কলকাতা, 31 জুলাই : চড়া সুরে বিজেপি বিরোধিতার পাশাপাশি মহিলা ও যুব-ভোট ঝোলায় পোরা নিশ্চিত করা, মূলত এই ফর্মুলায় আস্থা রেখেই একুশের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাজিমাত করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ একইভাবে তেইশে তৃণমূলের লক্ষ্য, ত্রিপুরার মসনদ ৷ নয়া মিশনে সফল হতে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদারকে বড় দায়িত্ব দিয়েছে দল ৷ ত্রিপুরায় নারী শক্তিকে তৃণমূলের পক্ষে আনতে কাকলিতেই আস্থা রেখেছে শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ সেই সঙ্গে, ছাত্র এবং যুব সমাজকে কাছে টানতে ত্রিপুরাতেও তৃণমূল কংগ্রেসের হাতিয়ার দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya) ও সুদীপ রাহাদের মতো তরুণ তুর্কীরা ৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা ৷ এঁদের প্রধান দায়িত্ব হল, ত্রিপুরার ছাত্র-যুবদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দলের প্রতি আকর্ষিত করা ৷ প্রসঙ্গত, বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরাতেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে দেবাংশুর ৷ তাঁর ‘খেলা হবে’তে মন মজেছে সে রাজ্যের বাসিন্দাদেরও ৷ তাই দলের শীর্ষ নেতারা ত্রিপুরায় পৌঁছনোর আগেই তাঁদের অনুকূলে জমি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেবাংশুকে ৷
আরও পড়ুন : Tripura Politics : ত্রিপুরায় কংগ্রেস-বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ভিড়, আমল দিতে নারাজ গেরুয়া বাহিনী
এদিকে, শুক্রবার ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার (Kakoli Ghosh Dastidar) ৷ তাঁর দাবি, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার মানুষের দুর্ভোগ দূর করতেই দেবীর শরণাপন্ন হয়েছন তিনি ! পুজো দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও ৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, বাংলার কাছাকাছি অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে মহিলাদের সমর্থন জোগাড় করতে বাড়তি সময় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রীকে ৷ রয়েছে শক্তিশালী মহিলা সংগঠন তৈরির দায়িত্বও ৷ ইতিমধ্যেই সেই কাজে মন দিয়েছেন কাকলি ঘোষদোস্তিদার ৷ এদিকে, শুক্রবার ত্রিপুরায় যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাঁর সফরসূচি বদল করে কলকাতায় ফিরে আসেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ তবে খুব সম্ভবত, আগামী সোমবারই ত্রিপুরা যাচ্ছেন অভিষেক।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ব্রাত্য বসু (Bratya Basu), মলয় ঘটক (Moloy Ghatak), ডেরেক ও’ব্রায়নের (Derek O'Brien) হাত ধরে ত্রিপুরা তৃণমূলে যোগ দেন প্রাক্তন বিধায়ক সুবল ভৌমিক, প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশচন্দ্র দাস, পান্না দেব, প্রেমতোষ দেবনাথ, বিকাশ দাস, তপন দত্তর মতো হেভিওয়েট নেতারা ৷ তথ্য বলছে, ত্রিপুরা তৃণমূলে এত বড় মাপের যোগদান এর আগে ঘটেনি ৷ যদিও সম্প্রতি যাঁর তৃণমূলে আগমন নিয়ে সবচেয়ে বেশি জল্পনা ছড়িয়েছিল, বিজেপির সেই সুদীপ রায় বর্মন (Sudip Roy Barman) প্রকাশ্যে অন্তত তৃণমূলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছেন ৷ তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে টুইটারে তাঁর পোস্টে তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে ৷ গত 29 জুলাই তিনি লেখেন, ‘‘রাগ বা হতাশার বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত দেশবিরোধী শক্তিকেই মদত দেয় ৷ জাতীয়তাবাদী শক্তির পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান এবং শীর্ষ নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখুন ৷’’ রাজনৈতিক মহলের মতে, সুবল ভৌমিকদের কটাক্ষ করেই সুদীপের এই টুইটবার্তা ৷ তাহলে কি সুদীপ বিজেপিতেই থেকে যাচ্ছেন ? ত্রিপুরাজুড়ে গুঞ্জন অব্যাহত।
-
Decision taken in haste,anger or frustration and out of emotion will only strengthen the anti nationalist force. Stand firm with the Nationalist and believe in the highest leadership.
— Sudip Roy Barman (@SudipRoyBarman1) July 29, 2021 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">Decision taken in haste,anger or frustration and out of emotion will only strengthen the anti nationalist force. Stand firm with the Nationalist and believe in the highest leadership.
— Sudip Roy Barman (@SudipRoyBarman1) July 29, 2021Decision taken in haste,anger or frustration and out of emotion will only strengthen the anti nationalist force. Stand firm with the Nationalist and believe in the highest leadership.
— Sudip Roy Barman (@SudipRoyBarman1) July 29, 2021
আরও পড়ুন : Biplab Kumar Deb : পুলিশ তার কাজ করেছে, আই-প্যাকের সদস্যদের আটক প্রসঙ্গে বিপ্লব
অন্যদিকে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) সংস্থা আই-প্যাকের (I-PAC) কর্মীদের ত্রিপুরা সরকার গৃহবন্দি করে রাখার পর থেকেই সে রাজ্যে তৃণমূলকে নিয়ে চর্চা চলছে ৷ যদিও বৃহস্পতিবার আই-প্যাকের সকলেরই আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদালত ৷ তারপরই রাজ্য ছাড়েন তাঁরা ৷ তবে, তার আগেই আই-প্যাকের কর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার হতে তৃণমূল কর্মীদের ৷ পাশাপাশি, দলীয় বৈঠকের আয়োজন করতে গিয়েও ত্রিপুরায় বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে ৷ ত্রিপুরা পুলিশের নির্দেশ, ‘‘বৈঠক করতে হলে দেখাতে হবে প্রশাসনের অনুমতি ৷ না হলে বৈঠক করা যাবে না ৷’’
এর আগে বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, ত্রিপুরার মাটি তৃণমূলের রাজনীতির জন্য নয় ৷ এমনকি, দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িককেও কটাক্ষ করা হয়েছিল ৷ কিন্তু আই-প্য়াক কর্মীদের গৃহবন্দি করার ঘটনা থেকে তৃণমূলকে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনে পুলিশের বাধা, এমন ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে, ত্রিপুরায় তৃণমূলের অতিসক্রিয়তা ভালভাবে নিচ্ছে না গেরুয়াশিবির ৷ এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে (Biplab Kumar Deb) বিতর্কের শেষ নেই ৷ তার উপর বাংলায় হ্য়াটট্রিকের পর ত্রিপুরাতেও মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ও তাঁর দলের জনপ্রিয়তা বাড়লে গেরুয়াবাহিনীর কাছে তা অশনি সঙ্কেত হতেই পারে ৷ বাংলায় বাম জমানার অবসান ঘটিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ ত্রিপুরায় সেই একই কাজ করে দেখিয়েছে বিজেপি ৷ তাই তেইশের নির্বাচনে এই দুই দল যদি সমানে সমানে টক্কর দেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷ এক্ষেত্রে এক পক্ষ যে অন্য পক্ষকে আগে থেকেই ধরাশায়ী করার চেষ্টা করবে, সেটাই স্বাভাবিক ৷ রাজ্য়ের বিজেপি সরকারও তৃণমূলের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই করছে ৷