জলপাইগুড়ি, 13 জানুয়ারি: রেলের জমিতে বাংলা আবাস যোজনার ঘর নির্মাণের অভিযোগ । খবর পেয়েই নির্মীয়মান ঘর ভেঙে দিল রেল । সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির দোমোহনী নতুন বাজারে ৷ সেখানে রেলের জমিতে তৈরি হওয়া পাঁচটি ঘর ভেঙে দেন রেলের আধিকারিক ৷ তাঁদের সঙ্গে আরপিএফ জওয়ানরাও ছিলেন ৷
এতে বিপাকে পড়েছেন উপভোক্তারা । কিন্তু কীভাবে রেলের জমিতে বাংলার আবাস যোজনায় ঘর তৈরির টাকা বরাদ্দ হল, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷ প্রয়োজনে টাকা ফিরিয়েও নেওয়া হতে পারে ৷
অভিযোগ, ময়নাগুড়ির দোমোহনীতে রেলের জমিতে কয়েক দশক থেকে বসবাসকারী জমিতেই বাংলার আবাস যোজনায় ঘর তৈরির টাকা পেয়েছিলেন নতুন বাজারের বেশ কিছু উপভোক্তা । বাংলা আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েই ইটের গাঁথনি দিয়ে পুরনো বাড়িকেই সংস্কার করে নির্মাণ করছিলেন উপভোক্তারা । আর তাতেই বাধা দিল রেল ।
শুধু তাই নয়, রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানে কোনোরকম নতুন করে কংক্রিটের বাড়ি করা যাবে না ৷ তাই তারা আজ বাড়ি ভেঙে দেয় । যে সব বাড়ি নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছিল, সেই পাঁচটি বাড়িই ভাঙা হয়েছে । এর জেরে রেলের আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা । প্রতিবাদে ময়নাগুড়ি দোমোহনী সড়কও অবরোধ করা হয় ৷
রেলের আধিকারিক অমিত ভগত বলেন, ‘‘রেলের জমিতে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ হচ্ছিল ৷ আমরা ভেঙে দিয়েছি । রেলের জমিতে নতুন করে কোনও নির্মাণ করা যাবে না ।’’
যাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে, তাঁদের একজন সুভাষ চন্দ ৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলা আবাস যোজনার টাকা পেয়ে আমরা আমাদের পুরনো ঘর তৈরি করছিলাম । আমার বয়স এখন 55 বছর । তার আগে থেকে আমরা রেলের জমিতে আছি । আজ হঠাৎ করে বাড়ি ভেঙে দিল । আজ পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি । কিন্তু হঠাৎ করে এমন হল ।’’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল শর্মা বলেন, ‘‘আজ আমাদের বাড়ি ভেঙে দিল রেল দফতর । আজ দোকান থেকে এসে দেখি রেল দফতর ঘর ভাঙছে । আমরা রেলের জমিতেই থাকি । সেই জায়গাতেই বাড়ি বানানো হচ্ছিল । বাংলা আবাস যোজনার টাকায় বাড়ি বানানো হচ্ছিল ।’’
এলাকার আরও এক বাসিন্দা সুষমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আজ আমার দাদার বাড়ি ভেঙে দিল । রেলের জমিতে কোনও বাড়ি হবে না ।’’ রেলের জমিতে বাংলার বাড়ি কীভাবে হল ? এই প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘‘আমরা অন্যের জমির দলিল দিয়ে বাড়ির আবেদন করেছিলাম ।’’
অন্য এক বাসিন্দা ছায়ারানী সরকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘পুরনো ঘরে থাকতে খুব সমস্যা । নতুন করে বাড়ি বানাচ্ছিলাম । পাকা বাড়ি তুলতে দেবে না ।’’
এদিকে ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘রেলের জমিতে বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি বানানোর কথাই নয় । তাঁরা আমাদের এফিডেভিড দিয়ে জানিয়েছিলেন যে নিজের জমিতে তারা বাড়ি করবেন । তাঁরা যদি রেলের জমিতে ঘর করেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার । আমরা সরকারি টাকা ফিরিয়ে নেব । রেল তার জমিতে কাকে থাকতে দেবে, কার ঘর ভাঙবে, সেটা তাদের ব্যাপার ।’’