কলকাতা, 13 জানুয়ারি: প্রথমবার পরিচালকের আসনে সোনু সুদ ৷ অ্যাকশন ছবিতে তিনিই হিরো ৷ ট্রেলার দেখে দর্শকদের আগ্রহের পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী ৷ 10 জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া 'ফতেহ' বক্সঅফিসে ধীরে ব্যাটিং করলেও মাঠে টিকে রয়েছে ৷ ছবিতে একটিই মাত্র বাঙালি চরিত্র, নিশীথ বিশ্বাস। ক্যামিও রোল হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই চরিত্র। অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যকে।
বিগত বেশ অনেক বছর ধরে মুম্বইবাসী তিনি। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রূপোলি জগতে নিজের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন । 'মনসুন ওয়েডিং', 'দেব ডি', 'অব তক ছাপ্পান', 'লুটেরা', 'মিশন রানিগঞ্জ'-সহ একাধিক হিন্দি ছবির মাধ্যমে মায়ানগরীতে নিজের জমি শক্ত করেছেন অভিনেতা। পরিচালক সোনু সুদের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা জানতে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যর সঙ্গে।
ইটিভি ভারত: কেমন লাগল পরিচালক সোনুর সঙ্গে কাজ করে?
দিব্যেন্দু: সোনু আমার বন্ধু হয়। পারিবারিক বন্ধু। ওর ছেলেরা আমার ছেলে-মেয়েরা একে অপরের প্রিয় বন্ধু। ওঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া সবই চলে আমাদের। খুব কাছাকাছিই আমরা থাকি। সোনু যখন বলল যে আমি ছবি পরিচালনা করছি, তোমাকে চাই। আমি না করিনি। শুধুমাত্র বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে এই রোলটা করেছি আমি। এই ছবির পুরোটা জুড়ে শুধুই সোনু। একটা গল্প বলতে আশেপাশে অনেকগুলো চরিত্রের দরকার হয়। আমরা তেমনই।
দিব্যেন্দু: শুধু সিনেমা নয়, সামাজিক কাজের মাধ্যমেও সোনুকে সবাই চেনে। ওঁর একটা অবস্থান আছে সমাজে । কোভিডের সময়ে সোনু যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল তা কারোর অজানা নয়। প্রতি রবিবার আমার বাড়ির সামনে প্রায় 150-200 জন মানুষের জমায়েত হয়। সোনু তাদের সমস্যার কথা শোনে। ওর একটা ট্রাস্ট আছে। সেখানে অনেকে কাজ করে ৷ যারা খোঁজ খবর রাখে কার হাসপাতালের খরচ জোগানোর ক্ষমতা নেই, কার ওষুধ নেই, কে স্কুল কলেজে ভর্তি হতে পারছে না।
সোনু তাদের পাশে দাঁড়ায়। সমাজে সোনুর নাম আছে। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তো আছেই। আর পরিচালক হিসেবে নেতৃত্বদানের কথা জানতে চাইলে বলব, এক একজনের সিনেমা বানানোর স্টাইল এক এক রকমের। 'ফতেহ' একটা মশলাদার ছবি। একটা ফর্মুলা আছে। সোনু সোনুর মতো করে সেটা বানিয়েছে। সবাইকে নিয়ে বানিয়েছে। খুব ভালো একটা পরিবেশ ছিল। আমার জন্য একটু বেশিই ভালো। কারণ ওর পরিবারও শুটিংয়ে থাকত। ফলে, আমি তো পারিবারিক একটা পরিবেশ পেয়েছি কাজ করতে গিয়ে। নেতা হিসেবে সোনুও দক্ষ।
ইটিভি ভারত: 'স্টার থিয়েটার' আজ 'বিনোদিনী থিয়েটার' হয়ে গিয়েছে। আপনি থিয়েটারের মানুষ। খুশি? দিব্যেন্দু: খুব খুশি। অনেকদিন আগেই হওয়া উচিত ছিল। আমরাই আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের দুর্ভাগ্য। এখন রাজনীতি দূরে সরিয়ে ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারলে ভালো। পশ্চিমী দেশগুলি যেভাবে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখে সেই পথ অনুসরণ করলে আখেরে ভালোই হবে আমাদের জাতির। |
ইটিভি ভারত: আপনার আরও একটা সিরিজ আসছে, 'গৃহলক্ষ্মী'। সেখানে কেমনভাবে পাবো আপনাকে?
দিব্যেন্দু: 'ক্রিমিনাল জাস্টিস'-এর লায়কের পর অনেকদিন বেশ ভালোমানুষ কিংবা ধূসর চরিত্রে আমাকে দেখেছেন আপনারা। এবার আবার বেশ কঠিন একটা চরিত্র। যাকে সামলানো বেশ কঠিন। সহজ কথায় ভিলেন। 'গৃহলক্ষ্মী' নামটা শুনতে বেশ ঘরোয়া কোনও ব্যাপার মনে হলেও এর মধ্যে ভায়োলেন্স আছে। লক্ষ্মী তো দেবী। আর মাইথোলজিতে দেবীদের নানা রূপ। কখনও চামুণ্ডা, কখনও সংহার, আবার কখনও অপত্য রূপ। এই সব নিয়েই 'গৃহলক্ষ্মী'। অনেক টার্ন অ্যান্ড টুইস্ট আছে। এই সিরিজের পরিচালক রুমানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ 24 বছর পর কাজ হতে চলেছে। ওরও এটা প্রথম সিরিজ। আবার পুরনো ইমেজে ফিরব। ভালো লাগছে।
ইটিভি ভারত: বাংলা ছবিতে পাচ্ছি না কেন?
দিব্যেন্দু: ভালো কাজ আসছে না বলে। ভালো চরিত্র পেলে নিশ্চয়ই করব। যেমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মুম্বইতে পাই সেরকম তো বাংলায় পাই না। সবই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। একই সব। ছবি থেকে গল্প হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ গল্প চায়। সেটা না থাকলে মানুষের ভালো লাগবে কেন? ছবি আসে চলে যায়। দর্শক পছন্দ করল কি করল না সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু যেটা তৈরি হচ্ছে সেটা তো একটা আর্ট। সেটা এমন হওয়া উচিত যেটা মানুষ ইগনোর করতে পারবে না। যে আর্ট-কে ইগনোর করা যায় সেই আর্ট আর্টই নয় বলে মনে হয় আমার।
ইটিভি ভারত: ফের মশলাদার ছবি তৈরি হচ্ছে বাংলায়।
দিব্যেন্দু: বাজেট কই বাংলায়? আমার মতে মশলাদার হলে সেটা পুরোপুরি হোক। গল্প থাক, মশলাও থাক। কিন্তু মশলা বানাতে গিয়ে গল্প ঘেটে দিচ্ছি আমরা। যে জিনিস আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, সেই জিনিসের পিছনে ছুটে লাভ আছে? মার্ডার মিস্ট্রি, মশলাদার ছবি, অ্যাকশন ফিল্ম বললে প্রথমেই মাথায় আসে অঞ্জন চৌধুরীর 'শত্রু' সিনেমার কথা। বেশি মশলা মাখাতে গিয়ে ছবিগুলি গল্প হারাচ্ছে। আর্ট এমন হওয়া উচিত যেটাকে মানুষ ইগনোর করতে পারবে না।