নয়াদিল্লি, 30 নভেম্বর: বারবার হাতির মৃত্যুর জেরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে রেল ৷ তাই ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু আটকাতে এবার নয়া প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চলে রেলমন্ত্রক ৷ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক এই প্রযুক্তির নাম অনুপ্রবেশ শনাক্তকরণ বা ইনট্রুসন ডিটেকশন সিস্টেম (আইডিইএস) ৷ শীঘ্রই সারা ভারতের 700 কিলোমিটার হাতি-প্রবণ এলাকায় এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷
তিনদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৷ যাতে শাবক-সহ তিনটি হাতির মৃত্যু হয়েছে ৷ এর আগে অগস্ট মাসেও ট্রেনে কাটা পড়েছিল একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতি ৷ চাপড়ামারি অভয়ারণ্যের সেই ঘটনায় শোরগোল পরে গিয়েছিল ৷ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-সহ দক্ষিণের একাধিক রাজ্যে দ্রুতগামী ট্রেনের সামনে হাতি চলে আসায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে ৷ এইসব ঘটনায় অনেকক্ষেত্রে রেলের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে ৷ এরপরেই সম্প্রতি ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়া জঙ্গলে হাতির মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ৷ তারপরেই রেলমন্ত্রকের তরফে এই নয়া প্রযুক্তি আনার কথা জানা গিয়েছে ৷
অনুপ্রবেশ শনাক্তকরণ সিস্টেম নামে এই প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যেই অসমে পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে চালু করা হয়েছে ৷ অসমের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে (এনএফআর)-এর অধীনে লুমডিং বিভাগে 60 থেকে 70 কিলোমিটারের একটি অংশে এই সিস্টেমকে কাজে লাগানো হচ্ছে । এই প্রযুক্তি সম্পর্কে এনএফআর-এর জেনারেল ম্যানেজার আনশুল গুপ্তা ইটিভি ভারতকে বলেন, সিস্টেমটি খুব ভালো কাজ করছে । এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ওএফসি ভিত্তিক শনাক্তকরণ সিস্টেম । এর মধ্যে সেন্সর রয়েছে ৷ রেলওয়ে ট্র্যাকের কাছাকাছি হাতি চলে এলেই সেন্সর সেটির অবস্থানকে চিহ্নিত করবে এবং সঙ্গে সঙ্গে অফিসার, চালক, স্টেশন মাস্টার এবং বাকিদের এ বিষয়ে সতর্ক করবে ৷
রেল মন্ত্রক বলেছে, একটি সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রযুক্তিটি আগামী মাসগুলিতে 700 কিলোমিটার হাতি-প্রবণ এলাকায় প্রয়োগ করা হবে । এই প্রকল্পে আনুমানিক ব্যয় হবে 181 কোটি টাকা ৷ তবে এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের খাতে ভালো বিনিয়োগ হবে । রেলমন্ত্রকের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, "এই নয়া প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কেরল, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ের কিছু অংশ এবং তামিলনাড়ুতেও বাস্তবায়িত হবে । এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি প্রচেষ্টা ৷"
সূত্রের খবর, না জেনেই দ্রুতগামী ট্রেনের সামনে চলে আসায় দেশে হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ৷ ট্রেনের ধাক্কায় ভারতে প্রতি বছর এক ডজনেরও বেশি হাতির মৃত্যু হচ্ছে ৷ তথ্য অনুযায়ী, 2012-2022 পর্যন্ত গত 10 বছরে কমপক্ষে 200টি হাতির মৃত্যু হয়েছে । তার মধ্যে অসমে 30টি, পশ্চিমবঙ্গে 55টি, ওড়িশায় 14টি, উত্তরাখণ্ডে নয়, ত্রিপুরা ও উত্তরপ্রদেশে একটি করে হাতির প্রাণহানি হয়েছে ।
ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এনএফআর হাতির প্রাণহানি আটকাতে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নিচ্ছে । বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রেলওয়ে ট্র্যাক থেকে গাছপালা পরিষ্কার করা হয়েছে ৷ এনএফআরের তরফে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে । রেলমন্ত্রকের আধিকারিক বলেন, "প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল, হাতির ট্রেন-সম্পর্কিত ঘটনার প্রভাব কমানো ৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বৃহত্তর লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখা ।"
উল্লেখ্য, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এর আগে জোর দিয়েছিলেন দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির উপর ৷ যা পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নেও সামঞ্জস্য রাখবে ৷ পাশাপাশি সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে সুরক্ষা প্রদান করা যাবে । রেলমন্ত্রী সারা ভারতে হাতি-প্রবণ অঞ্চলে থাকা সমস্যাগুলি মোকাবিলায় তাঁর মন্ত্রকের অটল প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন ।
আরও পড়ুন: