নয়াদিল্লি, 24 মার্চ : যোগীরাজ্যে চরম হেনস্থার শিকার হতে হল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দুই সন্ন্যাসিনী ও তাঁদের দুই অনুগামীকে ৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, এই চার তরুণীকে রীতিমতো নিগ্রহ করে এবিভিপি-র সদস্যরা ৷ তাদের মনে হয়েছিল, ওই দুই সন্ন্যাসিনী সঙ্গের মেয়ে দু’টিকে ধর্মান্তরিত করতে যাচ্ছেন ৷ স্রেফ এই অজুহাতেই ওই দুই সন্ন্যাসিনী ও তাঁদের দুই অনুগামীকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় ৷ ঝাঁসি স্টেশনে রীতিমতো জেরার মুখে পড়তে হয় তাঁদের ৷ যখন জানা যায়, তাঁরা কাউকে ধর্মান্তরিত করতে যাচ্ছেন না, তখনই তাঁদের সেখান থেকে যাওয়ার ‘অনুমতি’ দেওয়া হয় ৷ গোটা ঘটনায় ফের একবার মুখ পুড়ল রাজ্যের বিজেপি সরকারের ৷ যদিও যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ বুধবার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঝাঁসিতে সন্ন্যাসিনীদের হেনস্থার ঘটনায় যুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’’
হেনস্থার ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার ৷ যা জানাজানি হওয়ার পর ক্ষুব্ধ নানা মহল ৷ এমনকী দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ৷ তিনি লেখেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি এবং পরধর্ম সহিষ্ণুতার আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করবে ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়টি কঠোর হাতে দমন করা উচিত ৷ আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, যে বা যারা সংবিধানসিদ্ধ ব্য়ক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারকে লঙ্ঘন করবে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে কঠোর পদক্ষেপ করে, আপনি সেই নির্দেশ দিন ৷’’
গত 19 মার্চ হরিদ্বার-পুরী উৎকল এক্সপ্রেসে সওয়ার হয়েছিলেন ওই দুই সন্ন্যাসিনী ও তাঁদের দুই অনুগামী ৷ 25 সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, চার তরুণীকে ট্রেনের ভিতরেই ঘিরে ধরেছে বেশ কয়েকজন পুরুষ ৷ তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেখে মনে হচ্ছে, তারা পুলিশকর্মী ৷
সেই সময় পুরুষ কণ্ঠকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আপনারা আপানাদের জিনিসপত্র সঙ্গে নিন ৷ আপনারা যা বলছেন, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে আপনাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷’’
আরও পড়ুন : উত্তরপ্রদেশে গাছ থেকে 2 বোনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
এই সময় আর একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা নেতাগিরি করছেন কেন ?’’
এই সময় আর একটি পুরুষ কণ্ঠ বলে ওঠে, ‘‘আরে নেতাগিরি কী ৷ চলুন ম্যাডাম ৷ তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র ওঠান ৷’’
পরে ঝাঁসি রেলপুলিশের সুপার জানান, দুই সন্ন্য়াসিনীর সঙ্গে বাকি যে দুই তরুণী ছিলেন তাঁদেরও সন্ন্য়াসিনীর প্রশিক্ষণ চলছে ৷ এই চারজন দিল্লির হজরত নিজামউদ্দিন থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন ৷ গন্তব্য ছিল ওড়িশার রৌরকেল্লা ৷ ওই একই ট্রেনে ছিল এবিভিপি-র বেশ কিছু সদস্য ৷ তারাও প্রশিক্ষণ সেরে ঋষিকেশ থেকে ট্রেন উঠেছিল ৷ গন্তব্য ছিল ঝাঁসি ৷ তাদের মনে হয়েছিল, দুই সন্ন্যাসিনী বাকি তরুণীকে ধর্মান্তরণের জন্য সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন ৷ এমনকী, তারা ওই দুই সন্ন্যাসিনীর বিরুদ্ধে রেল পুলিশে লিখিত অভিযোগও দায়ের করে ৷ কিন্তু তদন্তে জানা যায়, বাকি দুই তরুণী জন্ম সূত্রেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ৷