অশোকনগর, 14 এপ্রিল : "বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার কলেজের জন্য ২০ লাখ টাকা ব্যায় করে মেয়েদের জন্য কমনরুম বানিয়ে দিয়েছেন। অনেক উন্নয়ন করেছেন। আমরা তোদের সমস্যায় সব সময় পাশে থাকি। তাই রাফেল দুর্নীতির নায়ক চৌকিদারকে হারাতে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরকে ভোট দিয়ে জেতাতে হবে। ভোটের দিন সকাল সকাল তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দিয়ে দিবি।" গতকাল কলেজে পরীক্ষা হলে ঢুকে এভাবেই তৃণমূলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালালেন অশোকনগরের যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সিং। ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থানার নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের। সামনে এসেছে ঘটনার ভিডিয়ো। তৃণমূলের এই প্রচার নিয়ে সরব নিয়েছে বিরোধীরা।
গতকাল কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের দ্বিতীয় সেমেস্টারের ফিজ়িক্যাল এডুকেশন পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীনই কলেজে ঢুকে পড়েন তৃণমূলের ওই যুবনেতা। সঙ্গে ছিল তাঁর দলবলও। দলবল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে প্রচার চালান তিনি। পরীক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, এতে তাদের অসুবিধা হয়েছে। মনসংযোগ নষ্ট হয়েছে। তবে কলেজে উপস্থিত ছিলেন না অধ্যক্ষ সুধানাথ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনায় তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বহিরাগত হয়েও পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রে ঢুকে প্রচার চালাচ্ছিলেন প্রদীপ। তবে তা নিয়ে অনুতপ্ত নন তিনি। জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ভালোবাসে। তাই তাঁদের অনুরোধেই তিনি কলেজে প্রচার চালাতে যান। তাঁর কথায়, "পরীক্ষা শেষের পাঁচ মিনিট বাকি ছিল। কাকলি ঘোষ দস্তিদার অনেক কাজ করেছেন। তাই পরীক্ষা শেষের আগে প্রচার করতে গেছিলাম।"
কলেজের এক পড়ুয়ার বক্তব্য, "পরীক্ষার শেষের দিকে ভোট প্রচারে আসেন যুব তৃণমূলের ওই কর্মী-সমর্থকরা। কাকলি ঘোষ দস্তিদারকেই ভোট দিতে বলেন তাঁরা। কলেজ এই ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।"
ঘটনার কথা কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ওই কলেজেরই এক অধ্যাপিকা পাপড়ি চক্রবর্তী। পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, "ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অফিস থেকে বা অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকেও কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সত্যাসত্য বিচার করা হবে।" অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে কলেজের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক অনিন্দ্য দে। তাঁকে এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
ঘটনার নিন্দা করেছেন BJP-র বারাসত মহিলা মোর্চা সভানেত্রী ভাস্বতী সোম। তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের এই মুহূর্তে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা বন্ধ করে ভোটের প্রচার চালাতে হচ্ছে। এরকম ঘটনা এর আগে কখনও হয়নি। এটা তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব। আমরা মনে করি এই ঘটনা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করেছে। আমরা ইলেকশন কমিশনে জানাব।"
ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন CPI(M)-এর হাবরা এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরি। তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের মন ভরছে না। তাই তারা এখন কলেজে গিয়ে রাজনীতির প্রচার চালাচ্ছে। তৃণমূল সরকার নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বিধিমালা মানছে না। কেউ গুড়-বাতাসা দিয়ে, কেউ বোমা দিয়ে, এবার কলেজে গিয়ে তৃণমূল জায়গা ধরে রাখতে মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে।"