কলকাতা, 13 জানুয়ারি: রবীন্দ্র সরোবরে সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল পথকুকুরদের খাওয়ানো । সেই সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছিলেন সারমেয় প্রেমীরা । এবার তাঁদের মুখে হাসি ফুটল । রবীন্দ্র সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি বিরাট লেকের চারটি অংশে চারটি জোন তৈরি করে দিলেন, যেখানে পথকুকুরদের খাওয়াতে পারবেন সারমেয় প্রেমীরা ।
সরোবর প্রেমী ও প্রাতঃভ্রমণকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল যে, বেশ কয়েকজন সারমেয় প্রেমী যথেচ্ছ ভাবে পথকুকুরদের খাওয়ান । তাতে সরোবর চত্বর নোংরা হয় । কুকুরগুলি এদিক ওদিক প্রাতঃভ্রমণকারী বা পথচারীদের দেখলে তাড়া করে । একইভাবে বাড়ির পোষা কুকুর অনেকেই আনতেন । খাওয়াতেন । তাদেরও বিষ্ঠা পড়ে থাকত সরোবরে ।
এই ধরনের একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পরেই সব দিক খতিয়ে দেখে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি নির্দেশ জারি করে যে, গৃহপালিত পোষ্যদের নিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে প্রবেশ নিষেধ । শুধু তাই নয়, সরোবরের ভিতরে পথের কুকুর ও বিড়ালদের খাওয়ানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সরোবরের প্রতি গেটে লাগানো হয় ব্যানার । যা দেখে সরোবর প্রেমী বা প্রাতঃভ্রমণকারীরা খুশি হলেও ক্ষুব্ধ হন সারমেয় প্রেমীরা । তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে লাগাতার আবেদন ও আলোচনা চালাতে থাকেন । যাতে সরোবরে থাকা সারমেয়দের খাওয়ানো যায়, না হলে খেতে না পেয়ে তারা মারা যাবে । অথবা তারা ক্ষুধার্ত হয়ে আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে ।
শেষমেষ একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করে কর্তৃপক্ষ । কেএমডিএ সূত্রে খবর, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, সরোবরে যথেচ্ছভাবে নয়, নির্দিষ্ট করা জায়গায় পথকুকুরদের খাওয়ানো যাবে । সরোবর চত্বরে চারটি জোন তৈরি করা হয় । একটি রোয়িং ক্লাব লাগোয়া এলাকায়, একটি নজরুল মঞ্চের কাছে, একটি গোল পার্কের দিকে, আরেকটি এক নম্বর গেটের বুদ্ধ মন্দিরের কাছে ।
এই প্রসঙ্গে কেএমডিএ আধিকারিক বলেন, "চারটি নির্দিষ্ট করা জায়গাতেই পথকুকুরদের খাওয়াতে পারবেন সারমেয় প্রেমীরা । কোনও ভাবেই সেই জোনের বাইরে নয় । ফলে হাঁটা চলাতেও অসুবিধা হবে না আর পথও পরিষ্কার থাকবে । সরোবরের ভিতরে থাকা অসংখ্য কুকুর দু'বেলা খেতেও পাবে ।
এই সিদ্ধান্তের জন্য সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সারমেয় প্রেমী অরুণাভ রায় । তিনি বলেন, "এর ফলে যাঁরা সারমেয় প্রেমী, তাঁরা নির্দিষ্ট জায়গায় পথকুকুরদের খাওয়াতে পারবেন নিয়মিত । একইভাবে যাঁরা প্রাতঃভ্রমণকারী, তাঁদেরও আর কোনও অসুবিধা থাকবে না । তাঁদের চলার পথ পরিচ্ছন্ন থাকবে ।"
তবে আর এক সারমেয় প্রেমী মলয় রায়চৌধুরী বলেন, "পথকুকুরদের নিজস্ব একটা নির্দিষ্ট এলাকা আছে । তার বাইরে গিয়ে কেউই খেতে যেতে পারে না, গেলে সেই এলাকার কুকুরদের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে । এই জোন তৈরি করার আদপেও কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই । পাশাপাশি এই জোনের নির্দিষ্ট সীমা পরিসীমা কতদূর এবং কোথায় এই জোন, তা সম্পর্কেও পর্যাপ্ত প্রচার কর্তৃপক্ষ করেনি ।"
অন্যদিকে, সরোবরে প্রাতঃভ্রমণকারী সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, "এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটা ভালো পদক্ষেপ কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের । তবে কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে, সারমেয়দের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া জোনের মধ্যেই তাদের খাওয়ানো হচ্ছে কি না সেটা খেয়াল রাখতে হবে ৷ জোনের বাইরে কোথাও যাতে না খাওয়ানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের । নইলে ফের সমস্যায় পড়বেন প্রাতঃভ্রমণকারী ৷"