আসানসোল, 28 মে: রেলকর্মী নীলিমেষ মাজির বাড়ি চিত্তরঞ্জন ৷ 10 বছর হল বিয়ে হয়েছে ৷ বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব মাত্র 26 কিমি ৷ আগের বছরগুলিতে শ্বশুরবাড়িতে ধুমধাম করে জামাইষষ্ঠী পালন হলেও কোরোনার ভয়ে এই বছর আর বাড়ির বাইরে পা রাখতে চাইছেন না তিনি ৷ এদিকে শাশুড়ি চান প্রতিবছরের মতোই ঘটা করে জামাইষষ্ঠী করতে ৷ অগ্যতা ভরসা প্রযুক্তিই ৷
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বছর দশেক আগে বিয়ে হয় নীলিমেষবাবুর । বার্নপুরের রিভারসাইড অঞ্চলে শ্বশুরবাড়ি নীলিমেষের । শ্বশুর বৃন্দাবন মাজি অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং শাশুড়ি নমিতাদেবী গৃহবধূ । প্রতিবছরই জাঁকজমক করে জামাইষষ্ঠী পালিত হত শ্বশুরবাড়িতে । গত 10 বছর ধরে একমাত্র জামাইয়ের জন্য জামাইষষ্ঠীর আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখেন না বৃন্দাবনবাবু এবং নমিতাদেবী । কিন্তু, এইবছর দিন তিনেক আগেই চিত্তরঞ্জনে এক কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে । তারপর থেকে চিত্তরঞ্জন শহরকে কার্যত সিল করে দেওয়া হয়েছে । বাইরে থেকে যেমন কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না শহরে, তেমনই বেরোনোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । ফলে নীলিমেষের শ্বশুরবাড়ি আসা হয়নি এই বছর ৷
তবে মায়ের শখ পূরণে ও প্রিয়াঙ্কার ইচ্ছাতে এবারও হচ্ছে জামাইষষ্ঠী ৷ সামনাসামনি নয়, ডিজিটাল স্ক্রিনে জামাইয়ের কপালে ফোঁটা দিলেন শাশুড়ি নমিতাদেবী । ল্যাপটপে স্কাইপ করে জামাইকে জামাইষষ্ঠীর ফোঁটা দিলেন ৷ ধান দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ থেকে শুরু করে প্রদীপের আরতি কিংবা পাখার বাতাস করা-সব নিয়মরীতি মেনেই পালিত হল ।
জামাইও ল্যাপটপের ভিতর থেকেই প্রণাম করলেন শ্বশুর-শাশুড়িকে । এমন অভিজ্ঞতা জীবনে প্রথমবার বলে জানালেন শাশুড়ি নমিতাদেবী ।
তিনি জানান ‘‘মেয়ের 10 বছর বিয়ে হয়েছে । এই প্রথমবার এমনভাবে জামাইষষ্ঠী পালন করলাম । এই যে প্রদীপের আলো এবং পাখার বাতাস করলাম, তাতে কামনা করছি পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যেন সুস্থ হয়ে ওঠে এবং এই কোরোনা দূর হয়ে যায়। ’’
বৃন্দাবনবাবু জানালেন, ‘‘ এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম । তবে বেশ ভালো লাগলো ।’’
টেলিফোনের মাধ্যমে নিলিমেশ এবং প্রিয়াঙ্কাও জানিয়েছেন, ‘‘এমন ভাবে প্রথমবার জামাইষষ্ঠী পালন করা হলেও আগামী দিনে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে এই উৎসব এবং আনন্দ নিশ্চয়ই তারা করবেন । তবে শহর সুস্থ হোক আগে । তারপর হবে আনন্দ ৷’’