কলকাতা, 11 অগস্ট: 1947 সালের 15 অগস্ট ৷ ইউনিয়ন জ্যাকের বদলে সরকারিভাবে উড়েছিল তেরঙা ৷ বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের সবচেয়ে বড় ভিত্তি সংবিধান ৷ সাড়ে সাত দশক ধরে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন মতের ভারতীয়দের কাঁটাতার বেঁধে রাখেনি, বেঁধে রেখেছে কয়েকশো পাতার বইটিই ৷
সংবিধান অনুযায়ীই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় ৷ একঝলকে দেখে নিন স্বাধীনতার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া কিছু ঐতিহাসিক রায়...
1. নভতেজ সিং জোহর বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া, 2018
বিশদ: নভতেজ জোহর এবং এলজিবিটি (সমকামী, উভকামী এবং রুপান্তরকামী) সম্প্রদায়ের অন্য পাঁচ ব্যক্তি 2016 সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির 377 ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন ।
রায়: আদালত এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে সম্মতিপূর্ণ সম্পর্কের অনুমতি দেয় ৷ যা সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়গুলির মধ্যে একটি । সুপ্রিম কোর্ট এটাও স্পষ্ট সমকামীরা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া তাঁদের মৌলিক অধিকার ৷
2. শায়রা বানো বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (তিন তালাক), 2017
বিশদ: 2016 সালে শায়রা বানোকে তাত্ক্ষণিক তিন তালাক পদ্ধতি বা তালাক-ই-বিদাতের মাধ্যমে বিয়ের 15 বছর পর রিজওয়ান আহমেদ ডিভোর্স দিয়েছিলেন । মুসলিম সম্প্রদায়ে প্রচলিত তালাক-ই-বিদাত, বহুবিবাহ, নিকাহ-হালালকে অসাংবিধানিক বলে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন বানো । তিনি দাবি করেন, এই জাতীয় বিষয়গুলি সংবিধানের 14, 15, 21, 25 ধারা লঙ্ঘন করেছে ।
রায়: খোদ ভারত সরকার এবং নারী অধিকার সংগঠন যেমন বেবাক কালেক্টিভ এবং ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ) শায়রা বানোর আবেদনকে সমর্থন করেছিল । তারা সম্মত হয়, যে এই বিষয়গুলিকে অবশ্যই অসাংবিধানিক হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত । আবেদন গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্ট 5 বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে । দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় জানিয়ে দেয়, যে কোনও রূপে তিন তালাক বেআইনি । 22 অগস্ট 2017, ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্বামীর তিন বছরের জেল-সহ তিন তালাকের উপর আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি করে ।
আরও পড়ুন : নেতাজির লক্ষ্মী-মাস্টারদার প্রীতি, স্বাধীনতার ইতিহাসে রামায়ণের ঊর্মিলারা
3. 1994 সালে এস.আর বোম্মাই বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া
বিশদ: এস.আর বোম্মাই জনতা দল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন । 13 অগস্ট, 1988 থেকে 21 এপ্রিল, 1989 তিনি কর্নাটকের মসনদে ছিলেন । 21 এপ্রিল, 1989-এ, রাজ্য সরকারকে সংবিধানের 356 অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় ৷ রাজ্যে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা ৷ 356 ধারার সুপারিশকারী রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বোম্মাই কর্নাটক হাইকোর্টে যান।
রায়: কর্নাটক হাইকোর্ট রিট পিটিশন খারিজ করে দেয় । এরপর মুখ্যমন্ত্রী মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যান । সুপ্রিম কোর্টের 9 বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ 1994 সালে ঐতিহাসিক আদেশ জারি করেছিল । রায়ে বলা হয়, রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ নয় । সংসদের উভয় কক্ষে অনুমোদন পাওয়ার পরই রাষ্ট্রপতিকে এটি প্রয়োগ করতে হবে ।
4. ইন্দ্র সাহনি এবং অন্যান্য বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া
বিশদ: 1993 সালে, ইন্দিরা সাহনি নরসিমা রাও সরকারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন । মামলাটি ছিল বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য মাত্র 10% সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়ার বিরুদ্ধে ।
রায়: সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলে, জাতিভিত্তিক সংরক্ষণের উপর 50% সংরক্ষণ দেওয়া হবে ।
আরও পড়ুন : ইন্দিরা থেকে মমতা, স্বাধীন ভারতের রাজনীতির অগ্নিকন্যারা
5. মানেকা গান্ধি বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া, 1977 সাল
বিশদ: 1977 সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির পুত্রবধূ মানেকা গান্ধির পাসপোর্ট ক্ষমতাসীন জনতা পার্টির সরকার বাজেয়াপ্ত করে । এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি।
রায়: আদালত এই মামলায় সরকারি আদেশ প্রত্যাহার করেনি ৷ তবে, এই রায়ের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে । সাত বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে (সংবিধানের অনুচ্ছেদ 21 অনুযায়ী) ৷ এই মামলা এবং রায়টি সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে 215 বার উদ্ধৃত করেছেন । বিচারপতি চন্দ্রের মতে, "মানেকা গান্ধির মামলাটি সাতের দশকের শেষের দিকে সুপ্রিম কোর্ট সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল ।"
6. কেশভানন্দ ভারতী বনাম স্টেট অফ কেরল, 1973
বিশদ: এটি দেশের বিচার ব্যবস্থার অন্যতম স্মরণীয় মামলা । 1970 সালে মামলাটি দায়ের হয়েছিল । কেশবানন্দ ভারতী এডনির মটের প্রধান ছিলেন । এটি কেরলের কাসারগোডের একটি ধর্মীয় দল । ভারতীর নামে বেশ কিছু জমিও রয়েছে । ঠিক সে সময়েই রাজ্য সরকার ভূমি সংস্কার সংশোধনী আইন, 1969 চালু করে ।
রায়: মামলাটির রায় দিতে বসানো হয়েছিল 13 জন বিচারপতির বেঞ্চ ৷ 7:6 অনুপাতে বেঞ্চ মামলায় যুগান্তকারী রায় দেয় । সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধনের মাধ্যমে বাতিল করা উচিত নয় । ভারতী হেরে গেলেও, মামলাটি ভারতীয় গণতন্ত্রের ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠে ৷
7. এ.কে গোপালান বনাম মাদ্রাজ হাইকোর্ট, 1950
বিশদ: এ.কে গোপালন, কমিউনিস্ট নেতা । 1950 সালে প্রতিরোধমূলক আটক আইনে তাকে আটক করা হয় । হেবাস কর্পাস এবং সংবিধানের 32 অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি আদালতকে চ্যালেজ্ঞ করেন । তাঁর দাবি ছিল, ভারতীয় সংবিধানের 13, 19, এবং 21 অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করা হয়েছে ।
রায়: সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, সংবিধানের 22 অনুচ্ছেদ একটি স্বাধীন ধারা । ফলে গোপালনকে আইন মোতাবেকই আটক করা হয়েছিল। আদালত আরও বলে, যে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক অপসারণ করা হলে, এটি সংবিধানের 14, 19 এবং 21 অনুচ্ছেদকে উপেক্ষা করছে বলে ধরে নেওয়া যায় না ।