শ্রীনগর, 11 ডিসেম্বর: 'সর পে লাল টোপি রুশি, ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি'- মনে পড়ে রাজকাপুরের টুপি পরা ছবিটা ? আসমুদ্র হিমাচল- টুপি যেখানকারই হোক, দিল হিন্দুস্তানি ৷ আবার এও হতে পারে, কাশ্মীরি টুপি জুড়েছে গোটা হিন্দুস্তানকে ৷ যে টুপিকে উপত্যকার শাহী টুপি বলা হয় ৷ রাজকীয় মর্যাদার এই টুপির নাম 'কারাকুলি' ৷ পাওয়া যায় শ্রীনগরের নাওয়ান বাজারের 'জন ক্যাপ হাউজে' ৷ 125 বছরের পুরনো এই দোকানের মালিক চতুর্থ প্রজন্মের মুজফফর জন ৷ তিনি নিজে হাতে কারাকুলি সেলাই করে বানান ৷ এই কারাকুলি তিন ধরনের- প্রথমটা জিন্নাহ স্টাইল (Jinnah style), দ্বিতীয়টা আফগান কারাকুল (Afghan qaraqul) এবং তৃতীয় রাশিয়ান কারাকুল (Russian qaraqul) ('John Cape House' in Nawan Bazar area of Srinagar) ৷
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে এই দোকানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাস ৷ মহম্মদ আলি জিন্নাহ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি- বহু তাবড় নেতারা এই টুপি পরেছেন ৷ জন স্মৃতিচারণ করেন, "1944 সালে আমার দাদু জিন্নাহর জন্য কারাকুলি টুপি বানিয়েছেন ৷ আমার বাবা এই টুপি তৈরি করেছিলেন রাজীব গান্ধির জন্য ৷ আর আমি কারাকুল টুপি বানিয়েছি ডঃ ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মিরওয়াইজ, গুলাম নবি আজাদের জন্য ৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রাক্তন রাজা উমান কোয়াবাস বিন সঈদকেও টুপি বানিয়ে দিয়েছি ৷" রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া কাশ্মীর ও দেশের সমাজকর্মী, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরাও এই কারাকুলি পরেছেন ৷
আরও পড়ুন: কুঠারের কোপে জঙ্গি নিকেশ করা কাশ্মীরি কন্যাকে নিয়ে ফিল্ম হচ্ছে বলিউডে
কাশ্মীরের শাহী টুপি কারাকুলি বিশেষ ধরনের ভেড়ার চামড়া থেকে তৈরি হয় ৷ একসময় কাশ্মীরে এই টুপির জনপ্রিয়তা ছিল ৷ অনেকেই পরতেন ৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কারাকুলি পরা মানুষের ছবিটা ফিকে হয়ে গিয়েছে উপত্যকায় ৷ বর্তমান প্রজন্মকে খুব একটা আকর্ষণ করেনি কারাকুলি ৷
উজবেকিস্তান থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে আফগানিস্তান পার হয়ে কারাকুলি এসেছে কাশ্মীরে ৷ মুজফফর জন জানিয়েছেন, একবিংশ শতকের প্রজন্ম এই টুপি পছন্দ করছে না ৷ তাই এর ডিজাইনে বদল আনা হয়েছে ৷ বিগত বেশ কয়েক বছরে কাশ্মীরি তরুণরা এই কারাকুলি পরছেন ৷ এ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে তাদের মধ্যে ৷
রাজকীয় মর্যাদার এই কারাকুলির দাম কত ? 5 হাজার টাকা থেকে শুরু ৷ 20 হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কারাকুলি পাওয়া যাবে মুজফফরের দোকানে ৷ চারটি প্রাকৃতিক রঙের লোম পাওয়া যায় ৷ এর মধ্যে খয়েরি রঙের দাম সবচেয়ে দামি ৷ এর সূক্ষ্মতা ও আরামও বেশি ৷
আরও পড়ুন: বরফের চাদরে ঢাকল ভূ-স্বর্গ, দেখুন ভিডিয়ো...