নয়াদিল্লি, 18 জুন : সন্ধে 7.15 ৷ তিহার জেল ৷ বাইরে খোলা আকাশের নিচে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন দুটি মেয়ে, নাতাশা আর দেবাঙ্গনা ৷ তাঁদের ঘিরে আত্মীয়, বন্ধু, সমর্থকদের জয়ের স্লোগানে জেগে উঠেছে জেলের সামনেটা ৷
মঙ্গলবার, 15 জুন জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর আরও 36 ঘণ্টা কেটে গেল, আর তিনজন ছাত্র-সমাজকর্মী জেএনইউ (JNU)-র নাতাশা নারওয়াল, দেবাঙ্গনা কালিতা আর জামিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ ইকবাল তানহা-কে ছেড়ে দিতে দ্বিতীয়বার নির্দেশ দিতে হল দিল্লি হাইকোর্টকে ৷ 2020-র মে মাসে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে ইউএপিএ ধারায় জেলে আটকে রাখে দিল্লি পুলিশ ৷ মঙ্গলবার তিন ছাত্র-সমাজকর্মীর আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল আর অনুপ জয়রাম ভামবানি বলেন, "মনে হচ্ছে যেন ভিন্ন মত প্রকাশকে চাপা দেওয়ার চেষ্টায় আর বিষয়টা হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে, এই চিন্তায় রাজ্য সংবিধান অনুযায়ী 'প্রতিবাদের অধিকার' আর 'জঙ্গির কর্মকাণ্ড'-র মধ্যের লাইনটা মুছে ফেলেছে ৷ এ-রকম ভাবে অস্পষ্ট হতে থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে যাবে ৷ এই ভাবে ইউএপিএ আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন : Twitter Controversy : ভারত সরকার টুইটারকে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নয়, দাবি রবিশঙ্করের
জামিনের পরেও বুধবার সকালে জেল কর্তৃপক্ষ জানায় এই তিন জনকে ছাড়ার কোনও নির্দেশ তারা পায়নি ৷ সরকারের তরফে আইনজীবী জানায় যে, এদের মধ্যে একজন অসমে থাকেন, তাই দিল্লি পুলিশকে অসমে যেতে হবে, সময় লাগবে ৷ এমনই নানা অজুহাতে পিছোতে থাকে জামিন ৷ এর পর তিনজন সমাজকর্মী ফের দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুলা আর বিচারপতি এজে ভামবানি কোর্ট তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ৷ সকাল এগারোটাতেই তাঁদের মুক্ত করার ছাড়পত্র দেয় এএসজে বেদি ৷
নাতাশা নারওয়াল- জেলে আমাদের হেনস্থা হতে হয়েছে ৷ পুলিশের দাবি ছিল আমরা নাকি দাঙ্গা ছড়িয়েছি ৷ আমাদের বন্ধুরা হেসেছে, তাঁরা জানেন এটা সম্ভব নয় ৷ শুধু প্রতিবাদ করেছি ৷ বাবা যদি এখানে থাকতেন ৷
দেবাঙ্গনা কালিতা- এখনও মনে হচ্ছে কেউ ফের এসে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে ৷ রাস্তা, মানুষ দেখে ভাল লাগছে ৷ "ভিন্ন মত প্রকাশ আর প্রতিবাদের অধিকার"-এর কথা বলার জন্য দিল্লি হাইকোর্টকে ধন্যবাদ ৷
আসিফ ইকবাল তানহা- মানুষ আমাকে জঙ্গি বলেছে, জিহাদি বলেছে ৷ আমার কিছু যায় আসে না ৷ সিএএ আর এনারসি-র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যাব ৷ জেলে থাকাটা কঠিন ছিল, কিন্তু জানতাম একদিন বেরতে পারব ৷ সংবিধানে বিশ্বাস রাখি ৷
দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি পুলিশ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে, শুনানি আজ ৷