্যাবিলাইজড হচ্ছে । এখানে অস্টিওপোরেসিস হতে দেয় না বলে মায়ের হাড়গুলো খুব ভালো থাকে । অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয় বলে বাচ্চা জন্মানোর পরে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হয় পেশীর সংকোচন হয় বলে । সেই রক্তক্ষরণ খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয় । ব্রেস্ট-ফিডিং কিছুটা কন্ট্রাসেপটিভ হিসাবেও কাজ করে ৷ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ব্রেস্ট-ক্যান্সার প্রতিরোধ করে । ব্রেস্ট-ফিডিং মা ও শিশু দু'জনের জন্য খুবই উপকারি ।

প্রতিবছর বিশ্ব ব্রেস্ট-ফিডিং সপ্তাহ পালন করা হয় পয়লা অগাস্ট থেকে সাত অগাস্ট পর্যন্ত । এই বছরের থিম Empower Parents, Enable Breast-Feeding ৷ এই থিমের সম্পর্কে অগ্নিমিতা বলেন, "মা যখন স্তন্যপান করান, তখন মায়েরও সাপোর্টের দরকার হয় । মা-কে সাপোর্ট করার জন্য বাবারও একটি ভূমিকা রয়েছে । সন্তানের ব্রেস্ট-ফিডিং কন্টিনিউ করার জন্য মা-বাবার দু'জনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।" একান্নবর্তী পরিবারে এক সময় সুবিধা ছিল । বাড়ির লোকেরা সাপোর্ট করতেন, যাতে মা, শিশু একসঙ্গে থাকেন । মা-কে যেন অন্য কোনও দিকে নজর দিতে না হয় । তাঁকে যেন জীবনের কোনও টেনশন নিতে না হয় । স্বভাবতই মা এবং শিশুর জীবনটা একটা ইউনিট । এই হিসাবেই প্রথম ছয় মাস চলতে থাকত জীবন যাপন ।

পরিবারগুলি এখন ছোট ছোট হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু মা-বাবা এবং সন্তান । এই অবস্থা হয় যখন সন্তানের জন্ম হয় তখন তাকে স্তন্যপান করানোর জন্য খুব ধৈর্যের প্রয়োজন । কারণ প্রথম দুই থেকে তিন দিন দুধ কম থাকে প্রচুর পরিমাণে ইমিউনোগ্লোবুলিন A থাকে । এটা শিশুর ইমিউনিটি বাড়ায় । এটা শিশু না পেলে তার ক্ষতি হতে পারে । অগ্নিমিতা আরও বলেন, "মা-কে যদি বোঝানো না হয় যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ এটা ফেলে দেওয়া উচিত নয় ৷ এটা খাওয়ানো উচিত ৷ তখন যদি বাইরের দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেয়, তা হলে তাঁর স্তনে দুধ তৈরি হবে না । মনে রাখতে হবে দুধ তৈরি করতে ও নিঃসরণে সাহায্য করে দু'টি হরমোন ৷ অক্সিটোসিন এবং প্রোল্যাকটিন । দুধ তৈরি করতে সাহায্য করে প্রোল্যাকটিন । দুধ নিঃসরণের সাহায্য করে অক্সিটোসিন । এই অবস্থার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন । কারণ দু থেকে তিন দিন সময় লাগে । ছয় মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের জন্য মা এবং বাবা, দু'জনেরই বড় ভূমিকা রয়েছে ।"

Intro:কলকাতা, ৪ অগাস্ট: ৫০ শতাংশেরও বেশি মা ব্রেস্টফিডিং করান না। পরিস্থিতি এমন যে, ব্রেস্টফিডিং করানো মায়ের সংখ্যা কয়েক বছর ধরে খুব বেশি পরিমাণে কমছে। একদিকে যখন শিক্ষিত মায়েদের মধ্যে ব্রেস্টফিডিং করানোর ইচ্ছা বাড়ছে, তখনই অন্যদিকে, নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসের মায়েদের মধ্যে ব্রেস্টফিডিং না করানোর প্রবণতা বাড়ছে‌। আর, এই ছবি কলকাতার‌। এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।


Body:কলকাতার বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের কথায়, "২০ বছর ধরে যা দেখছি, তাতে ব্রেস্টফিডিংয়ের বিষয়ে কলকাতার অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০ বছর আগে যা ছিল, তার থেকে ধীরে ধীরে কমছে। এবং, গত কয়েক বছরে খুব বেশি পরিমাণে কমছে। কলকাতার ৫০ শতাংশেরও বেশি মা ব্রেস্টফিডিং করার না। বেশিরভাগ মা-ই আর্টিফিশিয়াল দুধ কিনে, তাঁদের শিশুদের খাইয়ে দেন। কারণ, এই সব মা বিশ্বাস করেন, তাঁর স্তনে দুধ নেই।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ব্রেস্টফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করে তোলা না হলে, আশঙ্কা রয়েছে।" অনেক সময় শিশুকে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। বোতলে করে শিশু দুধ খেতে শুরু করলে, সে আর স্তন‍্যপান করবে না।

সন্তানকে দুধ খাওয়াতে হলে মানসিকভাবে মাকে খুব রিলাক্স থাকতে হয়। মা যদি টেনশনের মধ্যে থাকেন, তা হলে সমস্যা দেখা দেয়। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করে তোলা না হলে, আগামী দিনে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। এই কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "কাজের প্রেসার কিংবা বাড়ির প্রেসার, এর কারণে হরমোনাল রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার এমনও দেখা যায়, যে সব মা চাকুরীজীবী, তারা কিন্তু ভীষণ রকম সচেতন হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে খুব সাকসেসফুলি ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন।" তিনি বলেন, "যারা নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তাদেঁর মধ্যে অনেকের ধারণা রয়েছে, বাইরের দুধ খাওয়ালে বাচ্চাকে দেখতে সুন্দর হবে, বাচ্চা চেহারা বেশ গোলগাল হবে। এ সব এই মায়ের কাছে আকর্ষণীয়, বিজ্ঞাপনের আকর্ষণ।"

এই সব মায়ের মনে হচ্ছে, তাঁদের স্তনে দুধ নেই। এই জন্য, বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দিকে, পেট ভরে দুধ খেয়ে নিলে বাচ্চারা ঘুমোচ্ছে। এ কথা জানিয়ে এই ডাক্তার বলেন, "২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮-১০ বার বা তার থেকেও বেশি বার দুধ খায় শিশু। শিশু যখন ঘুমাবে, তখন ঘুমিয়ে নেবে‌ন মা। শিশু যখন জেগে থাকবে, মাকে তখন জেগে থাকতে হবে। দেখা গেল, শিশু সারা রাত জেগে দুধ খাচ্ছে, মাকেও জেগে থাকতে হচ্ছে। শিশু যখন সকালে ঘুমোচ্ছে, মাকে তখন সকালে ঘুমিয়ে নিতে হবে। এই অবস্থায় মা এমনও ভাবছেন, তাঁর সিস্টেম তার মতো চলুক, শিশুর সিস্টেম শিশুর মতো চলুক‌। বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে তিনি খাইয়ে দিলেন।"

এই ডাক্তার বলেন, "লো সোসিও-ইকোনমিক স্ট্যাটাসে যাঁরা রয়েছেন, সেই সব মাও একা হয়ে গিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দিলে এই সব মাও নিশ্চিন্তে থাকেন। এই কারণে রয়েছে। তেমনই এটাও রয়েছে, সন্তানকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেন মা। এর ফলে সন্তানের ওজন ভালো বাড়ছে বা অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে। এই বিষয়টি তাঁরা সেভাবে ভাবছেন না, তাঁদের মনে হচ্ছে, বাচ্চার এই যে অতিরিক্ত ওজন হচ্ছে বাইরে দুধ খেয়ে এটা বুঝি খুব বেশি পুষ্টি হল। বাচ্চার গোলগাল চেহারা হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব ভালো গ্রোথ হচ্ছে। কিন্তু, এটাও তো অপুষ্টির কারণ হতে পারে। কারণ, মায়ের দুধ শিশু পাচ্ছে না বলে কিছু নিউট্রিয়েন্ট এবং কিছু এসেন্টিয়াল এলিমেন্ট পাচ্ছে না। এই যে ঘাটতি থাকছে, তা বুঝতে পারছেন না এইসব মা।" এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে, এই সব মায়ের জন্য কাউন্সেলিং প্রয়োজন। তাঁদের বোঝানোর প্রয়োজন যে, মায়ের দুধ শ্রেষ্ঠ। মা দুধ খাওয়ালে, তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাঁকেও ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে।

ব্রেস্টফিডিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এই ডাক্তার বলেন, "কোনও শিশু যদি তার মায়ের কাছ থেকে দুধ পায়, তা হলে এর সবটাই অ্যাডভান্টেজ। তার কারণ হচ্ছে শিশুর একমাত্র আহার হচ্ছে মায়ের দুধ। এবং, এটা তার অধিকার মায়ের দুধের উপরে।"

কীভাবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্রেস্টফিডিং, তা ডাক্তার বুঝিয়ে দিয়েছেন এই ভাবে:
A ফর এলার্জি। এলার্জির ধাত কমে। এলার্জি মানে স্কিন, ফুসফুস সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলার্জি। এর সবটাই কম হয়।

B ফর বন্ডিং অর্থাৎ, মা ও শিশুর মধ্যে বন্ডিং তৈরি হয়। স্কিন টু স্কিন কন্টাক্টে থাকতে হবে মা এবং শিশুকে, যেটা অনেক সময় আমরা ক্যাঙ্গারুকে বলি যে, বাচ্চা একদম মায়ের সঙ্গে গায়ে গায়ে লেগে রয়েছে। মায়ের যে তাপ সেটাও নিচ্ছে শিশু। মায়ের সঙ্গে শিশুর অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। এমন কিছু এলিমেন্ট ব্রেস্ট মিল্কে আছে যেটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হতে ভালোভাবে সাহায্য করে।

C ফর কিছু কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হতে পারে। কারণ এত বেশি যদি অতিরিক্ত ক্যালোরি খায়, তা হলে এর থেকে পরবর্তীকালে যে ফ্যামিলিতে টেনডেন্সি রয়েছে, সেখানে ব্লাড প্রেসারের চান্স বাড়তে পারে। সর্দি-কাশি থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করে C ফর কাফ অ্যান্ড কোল্ড থেকেও। ব্রেস্টফিডিংয়ের জন্য ইনফেকশন কম হয়।

D ফর ডায়াবেটিস অর্থাৎ, যেহেতু এখানে ব্লাড সুগার লেভেলটা বেশি থাকে, ডায়াবেটিস ডেভলপ করার প্রবণতা থাকতে পারে।

E ফর এন্টেরিক অর্থাৎ, পেটের সমস্যা কম হয়। আবার ইনফেকশন কম হয় বলে ডায়রিয়াও কম হয়।

যেহেতু চোয়াল মুভমেন্ট করে শিশুকে দুধ টেনে খেতে হয়, এর জন্য F অর্থাৎ, ফেসিয়াল গ্রোথ, এটাও খুব ভালো হয়।

আর, G ফর গ্রোথ। অর্থাৎ, ওভারঅল ডেভলপমেন্ট যেটা বাচ্চার ক্ষেত্রে খুব ভালো হয়। কারণ বাচ্চার ওবেসিটি হয় না। বাচ্চার অতিরিক্ত মেদ জমে না।

এগুলি সবই শিশুর উপকারিতা। মায়েরও কিছু উপকারিতা আছে। কারণ, মা যদি দুধ খাওয়ান, তা হলে তাঁর শরীর থেকে প্রত্যেক দিন ৪০০-৫০০ ক্যালোরি বেরিয়ে যাচ্ছে। ফিগার ভালো হচ্ছে। হরমোন নিঃসরণ ঠিকঠাক হলে মুড স্ট্যাবিলাইজড হচ্ছে। এখানে অস্টিওপোরেসিস হতে দেয় না বলে মায়ের হাড়গুলো খুব ভালো থাকে। অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ হয় বলে বাচ্চা জন্মানোর পরে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হয় মাসল সংকুচন হয় বলে। সেই রক্তক্ষরণ খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়। ব্রেস্টফিডিং কিছুটা কন্ট্রাসেপটিভ হিসাবেও কাজ হতে।পারে । সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হল, তা হচ্ছে, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ব্রেস্টফিডিং মা, শিশু দুজনের জন্য খুবই উপকারী।


Conclusion:ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং সপ্তাহ পালন করা হয় ১ অগাস্ট থেকে ৭ অগাস্ট পর্যন্ত। এই বছরের থিম Empower parents, enable breastfeeding। এই থিমের বিষয়ে কলকাতার এই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "মা যখন স্তন্যপান করান, তখন মায়েরও সাপোর্টের দরকার হয়। এবং, মাকে সাপোর্ট করার জন্য বাবারও একটি ভূমিকা রয়েছে। সন্তানের ব্রেস্টফিডিং কন্টিনিউ করার জন্য মা, বাবার দু'জনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।" একান্নবর্তী পরিবারে এক সময় সুবিধা ছিল। বাড়ির লোকেরা সাপোর্ট করতেন, যাতে মা, শিশু একসঙ্গে থাকেন। মাকে যেন অন্য কোনও দিকে নজর দিতে না হয়। তাঁকে যেন জীবনের কোনও টেনশন নিতে না হয়। অটোমেটিক্যালি মা এবং শিশুর জীবনটা একটা ইউনিট। এই হিসাবেই প্রথম ছয় মাস চলতে থাকত জীবন যাপন।

পরিবারগুলি এখন ছোট ছোট হয়ে গিয়েছে এক্ষেত্রে মা-বাবা এবং সন্তান। এই অবস্থা হয়, যখন সন্তানের জন্ম হল তখন তাকে স্তন্যপান করানোর জন্য খুব ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ প্রথম ২-৩ দিন স্তন থেকে যেটা বের হয় সেটা খুব আঠালো এবং দুধ খুব কম বের হয়। কিন্তু সন্তানকে এটা খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ইমিউনোগ্লোবুলিন এ থাকে। এটা শিশুর ইমিউনিটি বাড়ায়। এটা শিশু না পেলে তার ক্ষতি হতে পারে। তার ইমিউনিটি তৈরি হবে না। এই চিকিৎসক বলেন, "যখন শিশু স্তন্যপান করতে গেল, দেখা গেল দুধ বেশি পাচ্ছে না, খুব কান্নাকাটি করছে। মায়ের মনে হল, শিশুর পেট ভরছে না। তিনি বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দিলেন। কিংবা হয়তো কেউ পরামর্শ দিলেন দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেওয়ার জন‍্য যে, পেট ভরছে না বাচ্চা সারাদিন কান্নাকাটি করছে।" তিনি বলেন, "মাকে যদি বোঝানো না হয় যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটা ফেলে দেওয়া উচিত নয়, এটা খাওয়ানো উচিত, তখন যদি বাইরের দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেয়, তা হলে তাঁর স্তনে দুধ তৈরি হবে না। মনে রাখতে হবে, স্তনে দুধ থাকে না দুধ তৈরি হয়। দু'টি হরমোন অক্সিটোসিন এবং প্রোল্যাকটিন। দুধ তৈরি করতে সাহায্য করে প্রোল্যাকটিন। আর দুধ নিঃসরণের জন্য সাহায্য করে অক্সিটোসিন। এই অবস্থার জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ ২-৩ দিন সময় লাগে। ৬ মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিংয়ের জন্য মা এবং বাবা, দু'জনেরই বড় ভূমিকা রয়েছে।
______
বাইট:
wb_kol_02a_breastfeeding_byte_7203421
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।
_____
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.