নয়াদিল্লি, 17 অক্টোবর : করোনা কালে রোজগার গিয়েছে ৷ জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ৷ সেই পরিস্থিতিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেল কেন্দ্রীয় সরকার ৷ দু’মাসেরও কম সময়ে সেখানে 4 কোটি 90 লক্ষ মানুষ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ৷ যাঁরা নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কৃষি এবং নির্মাণ ক্ষেত্র থেকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য নাম তুলিয়েছেন ৷ পাশাপাশি, গৃহ সহায়িকা, বস্ত্রশিল্প, গাড়িশিল্প, খুচরো ব্যবসা, পর্যটন, পরিবহণ, শিক্ষাক্ষেত্র থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ৷
রবিবার কেন্দ্রীয় শ্রম এবং রোজগার মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব এই তথ্য সামনে এনেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, যাঁরা ই-শ্রম পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছেন, সহজেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাঁরা ৷ যেমন, সরকারি পোর্টালে কাজের অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরে নিজেদের রেজিউমে তৈরি করতে পারবেন তাঁরা, যার মাধ্যমে দক্ষতা এবং যোগ্যতা বিচার করে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করচে পারবে বিভিন্ন সংস্থা ৷ নাম নথিভুক্তকরণের পর প্রত্যেক ব্যক্তি ই-শ্রম কার্ড পাবেন, সরকারি খাতায় নথিভুক্ত কর্মী হিসেবে দেশের সর্বত্র যা ব্যবহার করতে পারবেন তাঁরা ৷
পরিযায়ী শ্রমিক-সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রে অস্থায়ী কর্মীরা নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন ৷ ই-শ্রম পোর্টালে নাম নথিভুক্ত থাকলে, সরকারি দেখবে, তাঁরা সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কি না ৷ এমনকি কর্মরত অবস্থায় যদি কারও মৃত্যু হয়, তাঁর পরিবারকে 2 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার ৷ দুর্ঘটনায় কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হলে, সরকারের তরফে 1 লক্ষ টাকা দেওয়া হবে ৷ এ ছাড়াও, সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের আওতায় চলে আসবেন তাঁরা ৷
আরও পড়ুন: Adhir Ranjan Chowdhury : বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান লজ্জার, কেন্দ্রকে তোপ অধীরের
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যে 4 কোটি 90 লক্ষ মানুষ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, এঁদের মধ্যে 50.02 শতাংশ মহিলা, 49.98 শতাংশ পুরুষ ৷ অর্থাৎ আবেদনকারী নারী-পুরুষের হার প্রায় সমান ৷ কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের এই সমান ব্যাপ্তি ইতিবাচক ইঙ্গিতই বহন করছে বলে মনে করছে কেন্দ্র ৷ এখনও পর্যন্ত ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশ থেকেই সব থেকে বেশি সংখ্যক বেশি মানুষ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে ৷ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে 65.68 শতাংশের বয়স 16 থেকে 40 বছরের মধ্যে ৷ 40-এর ঊর্ধ্বে বয়স 34.32 শতাংশ মানুষের ৷ মোট নথিভুক্ত হওয়া নামের মধ্যে, অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) 43 শতাংশ মানুষ রয়েছেন ৷ সাধারণ শ্রেণি থেকে 27 শতাংশ এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় থেকে 7 শতাংশ রয়েছে ৷
মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের কমন সার্ভিসেস সেন্টার (সিএসসি)-এর মাধ্যমেই অধিকাংশ নাম নথিভুক্ত হয়েছে ৷ তবে কেরালা, গোয়া, মেঘালয়, মণিপুরের মতো রাজ্য থেকে বহু মানুষ সরকারি পোর্টালে গিয়ে নিজে নিজেই নাম নথিভুক্ত করেছেন ৷ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি, আন্দামান ও নিকোবর এবং লাদাখ থেকেও নিজে নিজে নাম নথিভুক্ত করেছেন বহু মানুষ ৷
করোনা কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের দূরাবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ৷ তার পরেই দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত 38 কোটি শ্রমিকের ডেটাবেস তৈরি করতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র ৷ তাতে দিন মজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, গৃহ সহায়ক-সহায়িকা, ফুটপাতে দোকান দেওয়া মানুষ-সব বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয় ৷ ডিজিটাল মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে টোল ফ্রি নম্বর 14434-এ যোগাযোগ করে সমাধান পাওয়া যাবে ৷ তার পর আধার কার্ড নম্বর ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টসের তথ্য দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে ৷ জন্মের তারিখ, ফোন নম্বর, শহর, গ্রাম, কোন সামাজিক শ্রেণির মধ্যে পড়েন, এ সবেরও উল্লেখ করতে হবে ৷
আরও পড়ুন: Navjot Singh Sidhu: সোনিয়া-সাক্ষাতে 13 দফা কর্মসূচি কার্যকর করার দাবিতে চিঠি সিধুর