ETV Bharat / bharat

Women's Reservation Bill: 'মহিলা সংরক্ষণ বিল আমাদের', কেন বললেন সোনিয়া গান্ধি! - প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি

নতুন সংসদ ভবনে প্রথম লোকসভা অধিবেশনে মোদির বাজিমাত । পেশ হয়ে গেল বহু প্রতিক্ষিত মহিলা সংরক্ষণ বিল। কংগ্রেসের দাবি, এই বিলের কৃতিত্ব তাদেরই । সোনিয়া গান্ধি তো জানিয়েই দিলেন, এই বিল নাকি তাঁদের। সত্যিই কি মহিলা সংরক্ষণ বিলের কৃতিত্ব কংগ্রেসের...৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 19, 2023, 6:41 PM IST

Updated : Sep 19, 2023, 11:00 PM IST

নয়াদিল্লি, 19 সেপ্টেম্বর: 'মঙ্গল দিন'। তখনও নয়া সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু হয়নি ৷ পুরনো সংসদ ভবনে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে একে একে যোগ দিচ্ছেন বিশিষ্টরা । হঠাৎ সোনিয়া গান্ধির দিকে প্রশ্ন এল 'মহিলা সংরক্ষণ বিল' নিয়ে । নেত্রী বলে উঠলেন, "এই বিল তো আমাদের, নতুন করে তো কিছু বলার নেই"। এখানেই শেষ নয়, লোকসভায় 'মহিলা সংরক্ষণ বিল' পেশ করে যখন লোকসভা ভোটের আগে 'কার্যকরী তাস' খেলে ফেললেন মোদি, তখনও কংগ্রেস এই বিল পেশকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করছে। এখন প্রশ্ন, কেন এমনটা দাবি করছে কংগ্রেস ? মহিলা সংরক্ষণ বিলে তাদের কৃতিত্বটাই বা কি?

রাজনৈতিক মহলে যখন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন চোখ রাখা যাক মহিলা সংরক্ষণ বিলের অতীত ইতিহাসে ৷ কারণ, দেশের আইনসভা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক নতুন নয়। যার সূত্রপাত সত্তরের দশকের ভারতে, কংগ্রেস জমানায়। অন্তত তথ্য এমনই বলছে।

আরও পড়ুন: ভারত নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত, মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

সালটা 1971, রাষ্ট্রসংঘের অনুরোধে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার মহিলাদের সামাজিক মর্যদা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করেছিল। রিপোর্টে বেশ কয়েকটি হতাশাজনক তথ্য উঠে আসে। বিশেষ করে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি প্রকট হয়। এমনকী, রিপোর্টে বলা হয়, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে দেশ। এরপরই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি ওঠে। এমনকী আঞ্চলিক স্তরে সেই কাজ শুরুও হয়। তবে জাতীয় স্তরে মহিলা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে যিনি সামনে আনেন, তিনি দেশের প্রাক্তন ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি । ঠিক কী করেছিলেন তিনি...

  • 1987 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মার্গারেট আলভারের নেতৃত্বে 14 জনের একটি কমিটি তৈরি করেন ৷
  • ওই কমিটির প্রায় 353টি সুপারিশের মধ্যে অন্যতম নির্বাচনে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ, বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে ৷
  • 1992 সালে রাজীব গান্ধি নির্মিত কমিটির সুপারিশ মেনেই সংবিধানের 73 ও 74 তম সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ৷
  • সংবিধানের সেই সংশোধনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলাদের জন্য বাধ্যতামমূলকভাবে 33 শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়েছিল ৷

মহিলা সংরক্ষণের যে ব্যাটন রাজীব গান্ধি ধরলেন, নরিসমা রাও সেই ব্যাটনের পূর্ণ মর্যাদা দিলেন। কারণ, নরসিমা জমানার ভারতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে করা এই পদক্ষেপ এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা । শেষ যদিও এখানেও নয়।

  • 1996 সালে প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া আইনসভায় প্রথম মহিলা সংরক্ষণ বিলকে স্বীকৃতি দেন ৷
  • ঐতিহাসিক সেই দিন, যেদিন আইনসভায় মহিলাদের 33 শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য প্রথম বিল পেশ করল দেবেগৌড়া সরকার ৷
  • সংবিধানের 81তম সংশোধনের প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি স্বীকৃত করতে চান, কিন্তু তা বাধাপ্রাপ্ত হয় ৷

জাতীয় সংসদের অধিকাংশ বিল সমর্থন করলেও সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো রাজনৈতিক দলগুলি বিলের বিরোধিতা করে। এক কঠিন পরিস্থিতি। কারণ, কংগ্রেসের বিপুল সমর্থন পেয়ে দেবেগৌড়ার পরিচালিত ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের আসনে থাকলেও, আঞ্চলিক দলগুলিকে এড়িয়ে বিল পাশ করতে পারেননি দেবেগৌড়া। বিলটি চলে যায় সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে। থমকে যায় বিল পাশের বিষয়টি। 2010 সালে মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হলেও, লোকসভায় অধরাই থাকে ৷

আরও পড়ুন: মুলতুবি লোকসভা, সর্বসম্মতিতে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশে সাংসদদের কাছে আর্জি মোদির

1971 থেকে 2023, নতুন সংসদ ভবনে লোকসভা অধিবেশনের প্রথম দিনেই মোদির বাজিমাত । মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেই কৃতিত্বের লড়াই। বিজেপি বনাম কংগ্রেস । যেখানে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, "মহিলা সংরক্ষণ বিলের বীজ বপন করেছিলেন রাজীব গান্ধি, রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয় মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে, সোনিয়া গান্ধিও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন এই বিল নিয়েই।" যদিও তীক্ষ্ণ বাণেই অধীরকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করেন অমিত শাহ। তিনি বললেন, "অধীর চৌধুরীর তথ্য সঠিক নয়। পুরনো মহিলা সংরক্ষণ বিলের মেয়াদ অনেকদিন আগেই শেষ হয়, নতুন মহিলা সংরক্ষণ বিল লোকসভায় পাশ কোনও দিনও হয়নি।"

যদিও সোনিয়া গান্ধির কথা ধরেই রাজনৈতিক মহলের দাবি, কংগ্রেসের হাত ধরেই মহিলা সংরক্ষণ বিল, তাই কৃতিত্বটা রাজীব গান্ধির।

নয়াদিল্লি, 19 সেপ্টেম্বর: 'মঙ্গল দিন'। তখনও নয়া সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু হয়নি ৷ পুরনো সংসদ ভবনে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে একে একে যোগ দিচ্ছেন বিশিষ্টরা । হঠাৎ সোনিয়া গান্ধির দিকে প্রশ্ন এল 'মহিলা সংরক্ষণ বিল' নিয়ে । নেত্রী বলে উঠলেন, "এই বিল তো আমাদের, নতুন করে তো কিছু বলার নেই"। এখানেই শেষ নয়, লোকসভায় 'মহিলা সংরক্ষণ বিল' পেশ করে যখন লোকসভা ভোটের আগে 'কার্যকরী তাস' খেলে ফেললেন মোদি, তখনও কংগ্রেস এই বিল পেশকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করছে। এখন প্রশ্ন, কেন এমনটা দাবি করছে কংগ্রেস ? মহিলা সংরক্ষণ বিলে তাদের কৃতিত্বটাই বা কি?

রাজনৈতিক মহলে যখন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন চোখ রাখা যাক মহিলা সংরক্ষণ বিলের অতীত ইতিহাসে ৷ কারণ, দেশের আইনসভা ও বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক নতুন নয়। যার সূত্রপাত সত্তরের দশকের ভারতে, কংগ্রেস জমানায়। অন্তত তথ্য এমনই বলছে।

আরও পড়ুন: ভারত নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত, মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

সালটা 1971, রাষ্ট্রসংঘের অনুরোধে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার মহিলাদের সামাজিক মর্যদা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করেছিল। রিপোর্টে বেশ কয়েকটি হতাশাজনক তথ্য উঠে আসে। বিশেষ করে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি প্রকট হয়। এমনকী, রিপোর্টে বলা হয়, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে দেশ। এরপরই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি ওঠে। এমনকী আঞ্চলিক স্তরে সেই কাজ শুরুও হয়। তবে জাতীয় স্তরে মহিলা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে যিনি সামনে আনেন, তিনি দেশের প্রাক্তন ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি । ঠিক কী করেছিলেন তিনি...

  • 1987 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মার্গারেট আলভারের নেতৃত্বে 14 জনের একটি কমিটি তৈরি করেন ৷
  • ওই কমিটির প্রায় 353টি সুপারিশের মধ্যে অন্যতম নির্বাচনে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ, বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে ৷
  • 1992 সালে রাজীব গান্ধি নির্মিত কমিটির সুপারিশ মেনেই সংবিধানের 73 ও 74 তম সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ৷
  • সংবিধানের সেই সংশোধনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলাদের জন্য বাধ্যতামমূলকভাবে 33 শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়েছিল ৷

মহিলা সংরক্ষণের যে ব্যাটন রাজীব গান্ধি ধরলেন, নরিসমা রাও সেই ব্যাটনের পূর্ণ মর্যাদা দিলেন। কারণ, নরসিমা জমানার ভারতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে করা এই পদক্ষেপ এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা । শেষ যদিও এখানেও নয়।

  • 1996 সালে প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া আইনসভায় প্রথম মহিলা সংরক্ষণ বিলকে স্বীকৃতি দেন ৷
  • ঐতিহাসিক সেই দিন, যেদিন আইনসভায় মহিলাদের 33 শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য প্রথম বিল পেশ করল দেবেগৌড়া সরকার ৷
  • সংবিধানের 81তম সংশোধনের প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি স্বীকৃত করতে চান, কিন্তু তা বাধাপ্রাপ্ত হয় ৷

জাতীয় সংসদের অধিকাংশ বিল সমর্থন করলেও সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো রাজনৈতিক দলগুলি বিলের বিরোধিতা করে। এক কঠিন পরিস্থিতি। কারণ, কংগ্রেসের বিপুল সমর্থন পেয়ে দেবেগৌড়ার পরিচালিত ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের আসনে থাকলেও, আঞ্চলিক দলগুলিকে এড়িয়ে বিল পাশ করতে পারেননি দেবেগৌড়া। বিলটি চলে যায় সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে। থমকে যায় বিল পাশের বিষয়টি। 2010 সালে মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হলেও, লোকসভায় অধরাই থাকে ৷

আরও পড়ুন: মুলতুবি লোকসভা, সর্বসম্মতিতে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশে সাংসদদের কাছে আর্জি মোদির

1971 থেকে 2023, নতুন সংসদ ভবনে লোকসভা অধিবেশনের প্রথম দিনেই মোদির বাজিমাত । মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেই কৃতিত্বের লড়াই। বিজেপি বনাম কংগ্রেস । যেখানে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, "মহিলা সংরক্ষণ বিলের বীজ বপন করেছিলেন রাজীব গান্ধি, রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হয় মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে, সোনিয়া গান্ধিও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন এই বিল নিয়েই।" যদিও তীক্ষ্ণ বাণেই অধীরকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করেন অমিত শাহ। তিনি বললেন, "অধীর চৌধুরীর তথ্য সঠিক নয়। পুরনো মহিলা সংরক্ষণ বিলের মেয়াদ অনেকদিন আগেই শেষ হয়, নতুন মহিলা সংরক্ষণ বিল লোকসভায় পাশ কোনও দিনও হয়নি।"

যদিও সোনিয়া গান্ধির কথা ধরেই রাজনৈতিক মহলের দাবি, কংগ্রেসের হাত ধরেই মহিলা সংরক্ষণ বিল, তাই কৃতিত্বটা রাজীব গান্ধির।

Last Updated : Sep 19, 2023, 11:00 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.