পুরী, 13 সেপ্টেম্বর: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কোহিনূর দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে নতুন করে দাবি উঠেছে ৷ শুধু তাই নয় বিশ্বের অন্যতম বহুমূল্য এই রঙবিহীন হিরে নাকি ভগবান জগন্নাথের, এমনটাও দাবি করেল ওড়িশার একটি সংগঠন শ্রী জগন্নাথ সেনা (Shree Jagannath Sena) ৷ তাদের সাফ কথা ব্রিটেন যেন এবার 105 ক্যারাটের এই হিরেটি পুরীর মন্দিরে ফিরিয়ে দেয় ৷ এনিয়ে সংগঠনটি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে (Shree Jagannath Sena writes to President Droupadi Murmu over Kohinoor return belongs to Lord Jagannath) ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিংহ্যাম প্যালেসের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস 1980 সালে 32 বছর বয়সে ওড়িশা এসেছিলেন (Charles Odisha Visit 1980) ৷ এখন তাঁর বয়স 73 ৷ চার দশকের সামান্য বেশি সময় আগে যখন তরুণ রাজপুত্র এ রাজ্যে আসেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জানকী বল্লভ পট্টনায়ক (Chief Minister of Odisha Janaki Ballabh Patnaik) ৷ চার্লস সেবার রাজভবনে থেকেছিলেন ৷ ভুবনেশ্বরে মুক্তেশ্বর মন্দির-সহ ওড়িশার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন প্রিন্স অফ ওয়েলস ৷ ওড়িশার সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে ৷
কোহিনূর ফেরৎ চেয়ে রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে এই সংগঠন ৷ সেখানে তারা জানিয়েছে, এখন ইংল্যান্ডের রানির কাছে যে কোহিনূর আছে, সেটি ভগবান শ্রী জগন্নাথের (Lord Jagannath) ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রী যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন ৷ মহারাজা রঞ্জিত সিং (Maharaja Ranjit Singh) তাঁর উইলে এটি ভগবান জগন্নাথকে দিয়ে গিয়েছিলেন ৷
আরও পড়ুন: রানি এলিজাবেথের কুষ্টি বানিয়েছিলেন বাবা, রাজত্বের 70 বছর পূর্তিতে রানিকে চিঠি দিলেন ছেলে
সংগঠনের দাবি, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে পঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিং আফগানিস্তানের সম্রাট নাদির শাহের (Nadir Shah of Afghanistan) বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হন ৷ তারপরই তিনি ভগবান জগন্নাথকে হিরেটি দেন ৷ ঐতিহাসিক ও গবেষক অনিল ধর একটি সংবাদসংস্থাকে জানান, 1893 সালে রঞ্জিত সিং মারা যান ৷ এর 10 বছর বাদে ব্রিটিশ শাসক তাঁর পুত্র দলীপ সিংয়ের (Duleep Singh) কাছ থেকে কোহিনূরটি নিয়ে নেয় ৷
শ্রী জগন্নাথ সেনার পক্ষ থেকে 2016 সালের 19 অক্টোবর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল ৷ বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে উত্তর এসেছিল, "হার ম্যাজেস্টি তাঁর মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন ৷ তিনি সবসময় রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ (non-political) থাকেন ৷" সেনার আহ্বায়ক প্রিয় দর্শন পট্টনায়ক জানান (Sena convener Priya Darsan Pattnaik), তিনি ইংল্যান্ডে যাওয়ার ভিসার অনুমোদন পাননি ৷ তাই আর ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি ৷
মহারাজা রঞ্জিত সিং মৃত্যুর আগে এই কোহিনূর ভগবান জগন্নাথকে দিয়ে গিয়েছেন ৷ একে স্বীকৃতি দিয়েছে ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক ৷ তার প্রমাণ আছে দিল্লির ন্যাশনাল আর্কাইভে (National Archives in Delhi), জানালেন অনিল ৷ কিন্তু ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে (Indian government's stand in the Supreme Court), 20 কোটি মার্কিন ডলারেরও (200 মিলিয়ন) বেশি মূল্যের এই হিরেটি চুরি করা হয়নি ৷ ব্রিটিশ শাসক জোর করে এটি ছিনিয়ে নেয়নি ৷ পঞ্জাবের তৎকালীন রাজা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে (East India Company) এটি দিয়েছিলেন ৷
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক উইলিয়াম ডালরিম্পল (William Dalrymple) তাঁর 'কোহিনূর' নামের বইটিতে লিখেছেন, রঞ্জিত সিংয়ের পুত্র দলীপ সিং তখন ছোট ৷ রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে আত্মসমর্পণের সময় এটি দিয়ে দেন এবং পরে তার জন্য অনুশোচনাও করেন ৷ জানা যায়, চোদ্দোশো শতকে দক্ষিণ ভারতের কোল্লুরে কয়লা খনি থেকে এই বহুমূল্যবান হিরেটি পাওয়া যায় ৷ কোহিনূর মানে 'আলোর পর্বত' (Mountain of Light) ৷ তখন কাকতিয়া রাজত্বকাল (Kaaktiya Dynasty) ৷ বলা হয়, পুরুষদের জন্য কোহিনূর দুর্ভাগ্য বয়ে আনে ৷ তাই ব্রিটিশরা হাতে পাওয়ার পর থেকে এটি শুধুমাত্র মহিলারাই পরে আসছেন ৷
আরও পড়ুন: রানির প্রয়াণের পরই কোহিনূর দেশে ফেরানোর দাবিতে চর্চা নেটপাড়ায়