সংক্রান্তি এলেই এই পুষ্টিকর ছোটো ছোটো দানা তাদের উজ্জ্বলতা নিয়ে উপস্থিত হয় । সংক্রান্তি বা লোহরির নানা অনুষ্ঠানে তারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে থাকে । যদিও এইসব উৎসব ছাপিয়ে অনেকটাই এগিয়ে তিলের ব্যবহার । উৎসবের খাবারে এদের অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ, যাতে আমরা প্রত্যেকে খেতে পারি, এবং বিপুল পুষ্টিগুণে লাভবান হই । এ নিয়ে আরও জানতে ইটিভি ভারত সুখীভব কথা বলেছিল পানাজির পুষ্টিবিশেষজ্ঞ রোহিনী দিনিজের সঙ্গে ।
তিল হল ছোটো ছোটো, তৈলসমৃদ্ধ বীজ, যা পাওয়া যায় সেসামাম ইন্ডিকাম গাছ থেকে । তিল বীজ দু'রকমের । কালো রঙের যাতে বাইরের দিকের খোসা থাকে এবং খোসা ছাড়ানোর পর সাদা রঙের । তিলকে পারম্পরিক ওষধি হিসেবে কয়েক হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর বহু গুণাগুণ আছে ।
পুষ্টির দিক থেকে দেখলে, তিলের মধ্যে রয়েছে এমইউএফএ ওলেইক অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জ়িঙ্ক সেলেনিয়াম এবং কপার । হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় যে কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড, তা কমাতে সাহায্য করে ওলেইক অ্যাসিড। শিশু, কিশোর, অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদায়িনী মা এবং নিরামিষাশীদের কাছে তিল হল প্রোটিনের একটা সস্তা এবং সুস্বাদু উৎস ।
তিল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ, যা হাড়কে শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপোরোসিস আটকায় । শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে, রক্ত সঞ্চালন এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে জ়িঙ্ক । অন্যদিকে, কপারের রয়েছে ইনফ্লেমেশন কমানোর ক্ষমতা, যাতে বাতের ব্যাথা এবং গাঁটের যন্ত্রণা কমে । এতে রয়েছে ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়ামের মতো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যারা শরীরকে দূষিত পদার্থ থেকে মুক্ত করে ।
তিলের মধ্যে রয়েছে দু'টি বিশেষ রাসায়নিক সেসামল এবং সেসামিন, যারা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে । এতে রয়েছে উদ্ভিদজাত যৌগ ফোটোইস্ট্রোজেন, যা ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতাকে অনুকরণ করে এবং ঋতুজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ।
ওষধিগুণের জন্য আয়ুর্বেদে তিলের তেলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং বিভিন্ন প্রসাধনীর ক্যারিয়ার অয়েল হিসেবেও এটা ব্যবহার হয় । এই তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে তাকে আর্দ্র রাখে এবং ত্বকের কোষ নতুন করে তৈরি হওয়াকে ত্বরান্বিত করে । এতে রয়েছে জীবাণুরোধী এবং উষ্ণ রাখার ক্ষমতা, যার জন্য একে ম্যাসাজ অয়েল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
বাদামের মতো সুস্বাদু এবং আকারে ছোটো হওয়ার জন্য তিল বীজ ভারতীয় রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে । তিল বীজ বৈচিত্রপূর্ণ এবং বহু খাবারে ব্যবহার হতে পারে । সেঁকে নেওয়া বীজ স্যান্ডউইচ, বিস্কুট, রুটি, কেক, স্যালাড এবং ভাজার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া যায় । গ্রেভিকে ঘন করতে, গুড়, চিনির রস ও অন্যান্য বাদামের সঙ্গে মিশিয়ে চিক্কি বা লাড্ডুও তৈরি করা যায় ।
আরও পড়ুন, ভারতে টুইটার পরীক্ষা করছে নতুন ফিচার "ডিএম-এ 140 সেকেন্ডের ভয়েজ় মেসেজ’
তাহিনী বা তিল-মাখন তৈরির জন্য এটাই মূল উপাদান । এই মাখন পকোরা, স্যান্ডউইচ বা স্যালাডের সঙ্গে খাওয়া যায় । নানা মশলার সঙ্গে তিল দিয়ে লোভনীয় চাটনি পাউডার তৈরি করা যায় । যেটা রুটি, চাপাটি, ভাকরি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে ।
তিলের যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করা এবং এই উষ্ণতা প্রদানকারী খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করে । আর সুস্থ ও সৃজনশীল থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ ।
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: rohinidiniz@gmail.com-এ ।