হায়দরাবাদ, 19 জুলাই : হঠাৎই সংবাদ শিরোনামে পেগাসাস (Pegasus) ৷ অভিযোগ, ভিনদেশি এই সফটওয়্যার কিনেই নাকি বহু ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতছে কেন্দ্রের মোদি সরকার (Modi Government) ৷ যদিও ইতিমধ্যেই সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি ৷ তবে তাতে বিতর্ক বা সাধারণের কৌতূহল, কোনওটাই ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না ৷ ঠিক কীভাবে কাজ করে এই স্পাই সফটওয়্য়ার ? কারাই বা এটি পরিচালনা করে ? আসুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু তথ্য ৷
পেগাসাস একটি স্পাই সফটওয়্য়ার বা ‘স্পাইওয়্যার’ (spyware) ৷ এনএসও গোষ্ঠী (NSO Group) নামে তেল-আভিভের (Tel-Aviv) একটি প্রযুক্তি সংস্থা এটি তৈরি করেছে ৷ 2010 সালে প্রাথমিকভাবে এনএসও গোষ্ঠীর পত্তন ঘটিয়েছিলেন নিভ কারমি, শ্য়ালেভ হুলিও এবং ওমরি লেভি ৷
আরও পড়ুন : Spyware Pegasus : আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও গ্রাহকদের ভুয়ো তালিকা প্রকাশের অভিযোগ এনএসও গোষ্ঠীর !
একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, বিভিন্ন ডিজিট্য়াল ডিভাইসের অন্দরে ঢুকে সেখানকার তথ্য বের করে আনার জন্য একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করাই ছিল এনএসও-র প্রধান লক্ষ্য ৷ বিভিন্ন দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির জন্য তারা এই সফটওয়্য়ার তৈরি করতে চেয়েছিল ৷ এই প্রসঙ্গে সংস্থার যুক্তি ছিল, সন্ত্রাসবাদকে দমন করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা ৷ সেই কারণে শুধুমাত্র সরকার বা সরকারি কোনও সংস্থাকেই এই সফটওয়্য়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ 2018 সালের একটি রিপোর্ট বলছে, 45টি দেশে পেগাসাস ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷ এই দেশগুলির মধ্যে ভারত ছাড়াও রয়েছে বাহরিন, কাজ়াখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ৷
পেগাসাসের আরও বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে ৷ যেমন একে ‘কিউ স্যুট’ (Q Suite) এবং ‘ট্রাইডেন্ট’ (Trident) নামেও ডাকা হয় ৷ সাধারণত, গ্রাহকের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি লিংক পাঠিয়ে পেগাসাসকে সেই মোবাইলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ৷ মোবাইল ব্যবহারকারী একবার যদি সেই লিংকে ক্লিক করেন, তাহলেই গোটা ফোনটা এই স্পাইওয়্য়ারের জিম্মায় চলে আসবে ৷ মোবাইলে থাকা যাবতীয় তথ্য চলে যাবে পেগাসাস ব্যবহারকারীর হাতে ৷ লিংক পাঠানো ছাড়া হোয়াটস অ্য়াপ কলের মাধ্যমেও যে কারও মোবাইল পেগাসাস দ্বারা সংক্রামিত করা সম্ভব ৷
আরও পড়ুন : Spyware Pegasus : মন্ত্রী থেকে সাংবাদিক, দেশজুড়ে ফোনে গোপন নজরদারির চেষ্টার রিপোর্ট প্রকাশ্যে
পেগাসাসের আরও একটি মহিমা হল, সময় থাকতে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার অসামান্য ক্ষমতা ৷ সেটা কীভাবে করা হয় ? তথ্য বলছে, টার্গেটের মোবাইল থেকে যাবতীয় তথ্য হাতানোর পর 60 দিনের মধ্যেই নিজেকে ওই ডিভাইস থেকে কার্যত ধ্বংস করে ফেলে সে ৷ ফলে পরবর্তীতে যদি সেই মোবাইলগুলির ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়, তাহলেও ততদিনে আর তাতে পেগাসাসের অস্তিত্ব ঠাওর হবে না ৷
পেগাসাসের এই হামলা রুখতে ইতিমধ্যেই সতর্ক হয়েছে হোয়াটস অ্য়াপ, অ্য়াপল, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো সংস্থাগুলি ৷ তারা তাদের ফোন এবং পরিষেবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে ৷ তবে তাতে 100 শতাংশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় না ৷ পেগাসাসের সাম্প্রতিকতম ভার্সানটি হয়তো সমস্ত নিরাপত্তাবেষ্টনিই ভেঙে ফেলতে সক্ষম ৷ বস্তুত, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার কোনও ডিভাইসে পেগাসাসের হামলা হলে বিশেষ কিছুই করার থাকে না ৷ একমাত্র উপায় হল, সেই মোবাইলটির ব্যবহার বন্ধ করে সেটিকে ত্য়াগ করা ৷