নয়াদিল্লি, 25 ডিসেম্বর: ঘুরপথে আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশে কুস্তির নিয়ামক সংস্থার সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক এনে দেওয়া কুস্তিগীররা। ভোটে জয়ী হন প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের কাছের লোক বলে পরিচিত সঞ্জয় সিং। এই কমিটিকেই ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, কুস্তি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে দ্রুত অ্যাড-হক কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছে অনুরাগ ঠাকুরের ক্রীড়া মন্ত্রক। এমন তৎপরতার নেপথ্যে জাট ভোট নিজেদের দখলে রাখার তাগিদ দেখছে রাজনৈতিক মহল।
অতীতে এই ব্রিজভূষণকে ঘিরেই সমস্ত বিতর্কের সূত্রপাত হয়। অভিযোগ ওঠে মহিলা কুস্তিগীরদের শারীরিক নির্যাতন করেছেন বিজেপির এই বাহুবলী সাংসদ। তাঁকে অপসারণ এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে দিল্লিতে দীর্ঘদিন আন্দোলনও করেন সাক্ষী মালিক থেকে শুরু করে বজরং পুনিয়ার মতো তারকা কুস্তিগীররা। তখন কেন্দ্রীয় সরকার তেমন একটা উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি বিভিন্ন মহলের। এবার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। এবার তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে নব্যনির্বাচিত কমিটিকে বরখাস্ত করল মোদি সরকার।
বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। উত্তর ভারতের দিল্লি থেকে শুরু করে হরিয়ানা এবং রাজস্থানের কমবেশি 40টি লোকসভা আসনে সরাসরি প্রভাব রয়েছে জাট সম্প্রদায়ের। ঘটনাচক্রে দেশের খ্যাতনামা কুস্তিগীরদের সিংহভাগই এই সম্প্রদায়ের। আর তাই নির্বাচনের অব্যবহিত আগে জাট সম্প্রদায়কে কাছে টানতেই মোদি সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সরকারি উদ্যোগে কাজও হয়েছে হাতেনাতে। কুস্তি সংগঠনের নির্বাচনের পর খেলা ছেডে় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সাক্ষী মালিক। পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেন বজরং পুনিয়া। এবার মোদি সরকার সক্রিয় হওয়ার পর নাকি ফিরিয়ে দেওয়া পদ আবারও ফিরে পাওয়ার কথা ভাবছেন বজরং।
ভোট বড় বালাই! ভারতের মতো বহু ধর্ম,বহু জাতি এবং বহু ভাষার দেশে ভোট-সমীকরণের অভিঘাত অনেক বেশি। ভোট-অঙ্কে গত কয়েক দশক ধরে জাতিসত্তার রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে আসছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একটু গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করলে মোদি সরকারের তৎপরতার নেপথ্যে জাট সম্প্রদায়কে কাছে টানার অঙ্ক বুঝতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ভারতে ফল ভালো হয়নি বিজেপি। কর্ণাটকে হারতে হয়েছে। তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে কেরলে দাঁত ফোটাতেও পারেনি বিজেপি। পূর্ব ভারত তথা দেশের অন্যতম বড় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির আশা পূরণ হয়নি এখনও। ঠিক উলটো উত্তর ভারতের পরিস্থিতি। বিজেপির মৃগয়াভূমি হয়ে থেকেছে দেশের হিন্দি বলয়। 2014 এবং 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কার্যত দু'হাত তুলে সমর্থন করেছে উত্তর ভারতের একাধিক ছোট-বড় রাজ্য।
উত্তর প্রদেশ খেকে শুরু করে হরিয়ানা এবং রাজস্থানে বিজেপি তাক লাগানো ফল করেছে। একই অবস্থা রাজধানী দিল্লির। পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনই জিতেছে বিজেপি । অথচ এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে কিন্তু ক্ষমতায় নেই বিজেপি। 2013 সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন যে কেজরি-ম্যাজিক প্রথমবার দেখেছিল তা আজও বহাল। বলা যেতে পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আম আদমি পার্টি আরও শক্তি বাড়িয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু সেই দাপট সীমাবদ্ধ থেকেছে শুধুই বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত। এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপি উত্তর ভারতে নিজেদের জমি একফোঁটাও ছাড়তে রাজি হবে না সেটাই স্বাভাবিক। আর সেদিক থেকে কুস্তি সংগঠনের নব্যনির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেওয়ার নেপথ্যে রাজনীতির মারপ্যাঁচ না-থাকাটাই অস্বাভাবিক বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
আরও পড়ুন: