একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে চিহ্নিত করা:
তিন মাস থেকে এক বছর বয়সের শিশু ও রোগের লক্ষণ:
1. অলস
2. খিটখিটে
3. ঘুমোতে না পারা
4. খেতে না পারা
5. ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
6. পেট ফুলে যাওয়া
7. পরিবারে আগে কোনও শিশুর থ্যালাসেমিয়া হওয়া
8. মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়া
9. ওজন না বৃদ্ধি পাওয়া
থ্যালাসেমিয়া বলে সন্দেহ হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে বিষয়টি অনুসন্ধান করা
রক্তাল্পতার পরীক্ষা কি রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয় করতে দ্রুত সুবিধা করে ?
হ্যাঁ । এটা হয় । রক্তাল্পতা নির্ণয়ের পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় যে কে থ্যালাসেমিয়া বাহক । রক্তের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হিমোগ্লোবিনের স্তর 9 থেকে 12 গ্রাম শতাংশের মধ্যে থাকে । MCV, MCH ও RDW – এর মতো হেমোগ্রাম সংক্রান্ত অন্যান্য প্যারামিটারগুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হয় ।
চিকিৎসা
থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রতি 2-3 সপ্তাহে একবার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে । এই প্রক্রিয়া সারা জীবন ধরে চলে । রক্ত দেওয়ার আগে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ 9 গ্রাম শতাংশ থাকতে হবে । 10 থেকে 15 টি রক্ত নেওয়া বা সেরাম ফেরিটিন 1000 ng/ml এর বেশি হয়ে যাওয়ার পর আয়রন সংক্রান্ত ওষুধ খেতে হবে রোজ ।
সতর্ক হওয়া জরুরি :
থ্যালাসেমিয়া একটি রক্ত সংক্রান্ত রোগ যা বংশ পরম্পরায় হয় ।
বিভিন্ন ধরনের থ্যালেসেমিয়া রোগ হল :
1. থ্যালাসেমিয়া মেজর: নিয়মিত রক্ত দেওয়া এবং সারা জীবন আয়রন সংক্রান্ত ওষুধ দেওয়া ।
2. মধ্যবর্তী থ্যালাসেমিয়া: এটা সাধারণত দুই বছর বয়সে ধরা পড়ে । এই ধরনের রোগীদের নজরে রাখতে হয় । আর প্রয়োজন পড়লে রক্ত দিতে হয় ।
3. থ্যালাসেমিয়া মাইনর: আমাদের জনসংখ্যার ৪-৫ শতাংশ এই ধরনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক । এই ধরনের রোগীদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হয় ৯-১২ গ্রাম শতাংশ ।
জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ আটকানো যেতে পারে । বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া (HbA2) পরীক্ষা করে নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে । যদি কারও HbA2 পরিমাণ 3.5 গ্রাম শতাংশের বেশি থাকে, তাহলে তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক । তাই তাঁর কোনও থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করা উচিত নয় । যদি আমরা বিয়ে আটকাতে পারি, তাহলে থ্যালাসেমিয়া মেজর শিশুর জন্মও আটকানো সম্ভব হবে ।
যে কোনও মানুষ, যাঁর বয়স 18-60 বছরের মধ্যে, ওজন 45 কিলোগ্রামের বেশি, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ 13.5 gm/dl এর বেশি, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের মতো কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা নেই, তাঁরা অনায়াসে চার মাস অন্তর একবার রক্তদান করতে পারেন । রক্তের সংকট সব সময় হয় । আর থ্যালাসেমিয়া রোগীরা রক্ত না নিলে বাঁচতে পারে না ।
খাবার সংক্রান্ত কোনও অদল বদল প্রয়োজন কি ?
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রোজ খাওয়া উচিত নয় । সাধারণ খাওয়া দাওয়া করার পরামর্শই দেওয়া হয় ।
থ্যালাসেমিয়া অ্যান্ড সিকেল সেল সোসাইটি সম্পর্কে
সেই সমস্ত ভারতীয়, যাঁরা হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিতে ভুগছেন, তাঁদের সেরা চিকিৎসা ও ভালো মানের জীবন দেওয়ার জন্য এই সোসাইটি কাজ করে । এটা হায়দরাবাদে অবস্থিত । যাঁরা গত ২২ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত, আমরা তাঁদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি ।
TCSC সমস্ত থ্যালাসেমিয়া ও সিকেল সেল অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়, রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে । রোগী, রোগীর বাবা, মা এবং আত্মীয়দের কাউন্সেলিং করা হয় । যাতে তাঁরা তাঁদের মধ্যে এই রক্ত সংক্রান্ত রোগের বিষয়ে আরও ভালো ভাবে জানতে পারেন ।
আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
রোগীদের জীবনযাপনের এবং চিকিৎসার মান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ।
প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিকে আরও বেশি করে প্রচারে নিয়ে আসা যাতে জন্মের সময় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের সংখ্যাকে আরও কমানো যায় ।
সাম্প্রতিক তম এবং সহজলভ্য চিকিৎসার জন্য গবেষণার বিষয়টিকে আরও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা ।
একেবারে প্রান্তিক অংশে পৌঁছে যাওয়া যাতে সেখানে বিনামূল্যে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় । ওষুধ দেওয়া যায় এবং কাউন্সেলিং করা যায় ।
রোগীদের সুরক্ষিত বা ভালো মানের রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়া ।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (BMT) আগে ও পরে কাউন্সেলিং বা ব্যবস্থাপনার বন্দোবস্ত করে দেওয়া ।
কাউন্সেলিংয়ের ভূমিকা
প্রাথমিক ভাবে বাবা ও মায়ের কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয় । কারণ, শিশুর সমস্যা, এই সমস্যার কারণ, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানাতে হয় । শিশুর রোগ নির্ণয়ের বিষয়টিকে আগে তাঁদের গ্রহণ করতে হয় । তার পর শিশুর খেয়াল রাখার বিষয়টি আসে । কাউন্সেলিং না হলে তাঁদের আবার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় । সেটা আটকাতে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান (বাবা ও মায়ের পরীক্ষা করা) ও নিয়ম মানতে হয় । আমরা মা ও বাবাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করার বিষয়ে উৎসাহ দিই । যাতে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা অন্যদের বলতে পারেন ( যখন তাঁরা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের সমাজে প্রবেশ করেন) । এবং অন্যদের মানসিক শক্তি দেওয়া । থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের ১২ বছর বয়সের পর কাউন্সেলিং দরকার হয় । কারণ, তাঁদের কিছু সমস্যা সম্পর্কে অবগত করতে হয় । এর জন্য কাউন্সেলিংয়ের টিমে অনেক ধরনের বিশেষজ্ঞকে রাখা হয় । তাঁদের মধ্যে থাকেন সাইকিয়াট্রিস্ট, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, পেডিয়াট্রিশিয়ন ইত্যাদি । বেঁচে থাকার বয়স যত বৃদ্ধি পায়, তখন মহিলা রোগীদের গায়নোকোলজিস্ট ও ওবস্টেট্রিসিয়ানদের মাধ্যমেও পরামর্শ দেওয়া হয় ।
কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিশেষত ওষুধ এবং কেরিয়ার সম্পর্কিত কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়া উচিত ।
তথ্য নেওয়া হয়েছে হায়দরাবাদের রঙ্গারেড্ডি জেলার বাসিন্দা ও থ্যালাসেমিয়া অ্যান্ড সিকেল সোসাইটির CEO চিকিৎসক সুমন জৈনের কাছ থেকে ।
ডাঃ সুমন জৈন
MBBS, DCH
CEO, থ্যালাসেমিয়া অ্যান্ড সিকেল সোসাইটি (নথিভুক্ত NGO – Reg. No: 5359)
ভুপ্পালা ভেঙ্কাইয়া মেমোরিয়াল ব্লাড ব্যাঙ্ক (TSCSVVM ব্লাড ব্যাঙ্ক)
রাঘবেন্দ্র কলোনি, রাজেন্দ্র নগর, রঙ্গরেড্ডি জেলা, হায়দরাবাদ
040- 29885658, 29880731, সময়: সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টে
ড. জৈন থ্যালাসেমিয়া অ্যান্ড সিকেল সোসাইটির চিফ মেডিক্যাল রিসার্চ অফিসার ও সম্পাদক ।