হায়দরাবাদ, 2 জুলাই: অনেকেই মনে করেন যে আয়কর রিটার্ন খুব কঠিন কাজ । ফলে তা করতে গিয়ে ঘাবড়ে যান । আগে এটি বরং জটিল প্রক্রিয়া ছিল ৷ কিন্তু এখন পুরো বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে করদাতাদের জন্য ৷ রিটার্ন দাখিল করা সহজতর করতে আয়কর বিভাগ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে । একটু সচেতন হলে যে কেউ এখন নিজেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন । তার জন্য যা যা করতে হবে জেনে নিন ৷
- ফর্ম-16 গুরুত্বপূর্ণ
প্রথমত, সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে । দ্বিতীয়ত, আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য ফর্ম-16 সবচেয়ে প্রয়োজন । এর মধ্যে রয়েছে আপনার আয়, যোগ্য কর্তন, বিনিয়োগ ইত্যাদি । আপনার গত বছরের বেতনের প্রমাণ, ফর্ম 26এএস আপনার কাছে রাখুন । এগুলি আপনাকে আপনার মোট আয় সঠিকভাবে গণনা করতে সহায়তা করবে । নিয়োগকারী সংস্থা বা কোম্পানি আপনাকে ফর্ম 16 দেবে । এটি গত অর্থ বছরে আপনার অর্জিত আয়ের প্রমাণ । আপনি ভবিষ্যতে যখনই ধার বা লোন নিতে যাবেন তখনই এটি কাজে আসবে ।
আপনার বেতন ছাড়া অন্য আয় ফর্ম 16এ'তে রয়েছে । আপনি যে কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করেন তারা এটি দেবে । আপনার মোট আয়ের উপর কত কর কাটা হয়েছে তার বিশদ বিবরণ ফর্ম 26এএস-এ জানা যাবে । আপনি যদি ই-ফাইলিং ওয়েবসাইটে যান এবং ফর্ম 26এএস ডাউনলোড করেন, আপনি আপনার মোট আয় এবং প্রযোজ্য করের বিবরণ জানতে পারবেন । স্ল্যাবগুলি বুঝুন । তারপর আপনার জন্য প্রযোজ্য আয়কর স্ল্যাব সম্পর্কে জানুন ।
আরও পড়ুন: করের হিসেবে সাহায্য করবে নতুন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর
- কর ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন
আপনার আয় কোন কলামে পড়ে তা নির্ধারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ । বর্তমানে আমাদের দেশে দুই ধরনের কর ব্যবস্থা রয়েছে । পুরানো আয়করের অধীনে অনুমোদিত ছাড় পাওয়া যায় । নতুন কর ব্যবস্থায় কোনো ছাড় নেই ৷ তা ছাড়াই প্রযোজ্য স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হয় । প্রথমে জেনে নিন কোনটি আপনার জন্য উপকারী । এর জন্য একটি ক্যালকুলেটর আয়কর পোর্টালে উপলব্ধ । সেখানে সবটা হিসাব করে নিন ৷
- ধারা 80সি কী ?
ছাড়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইনে অনুমোদিত প্রধান ছাড় হল ধারা 80সি । ইপিএফ, ভিপিএফ, পিপিএফ, বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ এবং খরচ যেমন জীবন বিমা প্রিমিয়াম, ইএলএসএস, হোম লোন প্রিন্সিপাল, বাচ্চাদের টিউশন ফি এই বিভাগের অধীনে পরে । ভুলে যাবেন না যে এই সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ করের সীমা মাত্র 1 লক্ষ 50 হাজার টাকা । স্বাস্থ্য বিমা পলিসির জন্য প্রদত্ত প্রিমিয়াম ধারা 80ডি-এর অধীনে দাবি করা যেতে পারে ।
এনপিএস-এ দেওয়া প্রায় 50 হাজার টাকা ধারা 80সিসিডি (1বি) এর অধীনে করমুক্ত । অনুদান বা ডোনেশন ধারা 80জি এর অধীনে দাবি করা যেতে পারে । করের বোঝা কমানোর জন্য ছাড় পাওয়া যেতে পারে । শুধুমাত্র 31 মার্চ 2023 পর্যন্ত করা বিনিয়োগগুলিতেই ছাড়ের জন্য দাবি করা যেতে পারে । টিডিএস কত? আপনাকে নিয়োগকারী সংস্থার দেওয়া ফর্ম 16-এর সঙ্গে আপনার ফর্ম 26এএস-এর তথ্যের তুলনা করুন । উৎসে কর দেওয়ার পরিমাণ (TDS) দুবার চেক করুন ।
আরও পড়ুন: অর্থবর্ষ শেষের আগে ভেবেচিন্তে করুন কর সঞ্চয় পরিকল্পনা
- প্রতারকদের থেকে সাবধান
হিসাবে কোনো অমিল না থাকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে । যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে তাহলে তা অবিলম্বে আপনার কোম্পানির নজরে আনুন এবং সংশোধনের জন্য বলুন । আইটি বিভাগ সবাইকে গাইড করার জন্য ভিডিয়ো এবং চ্যাটবট উপলব্ধ করেছে । এখন কিছু কোম্পানি অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল করতে সাহায্য করছে । কিছু লোক আপনার সমস্ত আর্থিক বিবরণ নেয় এবং অপব্যবহার করে ৷ ফলে প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে । এই ধরনের লোকদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন ।
আগের আর্থিক বছরের 2022-23 (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার 2023-24) এর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ হল 31 জুলাই ৷ এই তারিখের আগে রিটার্ন জমা দেওয়া ভালো ৷ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই ঝামেলা বাড়বে । যদি নির্ধারিত তারিখের পরে রিটার্ন জমা দিতে হয়, তাহলে আয়ের উপর নির্ভর করে 1 থেকে 5 হাজার টাকা পর্যন্ত একটি অপরাধমূলক ফি প্রযোজ্য । সঠিক নথিতে আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে সঠিক রিটার্ন ফর্ম নির্বাচন করতে হবে ।
আরও পড়ুন: করের বোঝা কমানোর পরিকল্পনা করছেন? জেনে নিন সুবিধা-অসুবিধা
- কোন ফর্ম বেছে নেবেন ?
বেতন, পারিবারিক আয়, সুদ ইত্যাদি-সহ যাদের আয় 50 লক্ষ টাকার কম তাদের সকলের জন্য আইটিআর-1 ফর্ম প্রযোজ্য ৷ যাদের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভ রয়েছে তাদের আইটিআর-2 ফর্ম বেছে নেওয়া উচিত ৷ আপনার জন্য প্রযোজ্য ফর্মের বিশদ বিবরণ আয়কর পোর্টালে পেয়ে যাবেন । নতুন রিটার্ন দাখিলকারীদের প্রথমে প্যান কার্ডের উপর ভিত্তি করে আয়কর পোর্টালে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে । এ সময় ই-মেইল, ফোন নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং ঠিকানা দিতে হবে । তবেই আপনি রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন ।