উজ্জয়িনী, 28 সেপ্টেম্বর: রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় সাহায্যের জন্য অসহায় ভাবে ঘুরে বেড়ানো বিবস্ত্র ধর্ষিতা বালিকাকে দেখে শিউড়ে উঠেছিলেন উজ্জয়িনীর একটি আশ্রমের পুরোহিত রাহুল শর্মা ৷ আগে তিনি হাতের কাছে থাকা একটি কাপড় দিয়ে নাবালিকার শরীর ঢেকে দেন ৷ এরপর সবরকম ভাবে মেয়েটির পাশে দাঁড়ান ওই পুরোহিত ৷ অর্ধনগ্ন, রক্তাক্ত সেই কন্যাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি ৷
পুরোহিত রাহুল শর্মা সংবাদসংস্থা এএনআই-কে বলেন, "যে মুহূর্তে আমি মেয়েটিকে দেখলাম, তখন সে অর্ধনগ্ন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল ৷ নিজেকে ঢাকার জন্য আগে একটা কাপড় দিই ওকে । এরপর ওর বিষয়ে জানার চেষ্টা করি ৷ কিন্তু মেয়েটি কী বলছে বুঝতে পারলাম না । তখন আমি তাকে একটি কলম এবং কাগজ দিই, তাকে নিজের সম্পর্কে লিখতে বলি । জিজ্ঞাসা করি যে, সে তার বাবা-মায়ের ফোন নম্বর জানে কি না ৷ এমনকি আমার ফোনটা তার হাতে তুলে দিয়ে বলি বাবা-মাকে ফোন করতে ৷ কিন্তু সে আমাকে এই বিষয়ে সহায়তা করতে পারেনি ৷"
তারপরে ওই পুরোহিত মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, তার খিদে পেয়েছে কি না ৷ সে তখন মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেয় যে সত্যিই তার খিদে পেয়েছে ৷ রাহুল তখন তাঁর আশ্রম থেকে মেয়েটিকে চা, জল এবং যা কিছু ছিল তা খাওয়ায় ৷ কিছু টাকাও দেন মেয়েটিকে ৷ তবে তাকে ওই অবস্থায় ছাড়তে পারেননি ওই পুরোহিত ৷ তিনি অবিলম্বে পুলিশ হেল্পলাইন '100'-তে ডায়াল করেন এবং 20 মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে পৌঁছয় তাঁর কাছে । এরপর মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন রাহুল শর্মা । তাঁর কথায়, "আজ, সে নিরাপদ । মনে হচ্ছে সে এখানে পৌঁছতে অনেক দূর পাড়ি দিয়েছে । দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত ।"
আরও পড়ুন: ধর্ষিতা-বিবস্ত্র বালিকাকে 50-100 দিয়ে দায় সারেন মানুষ, কাপড় দিয়ে হাসপাতালে নেন পুরোহিত
এ দিকে, বৃহস্পতিবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাবালিকা মেয়েটির সংস্পর্শে আসা পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে উজ্জয়িনী পুলিশ । উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার (এসপি) শচীন শর্মার মতে, ঘটনাটি 25 সেপ্টেম্বর মহাকাল থানার সীমানায় রিপোর্ট করা হয়েছে । তিনি বলেন, "আমরা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটিকে অবিলম্বে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাই । মেয়েটি নিজের পরিচয় বা ঠিকানা বলতে পারছিল না । তাই একজন কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া হয় ৷ তিনিই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কীভাবে তার এই পরিস্থিতি হয়েছে তা জানতে পারেন ৷"
চিকিৎসার ভিত্তিতে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয় এবং আরও তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয় । পুলিশ একটি তদন্ত শুরু করেছে এবং সমস্ত প্রযুক্তিগত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যার ভিত্তিতে একজন অটোচালককে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে ।
পুলিশ সুপার বলেন, "জিজ্ঞাসা করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে । অটোরিকশার পেছনের সিটে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে । অটোচালক স্বীকার করেছেন যে, ঘটনার সময় তিনি মেয়েটির সঙ্গে ছিলেন । এর পরেও আমরা আমাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছি, এবং আমরা নির্ধারণ করতে পেরেছি যে মেয়েটি সাতনা থেকে এসেছে ৷" তিনি জানান যে, প্রায় সব প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে আরও বিশদ তথ্য শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে ।