সন্দেশখালি, 6 জানুয়ারি: সরকারি নির্দেশকে অমান্য করে নদীর বুক থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটার অভিযোগ । লুকিয়ে চুরিয়ে নয় ! প্রকাশ্যে নদীর পাড়ে রীতিমতো জেসিবি নামিয়ে চলছে মাটি পাচার । সেই মাটি দিয়েই জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালির এই ঘটনায় কার্যত শোরগোল ফেলে দিয়েছে এলাকায় ।
তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন কী করছে ! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরর নির্দেশ থাকার পরেও কীভাবে বেআইনিভাবে এই মাটি পাচার চলছে ? এরইসঙ্গে মাটি পাচার-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে সন্দেশখালি ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ।
অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে তাঁর অনুগামীরা বেআইনিভাবে এই মাটি পাচার করে চলেছেন দিনের পর দিন । ফলে, এর সঙ্গে শাসকদলের নেতাদের যোগ থাকায় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । যদিও, বিষয়টি জানতে পেরে সরব হয়েছে তৃণমূলেরই অপর গোষ্ঠী । তাঁরা এই ঘটনায় ব্লক নেতৃত্বের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে । জেলা প্রশাসন অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভায় বারবার বার্তা দিয়ে বলেছেন, নদীর বুক থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটা অথবা বালি তোলা যাবে না । সেই বেআইনি কাজ রুখতে পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশও দিয়েছেন তিনি । কিন্তু এর ঠিক উলটো ছবি সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের মিলন বাজার এলাকায় । কার্যত এখানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীর বুক থেকে বেআইনিভাবে মাটি কেটে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের কোড়াকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জেকে মিলন বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বালি নদী । সেই নদীর বুকে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে বেআইনিভাবে মাটি কাটা । দিনের আলোয় নদীর পাড়ে জেসিবি মেশিন নামিয়ে মাটি কেটে তা পাচার করে দেওয়া হচ্ছে পাশের একটি জলাভূমি ভরাট করতে । অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগেই চলছে বেআইনি এই কাজ ।
যার ফলে, সব জেনেও চোখ বুজে বসে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ৷ এমনটাই অভিযোগ শাসকদলের অপর গোষ্ঠীর নেতাদের । তাঁদের কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালিতে এসেও জলাভূমি ভরাট এবং বেআইনি মাটি পাচার রুখতে কড়া দাওয়াই দিয়ে গিয়েছেন । তারপরও ব্লক সভাপতি দিলীপ মল্লিক, কোড়াকাটি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিখিলেশ গায়েন ও তাঁর এক অনুগামী নদীর চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে পাচার করে দিচ্ছেন । এটা খুবই নিন্দনীয় । এতে নদীর স্বাভাবিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ।"
এই বিষয়ে মণিপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি রবীন দাস বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটি পাচার ও জলাভূমি ভরাট রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছেন ঠিকই । কিন্তু, তারপরও আমরা দেখতে পাচ্ছি, নদীর চর থেকে বেআইনিভাবে মাটি কেটে তা বিক্রি করে দিচ্ছে দলেরই একাংশ । সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের সভাপতি দিলীপ মল্লিক, তাঁর দুই পেটোয়া নেতা নিখিলেশ গায়েন, প্রভাস দাস মিলে এই বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত । অবিলম্বে এই বেআইনি কাজ বন্ধ হোক, সেটাই চাই আমরা । এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন ।"
একই সুর শোনা গিয়েছে স্থানীয় ব্লক তৃণমূল নেতা সিদাম হাওলির কথাতেও । তাঁর কথায়, "শুধু কোড়াকাটি নয় । মণিপুর এবং দুর্গামণ্ডপ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও নদীর চর থেকে মাটি কেটে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে । এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা । কোড়াকাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বিষয়টি জানিয়েছেন ডিএম ও বিডিও-কে । তারপরও যে কে সেই !"
এদিকে, যাঁর বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সেই কোড়াকাটি অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি নিখিলেশ গায়েন অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । এই বিষয়ে ফোনে তিনি বলেন, "সরকারি নির্দেশ আমরা যথাযথভাবে পালন করি । নির্দেশ অমান্য করার প্রশ্নই আসে না । নদীর চর থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার দায় তৃণমূলের নয় । ওই কাজ স্থানীয় হরিসভা সমিতি এবং বাজার কমিটি, দু'জনে মিলে করছিল । দলের ব্লক সভাপতি দিলীপ মল্লিক বিষয়টি জানার পর বেআইনি এই কাজ বন্ধ করতে আমাদের নির্দেশ দেন । সেই মতো আমরা বেআইনি মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি । তার প্রমাণও রয়েছে আমাদের কাছে ।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে । নদীর বুকে বেআইনিভাবে মাটি কাটার কাজ বরদাস্ত করা হবে না । যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে ।"