নয়াদিল্লি, 11 অক্টোবর: 89 বছর বয়সি স্বামী ও তাঁর 82 বছরের স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ তাঁরা বহু বছর ধরে আলাদা বসবাস করছেন এবং তাঁদের একত্রিত করার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানানো হয় । তা সত্ত্বেও তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদে সম্মতি দেয়নি শীর্ষ আদালত ৷ বিচারপতিদের মতে, বিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান, এটি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ এটি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে একটা মানসিক বন্ধন ৷
পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে স্বামীর দায়ের করা পিটিশনের মঙ্গলবার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বেলা এম ত্রিবেদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ৷ হিন্দু বিবাহ আইন, 1955 এর 13নং ধারার অধীনে বিবাহ ভেঙে দেওয়ার জন্য স্বামীর দায়ের করা আবেদনের অনুমতি দিয়েছিলেন চণ্ডীগড় জেলা আদালতের বিচারক ৷ তাঁর রায়কে বাতিল করে দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ৷ সেই রায়ই বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ ৷ এরপর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী ৷
বেঞ্চ একটি প্রশ্ন এ দিন বিবেচনা করে, "বিবাহের অনিবার্য ভাঙনের পরিস্থিতির ফলে কি ভারতীয় সংবিধানের 142 অনুচ্ছেদের অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিবাহ ভেঙে দেওয়া উচিত, যখন হিন্দু বিবাহ আইন 1955-এর অধীনে এটি বিবাহ বিচ্ছেদের ভিত্তি নয় ?"
রায় দেওয়ার সময় বেঞ্চ বলে, "বিবাহের প্রতিষ্ঠানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ৷ সমাজে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এই সত্যটি সম্পর্কে অবহেলা করা উচিত নয় ৷"
বিচারপতি ত্রিবেদী রায় ঘোষণার সময় বলেন, "আইনের আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়েরের প্রবণতা ক্রমবর্ধমান হওয়া সত্ত্বেও, ভারতীয় সমাজে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ প্রতিষ্ঠানটি এখনও একটি ধার্মিক, আত্মিক এবং অমূল্য মানসিক বন্ধন হিসাবে বিবেচনা করা হয় ।"
আরও পড়ুন: 26 সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা বিবাহিতাকে গর্ভপাতে অনুমতি ? দ্বিধাবিভক্ত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ
এটি শুধুমাত্র আইনের অক্ষর দ্বারাই নয়, সামাজিক রীতিনীতি দ্বারাও পরিচালিত হয় বলে মত বিচারপতির ৷ সমাজে বৈবাহিক সম্পর্কের থেকে আরও অনেক সম্পর্ক উদ্ভূত হয় এবং বিকাশ লাভ করে বলে জানান বিচারপতি ত্রিবেদী ।
বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, স্ত্রী এখনও তাঁর স্বামীর যত্ন নিতে ইচ্ছুক ও প্রস্তুত এবং জীবনের এই পর্যায়ে তাঁকে একা ছেড়ে যেতে চান না । বেঞ্চের কথায়, "তিনি তাঁর অনুভূতিও প্রকাশ করেছেন যে তিনি একজন 'ডিভোর্সি' মহিলা হওয়ার কলঙ্ক নিয়ে মরতে চান না । সমসাময়িক সমাজে এটি কলঙ্ক নাও হতে পারে, তবে এখানে আমরা উত্তরদাতার নিজস্ব অনুভূতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৷"
বিচারপতি ত্রিবেদী বলেন, স্ত্রীর অনুভূতিকে বিবেচনা করে এবং সম্মান করে, আদালতের অভিমত যে, "142 ধারার অধীনে আপিলকারীর (স্বামী) পক্ষে রায় দিলে তা 'সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার' করা হবে না, বরং উত্তরদাতার (স্ত্রী) প্রতি তা অবিচার হবে ৷"