ETV Bharat / bharat

প্রতিনিয়ত অবহেলা ও জীবিকাহীন জীবন; অতিমারির কোপ সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলির উপর

author img

By

Published : Jun 18, 2021, 12:16 PM IST

বহুজন ইকনমিকস আয়োজিত এক ওয়েব সেমিনারে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রান্তিক স্তরের মানুষজন ৷ যেখানে তুলে ধরা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত অবহেলিত হওয়া দেশের সাফাই কর্মচারী, আশা কর্মী থেকে দীনমজুর সকলের কথা ৷

nationwide-lockdown-for-covid-situation-had-lasting-impact-on-marginalised-communities
প্রতিনিয়ত অবহেলা ও জীবিকাহীন জীবন; অতিমারির কোপ সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলির উপর

মুম্বই, 18 জুন : গত বছর 24 মার্চ করোনা সংক্রমণ রুখতে নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশ জোড়া লকডাউন ঘোষণা করেছিল ৷ লকডাউনের আকস্মিক সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের অধিকাংশ মানুষের উপর পড়েছিল ৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন যাঁরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন ৷ জীবন অতিবাহের জন্য জীবিকা হারানো থেকে অসুরক্ষিত কাজের পরিবেশ, অনাহার এবং শোষণের মতো ঘটনা সেই থেকে আজও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রোজকার সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

সেই সব মানুষগুলো, বিশেষ করে আশা কর্মী, সাফাই কর্মচারী, দীন মজুরি করা শ্রমিক, ট্রান্সজেন্ডার, যৌনকর্মী ৷ এরা সবাই একটি ওয়েব সেমিনারে তাঁদের সেই সময় থেকে চলে আসা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন ৷ যার আয়োজন করেছিল বহুজন ইকনমিকস ৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের অর্থনীতির পড়ুয়ারা মিলে এটি তৈরি করেছেন ৷ যা গতবছর তৈরি করা হয়েছিল অর্থনীতিতে জাতি-ভেদ দূর করার উদ্দেশ্য ৷ সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক একসঙ্গে অংশ নেওয়া এবং প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দেওয়াও উদ্দেশ্য এই বহুজন ইকনমিকস’র ৷ ওই ওয়েব সেমিনারে বহুজন ইকনমিকস’র একটি দল জানিয়েছে, তাঁদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল আরও বেশি করে দলিত এবং আদিবাসী মহিলাদের অর্থনীতিবিদ তৈরি করা ৷

সেখানেই মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি নীতীন লাহোর সেখানকার সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের স্বচ্ছ-ভারত অভিযানের আওতায় ইন্দোর অন্যতম একটি স্বচ্ছ শহর ৷ কিন্তু, সেখানকার সাফাই কর্মীদের উপর দিনের পর দিন শোষণ চলে আসছে ৷ তাঁর কথায়, লাগাতার 25-30 বছর ধরে সাফাইয়ের কাজ করেও, বহু সাফাই কর্মী সেখানে নৈমিত্তিক হিসেবে রয়ে গিয়েছেন ৷ ইন্দোরের মতো জায়গায় সেখানকার সাফাই কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ৷ বিশেষ করে করোনা অতিমারির সময়েও জেলা প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নীতীন লাহোর ৷ আর মাসের শেষে এই সাফাই কর্মীরা 11 হাজার টাকা বেতন পান ৷

তবে, শুধু সাফাই কর্মীরা নন, গত বছরের লকডাউন এবং বর্তমানে রাজ্য ভিত্তিক লকডাউনে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন ৷ নীতীন লাহোর জানিয়েছেন, প্রথম লকডাউনের আগে পর্যন্ত সাফাই কর্মীদের সন্তানরা স্কুলে পড়াশোনা করতে যেত ৷ আজ পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তাঁদের সন্তানদের ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিস্কার করতে দেখা যাচ্ছে ৷ যা খুবই হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ এ তো গেল সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা ৷ হরিয়ানার আশা কর্মীদের অবস্থাও প্রায় একই রকম ৷

আরও পড়ুন : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ সরকারি আবাসনে থাকছেন করোনা যোদ্ধারা

হরিয়ানার আশা কর্মীদের সংগঠনের প্রতিনিধি সুরেখাদেবী তাঁদের দুর্দশার ছবি তুলে ধরেছেন ওই ওয়েব সেমিনারে ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, হরিয়ানার রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এবং মিথ্যা ভাষণের ফল আশা কর্মীদের ভূগতে হচ্ছে ৷ তিনি জানিয়েছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা প্রতিনিয়ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করে চলেছেন ৷ আর তাঁর প্রভাব সরাসরি পড়ছে যাঁরা মাঠে নেমে কাজ করছেন তাঁদের উপর ৷ আর এই পরিস্থিতি চলে আসছে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকে ৷ এর ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের করোনা অতিমারির ভয়াবহতা নিয়ে বোঝাতে সমস্যা হচ্ছে তাঁদের ৷ পাশাপাশি এর থেকে বাঁচতে কী করণীয় এবং ভ্যাকসিন নেওয়া কতটা জরুরি তা বোঝাতে সমস্যায় পড়ছেন আশা কর্মীরা ৷ আর এতো সমস্যার মধ্যে কাজ করেও মাসের শেষে আশা কর্মীদের উপার্জন মাত্র 4 হাজার টাকা ৷

আরও পড়ুন : নলকূপে হাত ধুতে গিয়ে প্রহৃত করোনা-যোদ্ধা

এমনকি সাধারণ মানুষকে করোনা নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি, অনেক সময় করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও কথা বলতে হচ্ছে ৷ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে সর্বত্র ঘুরতে হচ্ছে ৷ কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আশা কর্মীদের পিপিই কিট দেওয়া হচ্ছে না ৷ এমনকি কোনও সরকারি প্রকল্পের আওতায় তাঁরা আজ আসেননি ৷ এমনই অভিযোগ করেছেন আশা কর্মী সংগঠনের ওই প্রতিনিধি ৷ তবে, এত কিছুর পরেও আশা কর্মীদের বহুক্ষেত্রে বেতন কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় ৷ যদি না রোজ তাঁদের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সঠিকভাবে করা হয় ৷

মুম্বই, 18 জুন : গত বছর 24 মার্চ করোনা সংক্রমণ রুখতে নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশ জোড়া লকডাউন ঘোষণা করেছিল ৷ লকডাউনের আকস্মিক সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের অধিকাংশ মানুষের উপর পড়েছিল ৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন যাঁরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন ৷ জীবন অতিবাহের জন্য জীবিকা হারানো থেকে অসুরক্ষিত কাজের পরিবেশ, অনাহার এবং শোষণের মতো ঘটনা সেই থেকে আজও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রোজকার সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

সেই সব মানুষগুলো, বিশেষ করে আশা কর্মী, সাফাই কর্মচারী, দীন মজুরি করা শ্রমিক, ট্রান্সজেন্ডার, যৌনকর্মী ৷ এরা সবাই একটি ওয়েব সেমিনারে তাঁদের সেই সময় থেকে চলে আসা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন ৷ যার আয়োজন করেছিল বহুজন ইকনমিকস ৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের অর্থনীতির পড়ুয়ারা মিলে এটি তৈরি করেছেন ৷ যা গতবছর তৈরি করা হয়েছিল অর্থনীতিতে জাতি-ভেদ দূর করার উদ্দেশ্য ৷ সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক একসঙ্গে অংশ নেওয়া এবং প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দেওয়াও উদ্দেশ্য এই বহুজন ইকনমিকস’র ৷ ওই ওয়েব সেমিনারে বহুজন ইকনমিকস’র একটি দল জানিয়েছে, তাঁদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল আরও বেশি করে দলিত এবং আদিবাসী মহিলাদের অর্থনীতিবিদ তৈরি করা ৷

সেখানেই মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি নীতীন লাহোর সেখানকার সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের স্বচ্ছ-ভারত অভিযানের আওতায় ইন্দোর অন্যতম একটি স্বচ্ছ শহর ৷ কিন্তু, সেখানকার সাফাই কর্মীদের উপর দিনের পর দিন শোষণ চলে আসছে ৷ তাঁর কথায়, লাগাতার 25-30 বছর ধরে সাফাইয়ের কাজ করেও, বহু সাফাই কর্মী সেখানে নৈমিত্তিক হিসেবে রয়ে গিয়েছেন ৷ ইন্দোরের মতো জায়গায় সেখানকার সাফাই কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ৷ বিশেষ করে করোনা অতিমারির সময়েও জেলা প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নীতীন লাহোর ৷ আর মাসের শেষে এই সাফাই কর্মীরা 11 হাজার টাকা বেতন পান ৷

তবে, শুধু সাফাই কর্মীরা নন, গত বছরের লকডাউন এবং বর্তমানে রাজ্য ভিত্তিক লকডাউনে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন ৷ নীতীন লাহোর জানিয়েছেন, প্রথম লকডাউনের আগে পর্যন্ত সাফাই কর্মীদের সন্তানরা স্কুলে পড়াশোনা করতে যেত ৷ আজ পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তাঁদের সন্তানদের ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিস্কার করতে দেখা যাচ্ছে ৷ যা খুবই হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ এ তো গেল সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা ৷ হরিয়ানার আশা কর্মীদের অবস্থাও প্রায় একই রকম ৷

আরও পড়ুন : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ সরকারি আবাসনে থাকছেন করোনা যোদ্ধারা

হরিয়ানার আশা কর্মীদের সংগঠনের প্রতিনিধি সুরেখাদেবী তাঁদের দুর্দশার ছবি তুলে ধরেছেন ওই ওয়েব সেমিনারে ৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, হরিয়ানার রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এবং মিথ্যা ভাষণের ফল আশা কর্মীদের ভূগতে হচ্ছে ৷ তিনি জানিয়েছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা প্রতিনিয়ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করে চলেছেন ৷ আর তাঁর প্রভাব সরাসরি পড়ছে যাঁরা মাঠে নেমে কাজ করছেন তাঁদের উপর ৷ আর এই পরিস্থিতি চলে আসছে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকে ৷ এর ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের করোনা অতিমারির ভয়াবহতা নিয়ে বোঝাতে সমস্যা হচ্ছে তাঁদের ৷ পাশাপাশি এর থেকে বাঁচতে কী করণীয় এবং ভ্যাকসিন নেওয়া কতটা জরুরি তা বোঝাতে সমস্যায় পড়ছেন আশা কর্মীরা ৷ আর এতো সমস্যার মধ্যে কাজ করেও মাসের শেষে আশা কর্মীদের উপার্জন মাত্র 4 হাজার টাকা ৷

আরও পড়ুন : নলকূপে হাত ধুতে গিয়ে প্রহৃত করোনা-যোদ্ধা

এমনকি সাধারণ মানুষকে করোনা নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি, অনেক সময় করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও কথা বলতে হচ্ছে ৷ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে সর্বত্র ঘুরতে হচ্ছে ৷ কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আশা কর্মীদের পিপিই কিট দেওয়া হচ্ছে না ৷ এমনকি কোনও সরকারি প্রকল্পের আওতায় তাঁরা আজ আসেননি ৷ এমনই অভিযোগ করেছেন আশা কর্মী সংগঠনের ওই প্রতিনিধি ৷ তবে, এত কিছুর পরেও আশা কর্মীদের বহুক্ষেত্রে বেতন কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় ৷ যদি না রোজ তাঁদের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সঠিকভাবে করা হয় ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.