ETV Bharat / bharat

Rajiv Gandhi Assassination : রাজীব গান্ধি তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন, ইটিভিকে বললেন শ্রীপেরামবুদুরের পুলিশ আধিকারিক

শ্রীপেরামবুদুরে রাজীব গান্ধির নির্বাচনী প্রচারের রাতে তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৷ নলিনী, সুবাকে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করতেও দেখেছিলেন ৷ কিন্তু বুঝতে পারেননি কী হতে চলেছে (Rajiv Gandhi Assassination) ৷

Sriperumbudur Police Officer Anusuya Daisy Ernest
পুলিশ আধিকারিক অনসূয়া ডেইজি আরনেস্ট
author img

By

Published : May 22, 2022, 12:48 PM IST

চেন্নাই, 22 মে : দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির মৃত্যুর সময় তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৷ 1991 সালের 21 মে পুলিশ আধিকারিক অনসূয়া ডেইজি আরনেস্ট (Anusuya Daisy Ernest) শ্রীপেরামবুদুরে রাজীব গান্ধির নির্বাচনী প্রচারের অনুষ্ঠানে থেকেও খুব জোর বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ সে রাতের অভিজ্ঞতা এখনও জীবন্ত ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে কী বললেন তিনি (Rajiv Gandhi assassination blast survivor police officer in Sriperumbudur Anusuya Daisy Ernest recalls) ?

21 মে, 1991

আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি নির্বাচনী প্রচারে শ্রীপেরামবুদুরে এসেছিলেন ৷ সেই সময় আমি একটি থানার সাব-ইন্সপেক্টর ৷ শ্রীপেরামবুদুরে নিরাপত্তা মোতায়েন করা নিয়ে আমার কাছে ওয়ারলেসে নির্দেশিকা আসে ৷ সেই অনুযায়ী সন্ধে 6টা নাগাদ বেশ কয়েকজন মহিলা নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে থানায় যাই ৷ আমায় এবং আমার মহিলা নিরাপত্তাকর্মীদের মহিলা সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজীব গান্ধির নির্বাচনী প্রচারে একে একে অনেক মহিলা আসছিলেন ৷

নলিনী আর সুবাও সেখানে আসে (আমি পরে তাদের নাম জানতে পেরেছি ৷ নলিনী এখনও জেলে রয়েছে) ৷ আমি তাদের মঞ্চের সামনের দিকে বসতে বলি ৷ ওরা সেখানে না বসে পিছনের দিকে বসেছিল ৷ ওরা মঞ্চের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কী সব আলোচনা করছিল ৷ আমি তেমন বড়সড়ো কিছু হবে, তা বুঝতে পারিনি ৷ যাঁরা এই অনুষ্ঠানে আসবেন, তাঁদের কী ভাবে বসানো হবে, তা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম ৷

আরও পড়ুন : Rajiv Gandhi Assassination Case : রাজীব গান্ধি হত্যাকাণ্ডে অন্যতম দোষী পেরারিভালানকে মুক্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট

এরপর আমাদের এসপি জানায়, মঞ্চের কাছেই একদল মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাঁরা সেখান থেকে সরতে চাইছেন না ৷ আমি মহিলা কংগ্রেসের সদস্য সমেত তাদের অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি ৷ আমার সঙ্গে ছিল চন্দ্রা নামের আরেকজন মহিলা গার্ড ৷ এই সময় তানু (আত্মঘাতী), ফোটোগ্রাফার হরিবাবু এবং শিবারাসন মঞ্চের পিছন দিক থেকে বেরিয়ে আসে ৷

তানুর হাতে একটা চন্দনকাঠের মালা ছিল ৷ শিবারাসনকে সাংবাদিকের মতো দেখতে লাগছিল ৷ তিনি কথা বললেন না ৷ তারা সঙ্গে সঙ্গে মহিলা কংগ্রেস ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন ৷ শুধুমাত্র হরিবাবু অন্য একটা জায়গায় চলে গেলেন ৷

এরপর ডিএসপি প্রদীপ লি আমাকে এবং মহিলা গার্ড চন্দ্রাকে মহিলাদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিলেন ৷ তাই, আমি মহিলাদের লাইনে প্রথমে এবং চন্দ্রা একেবারের শেষে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ ইতিমধ্যে, রাজীব গান্ধি এলেন ৷ অনেকেই তাঁকে শাল দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন ৷ পরে তিনি যখন মহিলাদের জায়গার দিকটায় এগোচ্ছিলেন, তখন তাঁকে ঘিরে একটা ভিড় জমে গিয়েছিল ৷ আমি তাদের পিছনের দিকে ঠেলছিলাম ৷

অনুসূয়ার মনে পড়ে গেল, রাজীব গান্ধি তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন এবং অনুগামীদের ঠেলে বের করে দিতে বারণ করেছিলেন ৷ এর ঠিক পরমুহূর্তে যেই রাজীব গান্ধি এগিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ ৷

আরও পড়ুন : জেলে আত্মহত্যার চেষ্টা রাজীব গান্ধির হত্যাকারী নলিনীর

সে দৃশ্য আজও তাঁর স্মৃতিতে অটুট ৷ তিনি বললেন, "আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম ৷ একটাই কথা মনে আছে যে আমি মরে গিয়েছি ৷ কিন্তু পরের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ খুলে দেখি চারিদিকে দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ আমার ইউনিফর্ম পুড়ে গিয়েছে ৷ যাঁদের যাঁদের জীবন্ত দেখেছিলাম, তাঁরা প্রত্যেকে শবদেহে পরিণত হয়েছে ৷ আমি মাথাটা তুলতে চেষ্টা করলাম, পারলাম না ৷"

এরপর সাব-ইন্সপেক্টর রাজেন্দ্রন তাড়াতাড়ি অনসূয়ার কাছে যান এবং তাঁকে টেনে তোলেন ৷ ততক্ষণে তাঁর প্যান্টে আগুন ধরেছে এবং হাত মুচড়ে গিয়েছে ৷ তাঁর সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে ৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, জানালেন অনসূয়া ৷ তিনি আরও বললেন, "সিবিআই এবং সিবিসিআইডি তদন্ত চালায় ৷ তিন মাস হাসপাতালে থেকে তারপর আমি বাড়ি ফিরেছিলাম ৷ এরপর একই থানায় চাকরিতে যোগ দিলাম ৷ এখনও আমার চোখে, বুকে এবং শরীরের আরও অনেক জায়গায় গুলির ছোট টুকরো রয়ে গিয়েছে ৷"

আরও পড়ুন : আরও পড়ুন : মায়ের মতোই অল্প সময়ে রাজনৈতিক কৌশল রপ্ত করেছিলেন রাজীব

পেরারিভালানের মুক্তি নিয়ে আপনার মতামত কী ?

দুর্ভাগ্যবশত ভুক্তভোগীদের জন্য কোনও আইন, আদালত নেই ৷ প্রত্যেকে মনে করছে সে অনেক বছর জেল খেটেছে ৷ অথচ ন'জন নিরাপত্তা কর্মী মারা গিয়েছেন ৷ নিরীহ নাগরিকরা জখম হয়েছেন এবং তার এই কাজের জন্য অনেকে মারাও গিয়েছেন ৷ এটা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না ৷ আমি তো সারা জীবনের জন্য অক্ষম হয়ে গিয়েছি ৷ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে ৷ যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই মা, বাবা, বাচ্চাদের জন্য রোজগার করে আনতেন ৷ বিশেষত একজন মহিলা নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু ৷ তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর 2 বছরের বাচ্চাটি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে মারা যায় ৷

চেন্নাই, 22 মে : দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির মৃত্যুর সময় তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ৷ 1991 সালের 21 মে পুলিশ আধিকারিক অনসূয়া ডেইজি আরনেস্ট (Anusuya Daisy Ernest) শ্রীপেরামবুদুরে রাজীব গান্ধির নির্বাচনী প্রচারের অনুষ্ঠানে থেকেও খুব জোর বেঁচে গিয়েছিলেন ৷ সে রাতের অভিজ্ঞতা এখনও জীবন্ত ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে কী বললেন তিনি (Rajiv Gandhi assassination blast survivor police officer in Sriperumbudur Anusuya Daisy Ernest recalls) ?

21 মে, 1991

আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি নির্বাচনী প্রচারে শ্রীপেরামবুদুরে এসেছিলেন ৷ সেই সময় আমি একটি থানার সাব-ইন্সপেক্টর ৷ শ্রীপেরামবুদুরে নিরাপত্তা মোতায়েন করা নিয়ে আমার কাছে ওয়ারলেসে নির্দেশিকা আসে ৷ সেই অনুযায়ী সন্ধে 6টা নাগাদ বেশ কয়েকজন মহিলা নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে থানায় যাই ৷ আমায় এবং আমার মহিলা নিরাপত্তাকর্মীদের মহিলা সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজীব গান্ধির নির্বাচনী প্রচারে একে একে অনেক মহিলা আসছিলেন ৷

নলিনী আর সুবাও সেখানে আসে (আমি পরে তাদের নাম জানতে পেরেছি ৷ নলিনী এখনও জেলে রয়েছে) ৷ আমি তাদের মঞ্চের সামনের দিকে বসতে বলি ৷ ওরা সেখানে না বসে পিছনের দিকে বসেছিল ৷ ওরা মঞ্চের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কী সব আলোচনা করছিল ৷ আমি তেমন বড়সড়ো কিছু হবে, তা বুঝতে পারিনি ৷ যাঁরা এই অনুষ্ঠানে আসবেন, তাঁদের কী ভাবে বসানো হবে, তা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম ৷

আরও পড়ুন : Rajiv Gandhi Assassination Case : রাজীব গান্ধি হত্যাকাণ্ডে অন্যতম দোষী পেরারিভালানকে মুক্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট

এরপর আমাদের এসপি জানায়, মঞ্চের কাছেই একদল মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাঁরা সেখান থেকে সরতে চাইছেন না ৷ আমি মহিলা কংগ্রেসের সদস্য সমেত তাদের অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি ৷ আমার সঙ্গে ছিল চন্দ্রা নামের আরেকজন মহিলা গার্ড ৷ এই সময় তানু (আত্মঘাতী), ফোটোগ্রাফার হরিবাবু এবং শিবারাসন মঞ্চের পিছন দিক থেকে বেরিয়ে আসে ৷

তানুর হাতে একটা চন্দনকাঠের মালা ছিল ৷ শিবারাসনকে সাংবাদিকের মতো দেখতে লাগছিল ৷ তিনি কথা বললেন না ৷ তারা সঙ্গে সঙ্গে মহিলা কংগ্রেস ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়লেন ৷ শুধুমাত্র হরিবাবু অন্য একটা জায়গায় চলে গেলেন ৷

এরপর ডিএসপি প্রদীপ লি আমাকে এবং মহিলা গার্ড চন্দ্রাকে মহিলাদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিলেন ৷ তাই, আমি মহিলাদের লাইনে প্রথমে এবং চন্দ্রা একেবারের শেষে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ ইতিমধ্যে, রাজীব গান্ধি এলেন ৷ অনেকেই তাঁকে শাল দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন ৷ পরে তিনি যখন মহিলাদের জায়গার দিকটায় এগোচ্ছিলেন, তখন তাঁকে ঘিরে একটা ভিড় জমে গিয়েছিল ৷ আমি তাদের পিছনের দিকে ঠেলছিলাম ৷

অনুসূয়ার মনে পড়ে গেল, রাজীব গান্ধি তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন এবং অনুগামীদের ঠেলে বের করে দিতে বারণ করেছিলেন ৷ এর ঠিক পরমুহূর্তে যেই রাজীব গান্ধি এগিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ ৷

আরও পড়ুন : জেলে আত্মহত্যার চেষ্টা রাজীব গান্ধির হত্যাকারী নলিনীর

সে দৃশ্য আজও তাঁর স্মৃতিতে অটুট ৷ তিনি বললেন, "আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম ৷ একটাই কথা মনে আছে যে আমি মরে গিয়েছি ৷ কিন্তু পরের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ খুলে দেখি চারিদিকে দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ আমার ইউনিফর্ম পুড়ে গিয়েছে ৷ যাঁদের যাঁদের জীবন্ত দেখেছিলাম, তাঁরা প্রত্যেকে শবদেহে পরিণত হয়েছে ৷ আমি মাথাটা তুলতে চেষ্টা করলাম, পারলাম না ৷"

এরপর সাব-ইন্সপেক্টর রাজেন্দ্রন তাড়াতাড়ি অনসূয়ার কাছে যান এবং তাঁকে টেনে তোলেন ৷ ততক্ষণে তাঁর প্যান্টে আগুন ধরেছে এবং হাত মুচড়ে গিয়েছে ৷ তাঁর সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে ৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, জানালেন অনসূয়া ৷ তিনি আরও বললেন, "সিবিআই এবং সিবিসিআইডি তদন্ত চালায় ৷ তিন মাস হাসপাতালে থেকে তারপর আমি বাড়ি ফিরেছিলাম ৷ এরপর একই থানায় চাকরিতে যোগ দিলাম ৷ এখনও আমার চোখে, বুকে এবং শরীরের আরও অনেক জায়গায় গুলির ছোট টুকরো রয়ে গিয়েছে ৷"

আরও পড়ুন : আরও পড়ুন : মায়ের মতোই অল্প সময়ে রাজনৈতিক কৌশল রপ্ত করেছিলেন রাজীব

পেরারিভালানের মুক্তি নিয়ে আপনার মতামত কী ?

দুর্ভাগ্যবশত ভুক্তভোগীদের জন্য কোনও আইন, আদালত নেই ৷ প্রত্যেকে মনে করছে সে অনেক বছর জেল খেটেছে ৷ অথচ ন'জন নিরাপত্তা কর্মী মারা গিয়েছেন ৷ নিরীহ নাগরিকরা জখম হয়েছেন এবং তার এই কাজের জন্য অনেকে মারাও গিয়েছেন ৷ এটা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না ৷ আমি তো সারা জীবনের জন্য অক্ষম হয়ে গিয়েছি ৷ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে ৷ যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই মা, বাবা, বাচ্চাদের জন্য রোজগার করে আনতেন ৷ বিশেষত একজন মহিলা নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু ৷ তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর 2 বছরের বাচ্চাটি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে মারা যায় ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.