শ্রীনগর, 11 এপ্রিল : বীর-জারা সিনেমাটি কল্পিত চরিত্রের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছিল । কিন্তু, এই সিনেমার গল্প এখনও প্রতিটি মানুষের মনের কোণে জমা হয়ে আছে । সিনেমায় যা ঘটেছিল, কাশ্মীরের বাস্তব জীবনেও সে কাহিনির উদাহরণ পাওয়া গেল ।
শ্রীনগরের বাসিন্দা হামজা ফারুক এবং লাহোরের বাসিন্দা মাহনুর 2014 সালে বিয়ে করেছিলেন । বিয়ের পর মাহনুরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আট বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল । সে সময় তিনি স্বামীর সঙ্গে শ্রীনগরে থাকতেন নোরি ভিসা নিয়ে এবং প্রতি বছর তিন মাসের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পাকিস্তানে যেতেন। নোরি ভিসা হল সাময়িক ভিসা, যা পাকিস্তানের বাইরে বিবাহিত মহিলাদের দেওয়া হয় ।
স্বাভাবিক নিয়ম মেনে গত বছর মার্চ মাসে মাহনুর পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ভিসার জন্য ৷ কিন্তু, তার পর থেকে তাঁকে ভারতে ফিরতে দেওয়া হয়নি । মহামারি এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েনের জন্য ।
হামজার ছোটো বোন সাদিয়া ফারুক ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমার বউদি এবং দাদা একবছর পর গত মার্চে দুবাইতে দেখা করেন । আমার বউদিকে প্রথমে তুরষ্কে যেতে হয়েছিল ৷ কারণ, মহামারির কারণে পাকিস্তান থেকে আসা কারও দুবাইতে প্রবেশাধিকার ছিল না । তবে, যাই হোক, আজ আমার দাদা এবং বউদি দু’জনে একসঙ্গে এবং তাঁরা খুব খুশি ।"
তিনি আরও বলেন, "আমার পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন । কেউ রয়েছেন দুবাইয়ে । কেউ পাকিস্তানে । কেউ এখানে । কেউ ওখানে । আমরা ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু, আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে । বাড়ি থেকে বহুদিন দূরে থাকার জন্য আমার বউদি গভীর হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন । তাই আমরা ঠিক করি, বউদির সঙ্গে দেখা করানোর জন্য দাদাকে দুবাই নিয়ে যাব ।" হামজা এবং মাহনুরকে তাঁদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা ভালবেসে বীর-জারা বলে ডাকেন ।
আরও পড়ুন, ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ তৈরির পথে চিন, চিন্তায় ভারত
দুবাই থেকে ফোনে হামজা ফারুক ইটিভি ভারতকে বলেন, "একবছর পর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তটা আমি কথায় বর্ণনা করতে পারব না । আমি আশা করেছিলাম, দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণজনিত নিষেধাজ্ঞা গত এপ্রিল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে । কিন্তু, মহামারির কারণে আমাদের সব প্রত্যাশা ভঙ্গ হয়ে যায় ।"
তিনি আরও বলেন, ‘‘নোরি ভিসা নিয়ে সে দেশের বাসিন্দারা অন্যান্য রাজ্যে সহজেই আসা যাওয়া করতে পারছেন । তাঁদের অনুমতি পেতে কোনওরকম সমস্যা হচ্ছে না । কিন্তু, জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সে অনুমতি দেওয়া হয়নি । আমার স্ত্রী তাঁর বাড়ি খুব মিস করছেন ।’’
সাদিয়া বলেন, "আমার বউদি হলেন আমার মাসির বোন । আমার মাসির বিয়ে হয়েছে পাকিস্তানে । আমরা 2014 সালে পাকিস্তানে গিয়েছিলাম । তখন হামজার এবং মাহনুরের পরিবারের মধ্যে সাক্ষাৎ হয় । এবং বিয়ে হয় । উভয় পরিবারের সম্মতিতেই এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় । "
তিনি আরও বলেন, "এদেশে আসার পর আমার বউদি কোনও চাকরি করতে পারেননি । কারণ তাঁর পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিল । সে কারণে তিনি এখানে পাক ফুড এক্সপ্রেস নামে একটি হোম ডেলিভারি সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নেন । ব্যবসাটি বেশ ভালই চলছিল । কিন্তু, মহামারির কারণে সব কিছু নষ্ট হয়ে যায় । রমজান আসছে । আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিদিনই ফোন পাচ্ছি । তাঁরা জিজ্ঞাসা করছেন, কবে থেকে ব্যবসা শুরু করব । কিন্তু, আমাদের কাছে কোনও উত্তর নেই । আমরা উভয় সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধান করার জন্য । "
যদিও, এই মুহূর্তে পাকিস্তান ফুড এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে গিয়েছে । হামজার মা প্রতিনিয়ত দরজায় চোখ রেখে বসে রয়েছেন । তাঁর বোন আশা ছাড়েননি । বাবা বিশ্বাস করেন, শীঘ্রই তাঁর সন্তানরা দেশে ফিরে আসবেন ।