ETV Bharat / city

Durga Puja : ঘরের মেয়ে উমাকে বরণ করতে সাজো সাজো রব সাঁকরাইলের পালবাড়িতে

সাঁকরাইলের জমিদার বাড়ি পালবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় দুশো বছর ৷ এখানে উমা রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা ৷ পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে ৷ অন্যান্য জমিদার বাড়ির প্রাচীন পুজোগুলি যেমন জৌলুস হারিয়েছে, এখানে তেমনটা হয়নি ৷ এখনও বেশ জাঁকজমক করেই হয় দেবীর আরাধনা ৷

সাঁকরাইলের পালবাড়ির দুর্গাপুজো
সাঁকরাইলের পালবাড়ির দুর্গাপুজো
author img

By

Published : Sep 25, 2021, 3:23 PM IST

হাওড়া, 15 সেপ্টেম্বর : গুটি গুটি পায়ে কেটে গিয়েছে প্রায় দু'শো বছর । হাওড়ার সাঁকরাইলের রাজগঞ্জে পালবাড়িতে মেয়ে উমা আসেন পুজো নিতে । প্রায় একশো নব্বই বছরের বেশি সময় ধরে এই বাড়িতে দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন মেয়ে উমা রূপে ।

এই বাড়ির প্রাণপুরুষ রাজা রাম পাল । তিনি হাওড়ার আন্দুলের রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন । ভাল কাজের জন্য রাজার থেকে ওই এলাকায় জমিদারি পান । সেই সময় রাজগঞ্জে গঙ্গার পাড়ে বাড়ি তৈরি করেন । কিন্তু হঠাৎ ভূমিকম্প এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গঙ্গার গ্রাসে তলিয়ে যায় সেই বাড়ি । এরপর 1857 সালের পর আবার তৈরি হয় বাড়ি এবং নাট মন্দির । দ্বিতীয়বার এই বাড়ি তৈরি হয় প্রায় একশো নব্বই বছর আগে । রাজা রাম পালের ছেলে রামধন পাল সেই বাড়ির অনতিদূরে তৈরি করেন নতুন জমিদার বাড়ি, সঙ্গে ঠাকুর দালান । নিজের ছেলের নামে তৈরি হওয়া বাড়ির নাম দেন ললিত লজ । সেই সময় থেকেই পালবাড়িতে দুর্গাপুজো দিয়ে মূর্তি পুজো শুরু হয়, যা আজও সমান ঐতিহ্য বহন করে আসছে ৷

রাম পালের দুই ছেলে আর দেওয়ানি করেননি । নফরচন্দ্র পাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে প্রথমে চাকরি ও পরে ইটের ব্যবসা শুরু করেন । এলাকার প্রচুর ইটভাটা তৈরি করে রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ইট সরবরাহ করতে শুরু করেন । এছাড়াও অন্যান্য বহু ব্যবসা করতে থাকেন । সেই সময় থেকেই পালেদের আর্থিক প্রতিপত্তি শুরু হয় । পালবাড়ির দুর্গাপুজোও জমজমাট হতে থাকে ৷

পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে । জন্মাষ্টমীর দিনে কাঠামো পুজোর মাধ্যমে এই বাড়িতে ঢাকে কাঠি পড়ে ৷ মহালয়া থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ । বাড়ির মহিলারা পুজোর সমস্ত কাজে হাত লাগান । অষ্টমীতে তৈরি হয় বিশেষ ভোগ, যা গোটা গ্রামের মানুষকে বিতরণ করা হয় । এই বাড়ির বিশেষত্ব হল, এই বাড়িতে অষ্টমীর দিনেই সিঁদুর খেলা হয় । এই রীতির প্রচলন হয় অতীতের এক অঘটনের কারণে । বাড়ির বড় ছেলে ললিতচন্দ্র পাল মাত্র 18 বছর বয়সে অষ্টমীর দিনেই মারা যান । তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সম্পন্ন করা হয় অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো ৷ তারপর মৃতদেহ সৎকার করা হয় ৷ সেই থেকে আজ অবধি পালবাড়িতে অষ্টমীর দিনেই চলে সিঁদুর খেলার প্রথা ৷

প্রায় দুশো বছর পরও সাঁকরাইলের পালবাড়ির দুর্গাপুজো চলছে বেশ জাঁকজমক করেই

এখানে মায়ের রূপ চিন্ময়ী ৷ একচালায় সপরিবারে মায়ের অধিষ্ঠান । দশমীতে বাড়ির ছেলে এবং গ্রামের ছেলেরাই মাকে কাঁধে করে বাড়ির সামনে গঙ্গায় নিরঞ্জন দেন । তবে পুজোর এই ক'টা দিন জাঁকজমক ও আত্মীয়-পরিজনের কোলাহলে গমগম করে ওঠে গোটা বাড়ি । দেশ-বিদেশ থেকে আসেন আত্মীয়রা । পালবাড়ির পুজোয় জাঁকজমকে এখনও কোনও রকম ভাটা পড়েনি । পরবর্তী প্রজন্ম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীনও হয়নি কারণ নফরচন্দ্র পাল ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি । তিনি অনুভব করেছিলেন বংশানুক্রমে বাড়িতে পুজো বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থার । তাই বাড়ির পুজো চালানোর জন্য বেশ কিছু সম্পত্তি কেনেন ও দলিলের মাধ্যমে তা নির্ধারিত করে দিয়ে যান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য । পালবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই গৃহদেবতা শ্রীধরজী-সহ দুর্গা, কালী ও লক্ষ্মীপুজোর সমস্ত ব্যয় বহন করা যায় । এভাবেই দ্বিশতবর্ষ ধরে বংশ পরম্পরায় সাবেকিয়ানায় উমা পূজিত হয়ে আসছেন এই পালবাড়িতে ।

বাড়ির নতুন প্রজন্মের মেয়ে শ্রেয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পুজো দেখছেন ৷ পুজোর সময় সকাল থেকে রাত অবধি রকমারি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় । পুজোর সময় বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার কথা তাই ভাবতেও পারেন না শ্রেয়া । বাড়ির পুজোর সঙ্গে যেন তাঁর আত্মার টান । করোনার প্রকোপে অনেক জায়গায় দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৷ তারপরও নিজের বাড়ির পুজো এক বছরের জন্যও বন্ধ হয়নি, ভাবলেই গর্ববোধ হয় বলে জানালেন শ্রেয়া ৷

আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন

হাওড়া, 15 সেপ্টেম্বর : গুটি গুটি পায়ে কেটে গিয়েছে প্রায় দু'শো বছর । হাওড়ার সাঁকরাইলের রাজগঞ্জে পালবাড়িতে মেয়ে উমা আসেন পুজো নিতে । প্রায় একশো নব্বই বছরের বেশি সময় ধরে এই বাড়িতে দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন মেয়ে উমা রূপে ।

এই বাড়ির প্রাণপুরুষ রাজা রাম পাল । তিনি হাওড়ার আন্দুলের রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন । ভাল কাজের জন্য রাজার থেকে ওই এলাকায় জমিদারি পান । সেই সময় রাজগঞ্জে গঙ্গার পাড়ে বাড়ি তৈরি করেন । কিন্তু হঠাৎ ভূমিকম্প এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গঙ্গার গ্রাসে তলিয়ে যায় সেই বাড়ি । এরপর 1857 সালের পর আবার তৈরি হয় বাড়ি এবং নাট মন্দির । দ্বিতীয়বার এই বাড়ি তৈরি হয় প্রায় একশো নব্বই বছর আগে । রাজা রাম পালের ছেলে রামধন পাল সেই বাড়ির অনতিদূরে তৈরি করেন নতুন জমিদার বাড়ি, সঙ্গে ঠাকুর দালান । নিজের ছেলের নামে তৈরি হওয়া বাড়ির নাম দেন ললিত লজ । সেই সময় থেকেই পালবাড়িতে দুর্গাপুজো দিয়ে মূর্তি পুজো শুরু হয়, যা আজও সমান ঐতিহ্য বহন করে আসছে ৷

রাম পালের দুই ছেলে আর দেওয়ানি করেননি । নফরচন্দ্র পাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে প্রথমে চাকরি ও পরে ইটের ব্যবসা শুরু করেন । এলাকার প্রচুর ইটভাটা তৈরি করে রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ইট সরবরাহ করতে শুরু করেন । এছাড়াও অন্যান্য বহু ব্যবসা করতে থাকেন । সেই সময় থেকেই পালেদের আর্থিক প্রতিপত্তি শুরু হয় । পালবাড়ির দুর্গাপুজোও জমজমাট হতে থাকে ৷

পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে । জন্মাষ্টমীর দিনে কাঠামো পুজোর মাধ্যমে এই বাড়িতে ঢাকে কাঠি পড়ে ৷ মহালয়া থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ । বাড়ির মহিলারা পুজোর সমস্ত কাজে হাত লাগান । অষ্টমীতে তৈরি হয় বিশেষ ভোগ, যা গোটা গ্রামের মানুষকে বিতরণ করা হয় । এই বাড়ির বিশেষত্ব হল, এই বাড়িতে অষ্টমীর দিনেই সিঁদুর খেলা হয় । এই রীতির প্রচলন হয় অতীতের এক অঘটনের কারণে । বাড়ির বড় ছেলে ললিতচন্দ্র পাল মাত্র 18 বছর বয়সে অষ্টমীর দিনেই মারা যান । তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সম্পন্ন করা হয় অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো ৷ তারপর মৃতদেহ সৎকার করা হয় ৷ সেই থেকে আজ অবধি পালবাড়িতে অষ্টমীর দিনেই চলে সিঁদুর খেলার প্রথা ৷

প্রায় দুশো বছর পরও সাঁকরাইলের পালবাড়ির দুর্গাপুজো চলছে বেশ জাঁকজমক করেই

এখানে মায়ের রূপ চিন্ময়ী ৷ একচালায় সপরিবারে মায়ের অধিষ্ঠান । দশমীতে বাড়ির ছেলে এবং গ্রামের ছেলেরাই মাকে কাঁধে করে বাড়ির সামনে গঙ্গায় নিরঞ্জন দেন । তবে পুজোর এই ক'টা দিন জাঁকজমক ও আত্মীয়-পরিজনের কোলাহলে গমগম করে ওঠে গোটা বাড়ি । দেশ-বিদেশ থেকে আসেন আত্মীয়রা । পালবাড়ির পুজোয় জাঁকজমকে এখনও কোনও রকম ভাটা পড়েনি । পরবর্তী প্রজন্ম আর্থিক সমস্যার সম্মুখীনও হয়নি কারণ নফরচন্দ্র পাল ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি । তিনি অনুভব করেছিলেন বংশানুক্রমে বাড়িতে পুজো বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থার । তাই বাড়ির পুজো চালানোর জন্য বেশ কিছু সম্পত্তি কেনেন ও দলিলের মাধ্যমে তা নির্ধারিত করে দিয়ে যান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য । পালবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই গৃহদেবতা শ্রীধরজী-সহ দুর্গা, কালী ও লক্ষ্মীপুজোর সমস্ত ব্যয় বহন করা যায় । এভাবেই দ্বিশতবর্ষ ধরে বংশ পরম্পরায় সাবেকিয়ানায় উমা পূজিত হয়ে আসছেন এই পালবাড়িতে ।

বাড়ির নতুন প্রজন্মের মেয়ে শ্রেয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পুজো দেখছেন ৷ পুজোর সময় সকাল থেকে রাত অবধি রকমারি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় । পুজোর সময় বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার কথা তাই ভাবতেও পারেন না শ্রেয়া । বাড়ির পুজোর সঙ্গে যেন তাঁর আত্মার টান । করোনার প্রকোপে অনেক জায়গায় দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৷ তারপরও নিজের বাড়ির পুজো এক বছরের জন্যও বন্ধ হয়নি, ভাবলেই গর্ববোধ হয় বলে জানালেন শ্রেয়া ৷

আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.