গ্যাংটক, 5 অক্টোবর: হড়পা বান ও লোনাক লেকে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম ৷ মৃতের সংখ্যা ছাড়াল 11 ৷ এখনও নিখোঁজ প্রায় 80 জন ৷ তাঁদের মধ্যে 22 জন সেনা জওয়ান ৷ 23 সেনা জওয়ান নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ৷ তবে পরে একজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে । মৃতদের মধ্যে 10 জনই সাধারণ নাগরিক ৷ এদের মধ্যে তিনজনের দেহ জলের তোড়ে ভেসে সিকিম থেকে উত্তরবঙ্গে চলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে ৷ সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং সিংতাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন । তিনি সিংটাম নগর পঞ্চায়েত অফিসে ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তাদের পরিস্থিতর উপর নজর রাখতে বলেছেন ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন । মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের সঙ্গে কথা বলেছি এবং রাজ্যের কিছু অংশে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হঠাৎ নেমে আসা প্রাকৃতিক বিপর্যয় পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছি । এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি । আমি ক্ষতিগ্রস্ত সকলের নিরাপত্তা ও মঙ্গল কামনা করছি । "
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও নিখোঁজ সেনা কর্মীদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন । সিকিম সরকার একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে । প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, চুংথাং বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলে সমতল থেকে 15-20 ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জলের স্তর হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে । 22 জন সেনা জওয়ান নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে এবং 41টি যানবাহন জলের তোড়ে তলিয়ে গিয়েছে ।"
আরও পড়ুন: লোনাক লেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি ! তছনছ গোটা উত্তর সিকিম, নিখোঁজ 23 সেনা আধিকারিক
একজন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিক বলেছেন, "সিকিম এবং উত্তরবঙ্গে মোতায়েন অন্য সমস্ত ভারতীয় সেনা জওয়ান নিরাপদে রয়েছে ৷ তবে মোবাইল টাওয়ার ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না । " রাজ্যের রাজধানী গ্যাংটক থেকে 30 কিলোমিটার দূরে সিংটামের একটি ইস্পাত সেতু, যা ইন্দ্রেনি ব্রিজ নামে পরিচিত বুধবার ভোরে তিস্তা নদীর জলে সম্পূর্ণ ভেসে গিয়েছে ৷ সিকিম সরকারের অন্য এক আধিকারিক এমনটাই জানিয়েছেন ৷
চুংথাং বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলে সিকিমে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে ৷ সিকিমের মুখ্য সচিব ভিবি পাঠক জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে 3 হাজারেরও বেশি পর্যটক সিকিমের বিভিন্ন অংশে আটকা পড়েছেন। পাঠক বলেন, "চুংথাং-এর তিস্তা স্টেজ 3 বাঁধে বেশ কয়েকজন শ্রমিক টানেলে আটকা পড়েছিলেন । বন্যার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ কারণ 14টি সেতু ভেঙে পড়েছে, যার মধ্যে নয়টি বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের (বিআরও) অধীনে এবং পাঁচটি রাজ্য সরকারের অন্তর্গত। মাঙ্গান জেলার চুংথাং, ডিকচু, গ্যাংটক জেলার সিংটাম এবং পাকিয়ং জেলার রংপোর বহু মানুষ নিখোঁজ ও আহত হয়েছেন ।" সূত্রের খবর, সেনা জওয়ান-সহ এখনও পর্যন্ত 166 জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহেন্দ্র রাওয়াত বলেছেন, "উদ্ধার হওয়া জওয়ানের অবস্থা স্থিতিশীল ।"
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের পথে মন্ত্রী-আমলারা, 23 সেনা নিখোঁজে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
গ্যাংটক থেকে সিংটেমের দিকে ট্র্যাকে গিয়েছিলেন কলকাতার পর্যটক রাজীব ভট্টাচার্য (25) ৷ তিনি ফোনে পিটিআইকে বলেছেন, "আমরা উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে জলের একটি বিশাল ঢেউ বয়ে যেতে দেখেছি এবং কাঠামোর ধ্বংসস্তূপ ভেসে যাচ্ছে ৷ ভাগ্যক্রমে আমি এবং আমার বন্ধুরা উঁচু জায়গায় ছিলাম এবং হঠাৎ বন্যায় আমাদের কোনও ক্ষতি হইনি । আমরা এখন গ্যাংটকে ফিরে যাচ্ছি ।"
তিস্তার ধারে অবস্থিত দিকচু, সিংটাম, রংপো-সহ বেশ কয়েকটি শহর নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে । এদিকে, মাঙ্গান, গ্যাংটক, পাকিয়ং এবং নামচি জেলায় অবস্থিত সমস্ত স্কুল 8 অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকার ঘোষণা করা হয়েছে ৷ ন্যাশনাল হাইওয়ে -10-এর কিছু অংশ, সিকিম এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে প্রধান সংযোগস্থল ভেসে গিয়েছে ৷ উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ কারণ এখান দিয়ে তিস্তা বয়ে গিয়েছে । সিকিমে বাড়ি ডলমা ভুটিয়া নামে এক কলেজ ছাত্রী পিটিআইকে বলেছেন, "আমরা শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাচ্ছিলাম যখন আমাদের গাড়িটি সোয়েটঝোরা এলাকায় থামতে বাধ্য হয় । অবিরাম বৃষ্টিতে রাস্তার নীচের পাথর এবং মাটি ক্ষয়ে গিয়ে এনএইচ-10 ডুবে যায় । সৌভাগ্যবশত বৃষ্টি কারণে সমস্ত গাড়ি ধীরগতিতে চলছিল ৷ অন্যথায় গাড়ি জলে ডুবে যেত ৷
আরও পড়ুন: সিকিমে গিয়ে নিখোঁজ রায়গঞ্জের বাসিন্দা দুই ভাই-সহ 3, উৎকণ্ঠায় পরিবার
পশ্চিমবঙ্গের এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, উত্তর দিনাজপুর জেলার দুই যুবক – স্বর্ণদ্বীপ মজুমদার (23) ও শ্রীকান্ত মজুমদার (27) এবং ঝাড়খণ্ডের আরেকজন ইশান বুধবার সিকিমে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন । তিনজনই শনিবার ছুটিতে মোটরসাইকেলে করে সিকিমের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন । মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না । তিনি বলেন, আমরা সাহায্যের জন্য সিকিম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি ৷