লখনউ, 4 মার্চ: ভারতের সংবিধান অনুসারে, বিধানসভাগুলি কিছু বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করে ৷ যেমন- বিশেষ পরিস্থিতিতে আদালত কক্ষের মতোই বিধানসভাতেও বিচার প্রক্রিয়া চলতে পারে (Quasi Judicial Power of Assembly) ৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল, এই বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী ঘোষিত কোনও ব্যক্তিকে কারাবাসের শাস্তি দেওয়ার জন্য বিধানসভা চত্বরে অবস্থিত কোনও কক্ষকে কি কারাগার হিসাবে গণ্য করা যায় ? এই প্রশ্ন উঠছে ৷ কারণ, শুক্রবারই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী ছিল উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা (Uttar Pradesh Assembly) ৷ 2004 সালের একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত 6 পুলিশকর্মীকে একদিনের কারাবাসের সাজা শোনানো (One Day Imprisonment for 6 Cops) হয় বিধানসভার তরফে ৷ অধ্যক্ষ নির্দেশ দেন, বিধানসভার একটি কক্ষকেই কারাগার হিসাবে গণ্য করা হবে এবং সেখানেই শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত 6 দোষীকে বন্দি থাকতে হবে ৷ কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের একটি ঘটনায় বিধানসভায় বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা অরূণাভ ঘোষ। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি মন্তব্যের জন্যও তাঁর একদিনের সাজা হয়েছিল।
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, এই বিষয়টির বিশ্লেষণ সহজ নয় ৷ কারণ, সংবিধানে রাজ্যের বিধানসভাগুলিকে বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেগুলি নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে ৷ যেমন- কারও বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে কী সাজা দেওয়া হবে, কীভাবে সেই সাজা দেওয়া হবে, সেই বিষয়গুলি খুবই অস্পষ্ট ৷ ফলে এগুলি নিয়ে নানা সময় নানা বিতর্ক হয়েছে ৷
এবার উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় আসা যাক, এক্ষেত্রে বিধানসভার প্রিভিলেজ কমিটি 6 দোষীকে একদিনের জন্য কারাবাসের সাজা দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করে ৷ তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয় ৷ এ নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা এবং বিতর্ক চলে ৷ সেই বিতর্কের পর একদিনের কারাবাসের সাজা সর্বসম্মতভাবে পাশ করা হয় ৷ সেই অনুসারে, দোষী 6 পুলিশকর্মী শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিধানসভার প্রতীকী কারাগারে রাত 12টা পর্যন্ত বন্দি থাকেন ৷ সেখানে তাঁদের যাতে কোনও সমস্য়া না হয়, তার জন্য প্রিভিলেজ কমিটির প্রস্তাব এবং অধ্যক্ষের নির্দেশ মেনে সেই কারাগার কক্ষেই খাদ্য, পানীয় ইত্যাদির বন্দোবস্ত করে রাখা হয় ৷
আরও পড়ুন: পুরনো মামলায় দোষী, 6 পুলিশকর্মীকে একদিনের কারাবাস দিল বিধানসভা !
যদিও, এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ৷ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হিসাবে তিনি অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান, অর্থাৎ 'ওয়াক আউট' করেন ৷ তবে, মায়াবতীর বিএসপি-সহ অন্য়ান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন ৷ অন্যদিকে, দোষী ঘোষিত 6 ব্যক্তি 2004 সালের সেই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন ৷ কিন্তু, অধ্যক্ষ সেই আবেদন গ্রাহ্য করেননি ৷ শুক্রবারের এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত এক্তিয়ার নিয়ে নতুন করে মানুষের মনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে ৷