গোয়ালিয়র, 7 জানুয়ারি: 1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রথম ছবি তুলে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক কেদার জৈন ৷ তাঁর সাক্ষীই বিজেপির শীর্ষ নেতাদের ভাগ্যনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ৷ এ বার অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত ৷
মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার কেদার জৈন ৷ তিনি শুধু বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে ফেলার সাক্ষী ছিলেন তা নয়, তাঁর বিবৃতির ভিত্তিতেই বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, উমা ভারতী এবং মুরলী মনোহর যোশীকে আদালতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল । অযোধ্যা মামলায় সিবিআই তাঁকে প্রধান সাক্ষী করেছিল এবং তাঁর বিবৃতি রেকর্ড করার পর আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে, বিজেপি নেতাদের যে বয়স, তাতে তাঁদের পক্ষে মসজিদের গম্বুজের উপরে ওঠা এবং এটি ভেঙে ফেলা সম্ভব নয় ৷ 22 জানুয়ারি রামলালার অধিষ্ঠানে আপ্লুত কেদার জৈন ।
তিনি বলেন, "আমি নিজের চোখে রামলালাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হতে দেখেছি । নিজে চোখে যা দেখতে পেয়েছি, তার জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি । আজ, ভগবান রামের একটি বিশাল মন্দির তৈরি হচ্ছে এবং সেখানে তাঁকে স্থাপন করা হবে । আমি গর্বিত বোধ করছি ৷"
বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে ফেলার প্রথম ছবি তুলেছিলেন কেদার জৈন ৷ স্বতন্ত্র চিত্রগ্রাহক তিন দশক আগের সেই ধ্বংসের সময় জনতার উন্মাদনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন । তিনি জানান, তাঁর তোলা ছবিতে জনতাকে বিতর্কিত কাঠামোর দিকে ইঙ্গিত করতে এবং রামলালাকে স্থাপন করতে দেখা গিয়েছে ।
ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, "এছাড়াও, খননের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবশিষ্টাংশও পাওয়া গিয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এটি রামলালার জন্মস্থান ৷" 'উৎসাহী' করসেবকরা বিতর্কিত কাঠামোটিকে তাঁর চোখের সামনে ভেঙে দিচ্ছেন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান জৈন । তাঁর কথায়, "তখন, পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন ছিল । পরে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ক্ষমতায় আসার ফলে সবকিছু বদলে গিয়েছে ৷"
ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, কেদার জৈন বলেন যে, করসেবকদের পদযাত্রা বন্ধ করার সমস্ত সম্ভাব্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা সেখানে পৌঁছনোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং অবশেষে তাঁরা যা পরিকল্পনা করেছিলেন সেটাই করেছিলেন ৷
চিত্রগ্রাহকের কথায়, "6 ডিসেম্বরের আগে লক্ষাধিক করসেবক এসেছিলেন এবং আমিও ফটোগ্রাফার হিসাবে প্রবেশ করতে পেরেছিলাম কাঠামোটি ধুলোয় মিশে যাওয়ার পাঁচ দিন আগে । আমি তালার নীচে রাখা রামলালার দর্শনও পেয়েছিলাম । আমি এলোমেলোভাবে ছবি তুলে গিয়েছি । উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশাল বাহিনী বিতর্কিত কাঠামোর মধ্যে এবং তার আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছিল । পাশাপাশি, একটি কাঁটাতার লাগানো হয়েছিল যাতে করসেবকদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া যায় ৷
আরও বিশদ বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, 5 ডিসেম্বর অশোক সিংগাল করসেবকদের গাইড করতে এসেছিলেন । বিজেপির তৎকালীন জাতীয় সভাপতি মুরলি মনোহর যোশী, রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া, বিনয় কাটিহার, সাধ্বী ঋতম্বরা, এলকে আদবানি এবং বজরং দলের তৎকালীন জাতীয় সভাপতি জয়ভান সিং পাওয়াইয়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেই দিনের বর্ণনা দিয়ে চিত্রগ্রাহক বলেন, "কিছুক্ষণ পর, জয় জয় শ্রী রামের উচ্চস্বরে শ্লোগান শোনা যায় এবং তার পরে হঠাৎ করেই করসেবকের ভিড় বিতর্কিত স্থাপনাটিতে পৌঁছে গেল। কেউ কেউ দড়ি দিয়ে গম্বুজের উপরে উঠেছিল এবং তারপরে তারা কাঠামোটি ভেঙে ফেলতে শুরু করেছিল । কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো কাঠামোটি ধ্বংস হয়ে যায় । দ্রুত একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে রামলালাকে স্থাপন করা হয় এবং একটি তাঁবু স্থাপন করা হয় ৷"
রামলালাকে দেখতে সপরিবারে অযোধ্যায় যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে রয়েছে বলে জানালেন কেদার জৈন । আবেগঘন হয়ে তিনি বললেন, "আমার জন্য এর চেয়ে বড় সুখ আর কিছু হতে পারে না ৷"
আরও পড়ুন: