ETV Bharat / bharat

লাদাখ থেকে সেনা সরানো ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে 1959 সালের চিনা দাবি

author img

By

Published : Feb 15, 2021, 7:14 PM IST

1959 সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের দাবি সেই জওহরলাল নেহরুর আমল থেকেই ভারত কখনও মানেনি ৷ কিন্তু এখনও সেই দাবিতে অনড় চিন ৷ 2020 সালেও তারা একই দাবি তোলে ৷ ভারতও ফের সেই দাবি খারিজ করে দেয় ৷

লাদাখ থেকে সেনা সরানো ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে 1959 সালের চিনা দাবি
লাদাখ থেকে সেনা সরানো ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে 1959 সালের চিনা দাবি

হায়দরাবাদ, 15 ফেব্রুয়ারি : দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলার পর অবশেষে ভারত ও চিনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর স্থিতাবস্থা ফিরতে চলেছে ৷ ভারত সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে লাদাখ থেকে সেনা সরানোয় দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে ৷ এই বিষয়টি সামনে আসার পর অনেকেই এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ৷ ভারত চিনের কাছে কোনও এলাকা হারিয়েছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ৷ এই বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএস পনাগ জানান, 1959 সালে চিন যে দাবি করেছিল, সেই দাবি মেনেই এবারও সেনা সরানোর কাজ শুরু হয়েছে ৷ কারণ, ওই পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা ভারতীয় সেনার কাছে নেই ৷

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে 1959 সালে চিন কি দাবি করেছিল ?

1959 সালের 7 নভেম্বর চিনের প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার চিঠি লিখে এই নিয়ে দাবি করেন ৷ 1914 সালের সিমলা কনভেনশন অনুযায়ী চিন 1959 সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দাবি করা হয় ৷ 1914 সালের 3 জুলাই ওই কনভেনশনে ম্যাকমোহন লাইন অনুযায়ী ভারত ও তিব্বতের বিভাজন ঘটানো হয় ৷ 1959 সাল পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেনি ৷

আরও পড়ুন : ড্রাগনের মোকাবিলায় প্রয়োজন শানিত পরিকল্পনা

এই বিষয়ে প্রথম আপত্তি তোলেন পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ঝাও এনলাই ৷ তিনি আপত্তি জানিয়ে চিঠি লেখেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে ৷ তিনি চিঠিতে নেহরুকে লেখেন যে দুই দেশের উচিত ‘‘পূর্বে ম্যাকমোহন লাইন থেকে এবং পশ্চিমে যেখানে দুই দেশের সেনার দখল রয়েছে’’, সেখান থেকে 20 কিলোমিটার পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করা হোক ৷

1959 সালের দাবিতে চিন কি উল্লেখ করেছিল ?

1962 সালের 21 নভেম্বর চিনের তরফে একতরফা সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা করা হয়৷ ভারত-চিন যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয় ওই ঘোষণা থেকে ৷ সেখানেই প্রথম 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সংক্রান্ত দাবির কথা উল্লেখ করা হয় ৷ পেকিং রেডিও ঘোষণা করে, ‘‘1959 সালের 7 নভেম্বর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা রয়েছে, সেখান থেকে 20 কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত চিন সেনা সরানো শুরু করবে 1962 সালের 1 ডিসেম্বর থেকে ৷’’

চিনের কাছে যুদ্ধে হেরে গেলেও নেহরু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের 1959 সালের দাবি মানতে নারাজ ছিলেন ৷1963 সালে তিনি চিনকে জানান যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বলে তারা (চিন) যেটা বলছে, সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কোনও মানে নেই ৷

আরও পড়ুন : চিনের কাছে ভারত কোনও এলাকা হারায়নি, রাহুলের প্রশ্নের জবাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের

রাজীব গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় 1988 সালে বেজিং সফরে গিয়েছিলেন ৷ সেই সময় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বিষয়ে একাধিক চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে ৷

1993 সালের চুক্তির আগে চিন তাদের 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংক্রান্ত দাবিতে অনড় ছিল ৷ কিন্তু পরে আলোচনার মাধ্যমে এই নিয়ে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় ৷ শিবশঙ্কর মেননের লেখা একটি বইতেই এই তথ্যের বর্ণনা করা আছে ৷

1993 সালের চুক্তিতে প্রথমবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা শব্দটি ব্যবহার করা হয় ৷ ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও চিন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়টি ঠিক হয় ৷ কিন্তু ভারত ওই চুক্তিকে ‘1959 সালে চিনের দাবি’র বিষয়টি নথিভুক্ত করাতে চেয়েছিল ৷ 2003 সালে এই প্রক্রিয়ার গতি কমে যায় ৷ কারণ, চিন এই বিষয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছিল না ৷

2017 সালে প্যাংগং সো হ্রদের পাড়ে ভারত ও চিনের মধ্যে গোলমাল হওয়ার পর সেই 1959 সালের দাবি নিয়ে ফের সরব হয় চিন ৷ 2017 সালের 21 অগস্ট এই নিয়ে চিন একটি বিবৃতি জারি করে ৷ তাতে বলা হয়, ‘‘চিন ভারতের কাছে আবেদন করছে যে বিভিন্ন সম্মেলন ও চুক্তি মেনে চলুন ৷ 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলুন ৷ দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সীমান্তে সেনার কার্যকলাপ নিয়্ন্ত্রণ করতে বলা হচ্ছে ৷’’

আরও পড়ুন : সঠিক সময় রাজ্যের মর্যাদা পাবে জম্মু-কাশ্মীর : অমিত শাহ

2020 সালে যখন লাদাখে দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই সময় ওই বছরের 30 সেপ্টেম্বর চিনা বিদেশমন্ত্রক জানান যে 1959 সালের 7 নভেম্বরের চুক্তি অনুযায়ী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাই চিন ও ভারতের সীমান্ত ৷ ভারতের তরফে চিনের ওই দাবি খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ যা তাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঝাও এনলাই দাবি করেছিলেন ৷ চিনের ওই দাবি নেহরুর সময় থেকেই ভারত মানেনি ৷

হায়দরাবাদ, 15 ফেব্রুয়ারি : দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলার পর অবশেষে ভারত ও চিনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর স্থিতাবস্থা ফিরতে চলেছে ৷ ভারত সরকারের তরফে জানানো হয়েছে যে লাদাখ থেকে সেনা সরানোয় দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে ৷ এই বিষয়টি সামনে আসার পর অনেকেই এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ৷ ভারত চিনের কাছে কোনও এলাকা হারিয়েছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ৷ এই বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএস পনাগ জানান, 1959 সালে চিন যে দাবি করেছিল, সেই দাবি মেনেই এবারও সেনা সরানোর কাজ শুরু হয়েছে ৷ কারণ, ওই পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা ভারতীয় সেনার কাছে নেই ৷

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে 1959 সালে চিন কি দাবি করেছিল ?

1959 সালের 7 নভেম্বর চিনের প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার চিঠি লিখে এই নিয়ে দাবি করেন ৷ 1914 সালের সিমলা কনভেনশন অনুযায়ী চিন 1959 সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দাবি করা হয় ৷ 1914 সালের 3 জুলাই ওই কনভেনশনে ম্যাকমোহন লাইন অনুযায়ী ভারত ও তিব্বতের বিভাজন ঘটানো হয় ৷ 1959 সাল পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেনি ৷

আরও পড়ুন : ড্রাগনের মোকাবিলায় প্রয়োজন শানিত পরিকল্পনা

এই বিষয়ে প্রথম আপত্তি তোলেন পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ঝাও এনলাই ৷ তিনি আপত্তি জানিয়ে চিঠি লেখেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে ৷ তিনি চিঠিতে নেহরুকে লেখেন যে দুই দেশের উচিত ‘‘পূর্বে ম্যাকমোহন লাইন থেকে এবং পশ্চিমে যেখানে দুই দেশের সেনার দখল রয়েছে’’, সেখান থেকে 20 কিলোমিটার পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করা হোক ৷

1959 সালের দাবিতে চিন কি উল্লেখ করেছিল ?

1962 সালের 21 নভেম্বর চিনের তরফে একতরফা সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা করা হয়৷ ভারত-চিন যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয় ওই ঘোষণা থেকে ৷ সেখানেই প্রথম 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার সংক্রান্ত দাবির কথা উল্লেখ করা হয় ৷ পেকিং রেডিও ঘোষণা করে, ‘‘1959 সালের 7 নভেম্বর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা রয়েছে, সেখান থেকে 20 কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত চিন সেনা সরানো শুরু করবে 1962 সালের 1 ডিসেম্বর থেকে ৷’’

চিনের কাছে যুদ্ধে হেরে গেলেও নেহরু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের 1959 সালের দাবি মানতে নারাজ ছিলেন ৷1963 সালে তিনি চিনকে জানান যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বলে তারা (চিন) যেটা বলছে, সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কোনও মানে নেই ৷

আরও পড়ুন : চিনের কাছে ভারত কোনও এলাকা হারায়নি, রাহুলের প্রশ্নের জবাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের

রাজীব গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় 1988 সালে বেজিং সফরে গিয়েছিলেন ৷ সেই সময় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বিষয়ে একাধিক চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে ৷

1993 সালের চুক্তির আগে চিন তাদের 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংক্রান্ত দাবিতে অনড় ছিল ৷ কিন্তু পরে আলোচনার মাধ্যমে এই নিয়ে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় ৷ শিবশঙ্কর মেননের লেখা একটি বইতেই এই তথ্যের বর্ণনা করা আছে ৷

1993 সালের চুক্তিতে প্রথমবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা শব্দটি ব্যবহার করা হয় ৷ ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও চিন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়টি ঠিক হয় ৷ কিন্তু ভারত ওই চুক্তিকে ‘1959 সালে চিনের দাবি’র বিষয়টি নথিভুক্ত করাতে চেয়েছিল ৷ 2003 সালে এই প্রক্রিয়ার গতি কমে যায় ৷ কারণ, চিন এই বিষয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছিল না ৷

2017 সালে প্যাংগং সো হ্রদের পাড়ে ভারত ও চিনের মধ্যে গোলমাল হওয়ার পর সেই 1959 সালের দাবি নিয়ে ফের সরব হয় চিন ৷ 2017 সালের 21 অগস্ট এই নিয়ে চিন একটি বিবৃতি জারি করে ৷ তাতে বলা হয়, ‘‘চিন ভারতের কাছে আবেদন করছে যে বিভিন্ন সম্মেলন ও চুক্তি মেনে চলুন ৷ 1959 সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলুন ৷ দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সীমান্তে সেনার কার্যকলাপ নিয়্ন্ত্রণ করতে বলা হচ্ছে ৷’’

আরও পড়ুন : সঠিক সময় রাজ্যের মর্যাদা পাবে জম্মু-কাশ্মীর : অমিত শাহ

2020 সালে যখন লাদাখে দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই সময় ওই বছরের 30 সেপ্টেম্বর চিনা বিদেশমন্ত্রক জানান যে 1959 সালের 7 নভেম্বরের চুক্তি অনুযায়ী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাই চিন ও ভারতের সীমান্ত ৷ ভারতের তরফে চিনের ওই দাবি খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ যা তাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঝাও এনলাই দাবি করেছিলেন ৷ চিনের ওই দাবি নেহরুর সময় থেকেই ভারত মানেনি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.